ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্ক না পরে বেরোলে ১ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার নির্দেশ

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৬ মে ২০২১

মাস্ক না পরে বেরোলে ১ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঈদ সামনে রেখে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উর্ধগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ঈদের সময়ে জনসমাগম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ উর্ধগতিতে রূপ নিয়ে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করা বন্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সারাদেশের সকল মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ ডিআইজি, সকল জেলার পুলিশ সুপারদের এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ। যদি কেউ সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে সরাসরি ভার্চুয়াল সভা করে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। আইজিপির নির্দেশনার মধ্যে রয়েছেÑ বাইরে চলাচলের সময় সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেউ মাস্ক না পরলে তাকে খোলা জায়গায় এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশনার বাইরে কোনভাবেই গণপরিবহন চলতে দেয়া যাবে না। সরকারের নির্দেশ অমান্য করে গণপরিবহন চালালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা করা, হেফাজতের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া, শপিংমলের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা, মাস্ক ছাড়া দোকানি বা ক্রেতা কাউকে দোকানে প্রবেশ করতে না দেয়াসহ সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উর্ধগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরী কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন নামে পরিচিতি পায়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘লকডাউন’ তথা মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের মধ্যেই সীমাবন্ধ হওয়া লকডাউন তথা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি দারুণভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় করোনাভাইরাসের উর্ধগতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এই অবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে দেশের সকলস্থানেই জনসমাগম বেড়ে যেতে পারে স্বাভাবিকভাবেই। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ উর্ধগতি আরও ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে তা মহামারী আকার ধারণ করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার জন্য এবং স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পুলিশ সদর দফতর থেকে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের সঙ্গে সরাসরি ভার্র্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। আইজিপি বলেছেন, করোনা প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। লকডাউন কার্যকর করতে যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। বিশেষ করে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের কঠোরভাবে দমন করতে বলা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণাধীন মাদ্রাসাগুলোর দিকে বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে আইজিপির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ উর্ধগতি রোধে পুলিশ সদর দফতর একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে। পুলিশ সদর দফতর এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলে সংক্রমণ রোগের বিস্তার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারকে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ লকডাউন, প্রয়োজনে কারফিউ জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে জনসাধারণের চলাচলের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন দেখা দেয়। এমন জরুরী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের প্রত্যক্ষভাবে মাঠে কাজ করতে হয়। বাস্তবতার নিরিখে জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় লকডাউনসহ যথাযথ আইন প্রয়োগের জন্য পুলিশ বাহিনীর অংশগ্রহণ আবশ্যক বিধায় উপদেষ্টা কমিটিতে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন। কারণ করোনাকালীন বাংলাদেশ পুলিশের জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে পুলিশ প্রধানের অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছে।
×