ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুমেল খান

অম্রাচিং ও মুনমুনের সাফল্য

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ৫ মে ২০২১

অম্রাচিং ও মুনমুনের সাফল্য

সতীর্থ মুনমুনের সঙ্গে অম্রাচিং বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। এর পরেই রাগবির অবস্থান। কদিন আগে শেষ হওয়া বাংলাদেশ গেমসের নবম আসরে মহিলা রাগবিতে গত ৪ এপ্রিল স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি। রংপুর জেলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত মহিলা রাগবির (সেভেন-এ-সাইড) ফাইনালে আনসার টাঙ্গাইলকে ৫-০ পয়েন্টে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। স্বর্ণজয়ী সেই দলে দুজন খেলোয়াড় ছিলেন যারা একসময় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলেও খেলেছেন। এরা হলেন- অম্রাচিং মারমা এবং মুনমুন আক্তার। অম্রাচিং-মুনমুন দুজনেই প্রথমবারের মতো রাগবি খেলা শুরু করেন ২০২০ সালের নবেম্বরে, ফেডারেশন কাপ দিয়ে। সেবার ফাইনালে জিতে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় আনসার। আর সেই দলের সদস্য ছিলেন দুজন। অম্রাচিং ছিলেন দলের অধিনায়ক। তিনি বাংলাদেশ গেমসেও স্বর্ণজয়ী আনসার দলের অধিনায়ক। ফুটবলার হয়েও কিভাবে রাগবিতে সাফল্য পেলেন? জনকণ্ঠকে অম্রাচিং জানান, ‘যারা ফুটবল খেলতে পারে তারা অন্যান্য খেলাও সহজেই খেলতে পারে। যদিও চেয়েছিলাম এবারের বাংলদেশ গেমসে আনসারের হয়ে ফুটবল খেলতে। কিন্তু ফুটবলের ক্ষেত্রে বয়স অনুর্ধ-১৪ না হওয়াতে খেলতে পারিনি (অম্রাচিংয়ের বয়স ২৯)। তবে রাগবিতে বয়সের বিধিনিষেধ না থাকায় শেষ পর্যন্তই রাগবিই খেলতে হয়। দুই মাস অনুশীলন করার সময় পেয়েছি। কোন চাপ নিয়ে খেলিনি।’ মুনমুন বলেন, ‘রাগবির ফাইনালে জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ছিল।’ রাগবির সেমিতে একটা মজার ঘটনা ঘটে। রংপুর দল হুমকি দিয়ে বসেÑ তারা আনসারকে ৩০-০ পয়েন্টে হারাবে। কিন্তু খেলায় আনসার উল্টো রংপুরের বিরুদ্ধে ৪৭ পয়েন্ট স্কোর করে। ফাইনালে টাঙ্গাইলকে সমীহ করে খেলতে নামে আনসার। কেননা ওই দলে ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক আলিসা। তাছাড়া তার দলও অনেকদিন অনুশীলন করেছে, অনেক টাকা খরচ করেছে। কিন্তু ফাইনালে আলিসার টাঙ্গাইলকে হার মানতে হয় অম্রাচিং-মুনমুনের আনসারের কাছে। যতদিন ফুটবল খেলার মতো ফর্ম-ফিটনেস থাকবে ততদিনই রাগবি খেলতে চান অম্রাচিং। তার ও মুনমুনের অভিন্ন বক্তব্য, ‘শুনেছি আনসারের মহিলা রাগবি দলের প্রায় সবাইকে জাতীয় মহিলা রাগবি দলে নেয়া হবে। কাজেই আন্তর্জাতিক রাগবিতে পদচারণার স্বপ্ন দেখি। আরও চাই বাংলাদেশে যেন রাগবি খেলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এদেশের মহিলা রাগবির ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল।’ অম্রাচিং আনসারে যোগ দেন ২০০৮ এবং মুনমুন ২০১৩ সালে। জাতীয় ফুটবল দলে অম্রাচিং খেলেছেন ২০০৫-২০১৩ সাল পর্যন্ত। পজিশন ফরোয়ার্ড। গোল ১০টি। আর মুনমুন খেলেছেন ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত। পজিশন ফরোয়ার্ড। গোল ১টি। ২০১৪ সালে ইন্দো-বাংলা গেমস উপলক্ষে জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন অম্রাচিং। কিন্তু সেই গেমস আর হয়নি। সেটাই তার শেষবারের মতো ক্যাম্পে ডাক পাওয়া। এরপর সাত বছর হয়ে গেল, জাতীয় দলে খেলতে আর ডাক পাননি অম্রাচিং। আবারও জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি তিনি। তবে উত্তর দিয়েছেন মুনমুন, ‘ঘরোয়া ফুটবলে ভাল খেলে আশাকরি আবারও জাতীয় দলে ফিরতে পারব।’ এবারের মহিলা ফুটবল লীগে অম্রাচিং-মুনমুন খেলছেন এফসি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার হয়ে। তবে দলের হয়ে প্রথম ম্যাচটি তারা খেলতে পারেননি রংপুরে রাগবি খেলায় ব্যস্ত থাকায়। এবারের ফুটবল লীগে সেরা তিনে থাকবে তাদের দল, এটাই প্রত্যাশা অম্রাচিং-মুনমুনের। কয়টি গোল করতে চান? দুজনেই নির্দিষ্ট কোন গোল সংখ্যা বলতে রাজি হলেন না। অম্রাচিং বলেন, ‘আমি মূলত স্ট্রাইকার। তবে দলের স্বার্থে মিডফিল্ডার, এমনকি ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতেও আপত্তি নেই। কোচকেও ইতোমধ্যেই সেটা জানিয়েছিও।’ আর মুনমুনের ভাষ্য, ‘ভাল খেলাই মূল লক্ষ্য।’ ২০১৩ সালে অষ্টম বাংলাদেশ গেমসে অম্রাচিং-মুনমুন খেলতে পারেননি জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে থাকায়। ২০১১ ও ২০১৩ মহিলা লীগের শিরোপাধারী যথাক্রমে শেখ জামাল ও আবাহনীর হয়ে খেলেছিলেন অম্রাচিং। ওই দুই লীগে তার গোল ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ২৯। ২০১৯ লীগে কুমিল্লা ইউনাইটেড ক্লাবের হয়ে খেলার কথা ছিল তার ও মুনমুনের। কিন্তু বিভিন্ন কারণে খেলা হয়নি। ২০১৩ লীগে অম্রাচিংয়ের সঙ্গে আবাহনীতে খেলে মুনমুন করেছিলেন ২২ গোল। অম্রাচিংয়ের জন্ম খাগড়াছড়ির মাইসছড়িতে। আর মুনমুনের ঠাকুরগাঁওয়ে। আনসার রাগবি দলে অম্রাচিংই সবচেয়ে সিনিয়র। এ প্রসঙ্গে অম্রাচিং বলেন, ‘সতীর্থরা সবাই জানে আমি ও মুনমুন একসময় জাতীয় ফুটবল দলে খেলতাম। এ জন্য তারা আমাকে ও মুনমুনকে অনেক সম্মান করে।’ ২০০৪ সালে খাগড়াছড়িতে বাফুফের অধীনে পরিচালিত একটি ট্যালেন্ট হান্ট ক্যাম্পে কোচ মোশাররফ বাদল অম্রাচিংকে ফুটবল ভুবনে নিয়ে আসেন। জেলা ফুটবল খেলেছেন খাগড়াছড়ি ও মুন্সীগঞ্জের হয়ে। ২৩ বছর বয়সী মুনমুনের ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু। আনসারের ব্যাটেলিয়ন মুনমুনের আদর্শ লিওনেল মেসি ও জামাল ভুঁইয়া। আরামবাগের হয়ে খেলেছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। একটা সময় সাবিনা খাতুনের সঙ্গে গোল করা নিয়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো অম্রাচিংয়ের। সেগুলো কি মিস করেন? ‘অবশ্যই মিস করি। গত লীগে সাবিনা সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিল। সবসময়ই খোঁজ রাখতাম। ওই লীগে খেললে কে জানে হয়তো আমিও ওর জায়গায় থাকতে পারতাম।’ সাবিনাদের মতো ফুটবলে এত বেশি ফুটবল না খেললেও এই কয়েক বছরে টুকটাক ‘খ্যাপ’ ফুটবল খেলেছেন অম্রা-মুনমুন। নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ ও রংপুরে গিয়ে ৫-৬টির মতো ম্যাচ খেলেছেন ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ফুটবলকন্যা অম্রাচিং-মুনমুন আগামীতে রাগবি খেলে আরও কতটা সাফল্য পাবেন সেটা সময়ই বলে দেবে।
×