ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেরাম টিকা না দিলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে ॥ অর্থমন্ত্রী

রেলে দ্রুত চাল আসবে ভারত থেকে

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৬ মে ২০২১

রেলে দ্রুত চাল আসবে ভারত থেকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পণ্যবাহী রেলে করে এবার ভারত থেকে আমদানিকৃত চাল দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের মজুদ বাড়াতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি করা হচ্ছে। ভারতের পাশাপাশি চাল আসছে থাই্যলান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং ফিলিপিন্স থেকে। তবে চালের সবচেয়ে বড় সোর্স ভারত। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট যদি চুক্তিতে প্রতিশ্রুত ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে না পারে, তাহলে অগ্রিম দেয়া অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী এই টাকা ফেরত পাবে বাংলাদেশ। এটা নিয়ে এখনও ভাবার সময় হয়নি। তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা দেবে না এটাতো এখনও বলেনি। আমরা আশা করছি, টিকা পাব। এর পাশাপাশি বিকল্প সোর্স থেকে সরকার টিকা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের আর মাত্র একমাস বাকি থাকায় আগামী জুন পর্যন্ত গণপূর্তের নতুন কোন প্রকল্পের আর অনুমোদন দেয়া হবে না। বুধবার দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত ও সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকে আটটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২টি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ২টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাবনা ছিল। অনুমোদিত ৮টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৫৭৭ কোটি ৮৭ লাখ ৪২ হাজার ৯৪২ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি হতে ব্যয় হবে ৭৮০ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪২২ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক, এডিবি ও কোরিয়ান ঋণ ১,৭৯৭ কোটি ৭২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২০ টাকা। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যখন চূড়ান্তভাবে জানা যাবে যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না, তখন অগ্রিম যে অর্থ দেয়া হয়েছে, তা আমরা অবশ্যই ফেরত পাব। ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে আগাম টাকা দেয়া হয়েছিল, তারা ভ্যাকসিন দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন আসবে না সেটাও তো আমরা জানি না। আমরা তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। আমরা যখন চূড়ান্তভাবে জানতে পারব যে ভ্যাকসিন আসবে না, তখন চূড়ান্তভাবে এটি নিয়ে কথা বলতে পারব। কিভাবে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন না আসলে অবশ্যই টাকা ফেরত পাব। এভাবে কোন দেশ কোন দেশের টাকা মেরে দেয় নাকি? আমরা লিগ্যাল ডকুমেন্টের মাধ্যমে চুক্তি করেছি। এটা তো গোপন কোন কাজ নয়। কাগজপত্রে লিখালিখি হয়েছে, ডকুমেন্ট্রেশন হয়েছে সুতরাং কন্ট্রাক্টচ্যুয়াল ডিভিশন তাদেরও আছে আমাদেরও আছে। আমরা চেষ্টা করছি ভ্যাকসিন আনার জন্য। আমরা অন্যান্য সোর্সেও চেষ্টা করছি ভ্যাকসিনের জন্য। তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি আমরা একটা সোর্সের ওপর ডিপেন্ড করব না। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দেশের মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে প্রশ্ন। সুতরাং এখানে আমরা শুধু একটি সোর্সের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকলে হবে না। তাই এর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন সোর্স থেকে যারা ভ্যাকসিন তৈরি করে এবং যারা গ্রহণযোগ্য, যাদের ভ্যাকসিনে কোন আশঙ্কা নেই সে সকল কোম্পানি থেকেও আমরা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। সেরামের সঙ্গে চুক্তিতে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সুযোগ রাখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না। আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যে সকল শর্ত থাকে সকল শর্তই এই চুক্তিতে আছে। আমরা এখনই একদম ঘোষণায় চলে যেতে চাই না যে তাদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলাম সেই ভ্যাকসিন আসবে না, এমনটি আমরা বলিনি। তারাও এখনও বলেনি যে তারা দেবে না। জুন পর্যন্ত গণপূর্তের নতুন কোন প্রকল্প অনুমোদন নয় ॥ চলতি বাজেটের সময় কম থাকায় আগামী জুন মাস পর্যন্ত গণপূর্ত বিভাগের নতুন কোন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, আজকের বৈঠকে গণপূর্ত বিভাগের যে প্রকল্পগুলো ছিল সেগুলো আমরা বিবেচনা করিনি, কারণ এখন সময় নেই। এই অর্থবছরে কাজগুলো শেষ করা যাবে না। অর্থবছরের সময় আছে মাত্র একমাস। চলতি মাস বাদ দিলে জুন মাস শুধু বাকি আছে। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গণপূর্ত বিভাগের যেগুলো চলমান কাজ সেগুলো চলবে এবং বিদেশী অর্থায়নের কাজগুলো চলবে। এছাড়া নতুন যেসব প্রকল্প যেগুলো লম্বা সময় লাগে কাজ শেষ করতে এবং এক থেকে দেড়মাসের মধ্যে শেষ করা যাবে না সেগুলো পরে কাজ শুরু করতে হবে। কারণ এখন যে ম্যাটেরিয়ালস এবং খরচ তা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, এগুলো প্রাইজও আমরা সেভাবে জানি না। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমরা কোন প্রকল্প অনুমোদন দিতে পারব না। সেজন্য আমরা ঠিক করেছি এখন থেকে আগামী জুন পর্যন্ত গণপূর্ত বিভাগের নতুন কোন প্রকল্প আমরা অনুমোদন দেব না। এটা আমরা পরিষ্কার করে দিয়েছি। চলতি অর্থবছরে নতুন কোন পূর্ত কাজ অনুমোদন দেয়া হবে না অর্থ বিভাগের সেই পরিপত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থ বিভাগের সার্কুলারে পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমরা গণপূর্ত বিভাগের নতুন কোন প্রকল্পের অনুমোদন দেইনি। যে সকল প্রকল্প এসেছিল আমরা তা বিবেচনা করিনি। এদিকে আজ সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘ঢাকাস্থ মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ শীর্ষক গণপূর্ত অধিদফতরের পাঁচটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। যার একটিও অনুমোদন করেনি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল অর্থ বিভাগ এক পরিপত্রে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন কোন পূর্ত কাজের (নির্মাণ-স্থাপনা) কার্যাদেশ না দিতে নির্দেশনা দেয়। পরিপত্র বলা হয়, চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারের কৃচ্ছ সাধন নীতির আলোকে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) অবশিষ্ট সময়ে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন কোন পূর্ত কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা যাবে না। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় এ পরিপত্রের আওতা বহির্ভূত থাকবে বলেও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার টন চাল আসবে পণ্যবাহী রেলে করে ॥ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন নন বাশমতি চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিটন ৩৮৬ মার্কিন ডলারে এই চাল আমদানি করা হবে। সরকারী গুদামে চালের মজুদ বাড়াতে গত কয়েকমাস ধরে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। বৈঠকে জানানো হয়, এবার বেনাপোল-দর্শনাৎ-রোহানপুর রুটে এই চাল পণ্যবাহী রেলে করে আনা হবে বাংলাদেশে। এতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল আমদানি করা সম্ভব হবে। এছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১৩তম এলএনজি হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ৩১৮ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪৩ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক ১ লাখ ৮০ হাজার (+১০%) মেঃ টন এমওপি সার বেলারুশ হতে ৪৪৭ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার ১৭০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক ১ লাখ ৫০ হাজার (+১০%) মেঃ টন টিএসপি সার তিউনিশিয়া হতে ৭২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×