ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪ বছরেও মেরামত হয়নি ভেঙ্গে পড়া ব্রিজ

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ৪ মে ২০২১

৪ বছরেও মেরামত হয়নি ভেঙ্গে পড়া ব্রিজ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুর সদর উপজেলার গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর ৩শ' মিটার দীর্ঘ ব্রিজটি উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে গেছে। প্রায় চার বছর পার হলেও এখনো মেরামত হয়নি ব্রিজটি। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিন শত শত অটোরিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছে দুই উপজেলার কয়েক হাজার গ্রামবাসী। দিনাজপুর সদরের সুন্দরবন ইউনিয়নের হারগাঁও গ্রামের মধ্য দিয়ে গর্ভেশ্বরী নদী প্রবাহিত হয়ে গ্রামটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। গ্রামটি এখন উত্তর হারগাঁও আর দক্ষিণ হারগাঁও হিসাবে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রচুর পানি থাকায়, কেউ এপার-ওপারে যেতে পারে না। বিশেষ করে কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে কৃষকেরা আর স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বর্তমানে শুকনো ধানের জমির পাশ দিয়ে মেঠো রাস্তা তৈরি করে পথচারীরা চলাচল করতে পারলেও, নদী থেকে দুই পারে ওঠার সময় ছোট ছোট যানবাহনগুলো উল্টে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আহত হচ্ছেন অনেকেই। চলাচলের অযোগ্য অবস্থায় প্রায় চার বছর পার করলেও, এখনও প্রশাসনের টনক নড়েনি। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ সহ্য করে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করছে। তবে বর্ষার সময় দুর্ভোগ আরও বাড়ে। হারগাঁও গ্রামের যোগেন্দ্র নাথ বলেন, গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর যখন এই ব্রিজটি তৈরি হচ্ছিলো, তখন মনে হয়েছে আমাদের কষ্টের দিন হয়তো লাঘব হবে। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি। ২০১৭ সালে ১৭ আগস্ট উদ্বোধনের সব প্রস্ততি সম্পন্ন হয়। উদ্বোধনের ফলকও তৈরি হয়। কিন্তু এক রাতের বন্যায় ব্রিজের মাঝারি ভাগ ধসে ভেঙ্গে নুয়ে পড়ে ব্রিজটি। ফলে কষ্টের দিন শেষ হচ্ছে না, বরং কষ্টের দিন আরোও বেড়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষের। একই গ্রামের শিবেশ চন্দ্র রায় বলেন, ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে কতো লোকজন এসে মাপজোক নিয়ে যায়, কিন্তু ব্রিজ আর ঠিক হয় না। এখন আমরা ব্রিজের আশা বাদ দিয়েছি। আমাদের কষ্ট আমাদেরই ভোগ করতে হবে। উত্তর হারগাও গ্রামের আসাদুল হক মাস্টার জানান, গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কী পরিমাণ দুর্নীতি হলে একটা ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই এক রাতের বন্যায় ভেঙ্গে যেতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। বিষয়টি সরকারের উচ্চমহল থেকে তদন্ত করে ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্রিজের নির্মানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, সবাইকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বানেছা বেগম নামে এক গৃহবধু জানান, আমরা উত্তর হারগাও গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষ মিলে একটা অটোরিকশা নিয়ে এক আত্মীয়বাড়ি যাচ্ছিলাম। নদীর পারে সবাই হেঁটে পার হয়েছে। কিন্তু অটোরিকশা নিয়ে পার হওয়ার সময় চালক অটোরিকশাসহ উল্টে পড়ে মারাত্মক আহত হন। বর্ষার সময় আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ব্রিজ না থাকায় স্কুলে যেতে পারে না। সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার রায় জানান, ব্রিজটি উদ্বোধনের আগেই বন্যার পানিতে দেবে যায় এবং সংযোগস্থলের মাটি সরে যায়। তারপর থেকে ওই অবস্থায় পড়ে আছে। ব্রিজটির অভাবে দুই পাশের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বেশি দুর্ভোগে পড়ছে সুন্দরবন ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। ব্রিজটি দিনাজপুর সদর উপজেলার সঙ্গে কাহারোল উপজেলার কয়েক গ্রামের সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রায় চার বছর পার হলেও তা আজও মেরামত হয়নি। দিনাজপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুন মাসে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছিল। কাজ শেষ করার পর বন্যার কারণে ব্রিজটি ভেঙ্গে যায়। তারপর থেকে এভাবেই পড়ে আছে। তবে নতুন ব্রিজের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া রয়েছে।
×