ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনের আগুনে পুড়েছে ৫ একর বনভূমি

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৪ মে ২০২১

সুন্দরবনের আগুনে পুড়েছে ৫ একর বনভূমি

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় লাগা আগুন অবশেষে মঙ্গলবার বিকেলে নিয়ন্ত্রনে এসেছে। এদিন বৃষ্টি হবার পর আগুনের তীব্রতা কমে যায়। একইসাথে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ, সিপিজি সদস্য, বনসংলগ্ন গ্রামবাসীর সর্বাত্মক চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন বাগেরহাটের উপসহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে ৩-টি ইউনিটের সহায়তায় পানি দিয়ে আগুন নেভানো শুরু করি। দুপর ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানি ও সবার সম্মিলিতভাবে চেষ্টায় আগুন অনেকটা নিভে গেছে। বিকেল ৪ টার দিকে তারা আগুন নেভানোর কাজ শেষ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদিন বিকেলে বলেন, ‘আগুন নিভে গেছে।’ কমিউনিটি টহল দলের স্থানীয় সভাপতি খলিল জমাদ্দর বলেন ‘বর্ষা হইয়া খুব উপকার হইছে, নইলে যতই পানি দেউক, সাত দিনেও আগুন নেভতো কিনা কি না সন্দেহ আছিল।” স্থানীয়দের মতে, আগুনের কমপক্ষে ৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। মশাল জ্বালিয়ে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করার সময় এ আগুন লেগেছে বলে তারা মনে করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একটি সূত্র জানায়, মাসুম নামে জনৈক বনজীবীর অসাবধানতার কারনে মধু আহরনের মশাল থেকে রবিবার রাতে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। সোমবার সকাল ১০ টার দিকে সেখানে আগুন দেখতে পেয়ে গ্রামবাসী বন বিভাগকে খবর দেন। অগ্নিকা- এলাকায় দেড় কিলোমিটার ঘিরে ফায়ার লাইন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চলে। এদিকে, অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ( সিএফ) মোঃ মইনুদ্দিন খান এবং পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান। সিএফ মইনুদ্দিন খান বলেন, অগ্নিকান্ড এলাকা খুবই দুর্গম ও কাছাকাছি পানি না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। আগুন লাগার কারন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। শরণখেলা রেঞ্জের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, এলাকাবাসী বনের মধ্যে আগুনের ধোঁয়া দেখে সোমবার সকাল ১০ টার দিকে আমাদের খবর দেয়। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সিপিজি সদস্য, গ্রামবাসী, বন বিভাগের ভোলা ও ধান সাগর ক্যাম্পের সদস্যদের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। আগুন নিয়ন্ত্রনে প্রায় দেড় কি:মি: ফায়ার লাইন কাটা হয়। অগ্নিকান্ড এলাকায় বড় গাছের পাশাপাশি বলা গাছ ও লতাগুল্ম রয়েছে। তীব্র দাবদাহর কারনে আগুন লাগতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে, পরিবেশবাদীরা একের পর এক সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা তথাকথিত তদন্ত কমিটি গঠন করা নিয়েও হতাশা ব্যক্ত করেন। এর আগে ৮ ফ্রেরুয়ারি বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কাছে ২৭ নম্বর কর্ম্পাটমেন্টের বনে আগুন লেগে পুড়ে যায় ৫ শতক বনের গাছপালা ও লতাগুল্ম। তথ্যমতে, সুন্দরবনে ১৫ বছরে ২৮ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৬০ একর বনভূমি। ২০১৭ সালের ২৬ মে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আবদুল্লাহর ছিলায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির লতাগুল্ম পুড়ে যায়।
×