ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে উৎসব

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১১ মে ২০২১

করোনাকালে উৎসব

এবারও ঈদ-উল-ফিতর তেমন জাঁকজমক ও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হতে পারছে না করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে। গত বছরের ঈদ-উল-ফিতরও কেটেছে এক রকম উৎসবহীন পরিবেশে। তখন দেশজুড়ে চলছিল লকডাউন। প্রায় গৃহবন্দী জীবনযাপন। বাস, লঞ্চ-স্টিমার, ট্রেন এমনকি বিমান চলাচলও প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে মানুষ নাড়ীর টানে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব উদযাপন করতে পারেনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তবে এর মধ্যেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা দলে দলে হেঁটে অথবা নানা কষ্টসাধ্য কৌশলে ছুটে গেছে গ্রামের বাড়ি। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ফলে স্বভাবতই বেড়েছে সংক্রমণের ঝুঁকি। সে তুলনায় করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র সীমিত থাকায় রোগ নির্ণয় হয়েছে কম। গত বছর ঈদে বিধিনিষেধ থাকায় মানুষ জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের উন্মুক্ত ঈদগাহ প্রাঙ্গণে এক কাতারে শামিল হয়ে নামাজ পড়তে পারেনি। মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা বিধিনিষেধ থাকায় খুব কম সংখ্যক মানুষ যেতে পেরেছেন মসজিদে। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। ঈদগাহ কিংবা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে একসঙ্গে সার বেঁধে নামাজ আদায় করা যাবে না। মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধিসহ সামাজিক দূরত্ব রক্ষা। কোলাকুলি, হাত মেলানো নিষিদ্ধ। মুখে মাস্ক থাকতে হবে অবশ্যই। এতে কি সামাজিকতা, সভ্যতা-ভব্যতা, সৌহার্দ্য-সম্প্রতি আদৌ বজায় রাখা সম্ভব? অথচ ঈদ উৎসব আসে মানুষে মানুষে ধনী-গরিব পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-মঙ্গলাকাক্সক্ষার বার্তা নিয়ে। এসব আবার কবে ফিরে আসবে মানুষের মধ্যে কে জানে! ঈদ-উল-ফিতরে সারা দেশে অর্থনৈতিক তৎপরতা ও কার্যক্রম বেড়ে যায় বহুগুণ। এর প্রধান আকর্ষণ পোশাক পরিচ্ছদসহ আনুষঙ্গিক কেনাকাটা। ইতোমধ্যে খবর এসেছে, দোকানপাট, শপিংমল খুলেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। যদিও সর্বত্র এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়নি। মার্কেট বন্ধ করে দেয়ার খবরও আছে। মানুষের আয়-উপার্জন কমে যাওয়ায় বেচাবিক্রিও খম অন্যান্য বছরের তুলনায়। একটু যারা সচ্ছল ও সম্পন্ন তারা কেনাকাটা করছেন অনলাইনে। প্রধানমন্ত্রীর নগদ ঈদ উপহার পেয়েছেন সাড়ে ৩৬ লাখ পরিবার। ঘরমুখো মধ্যবিত্ত মানুষের ভিড়ও কম থাকার ফলে এবার টিকিটের হাহাকার নেই বললেই চলে। রাজধানী ও আশপাশের এবং বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামেরও অধিকাংশ শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ প্রধানত বহিরাগত। ফলে ঈদের ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পরিমরি করে যে যেভাবে পারে ছুটে গেছে গ্রামের বাড়িতে। এ সময়ে কার্যত দূরপাল্লার যানবাহন, ট্রেন ও নৌচলাচল বন্ধ থাকলেও মানুষ একটা না একটা উপায় বের করে নিয়েছে। সুতরাং লাখ লাখ শ্রমজীবীর কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা থাকবেই। সর্বস্তরের মানুষের এই দুর্ভোগ সত্যি বলতে কি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। যা হোক, আমরা আশা করব, করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় এবং সাধারণ ছুটি যদি আর বাড়ানো না হয়, তাহলে দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ-স্টিমার-ট্রেনসহ সব রকম যানবাহন চলবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের পরে। সর্বস্তরের মানুষ যাতে দুর্ঘটনাসহ যে কোন ঝুঁকি ব্যতিরেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার, রেল, নৌ ও যানবাহন কর্তৃপক্ষসহ বেসরকারী পরিবহন মালিকদেরও সবিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তখন যেন কোনক্রমেই লেজেগোবরে পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।
×