ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন ক্রেতা-বিক্রেতা অনেক মার্কেট রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে

রাজধানীর শপিংমল দোকানপাটে ভিড় বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৪ মে ২০২১

রাজধানীর শপিংমল দোকানপাটে ভিড় বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীর মধ্যেই রাজধানীর দোকানপাট-শপিংমলগুলোতে ভিড় বাড়ছে। তবে বিকেলে ভিড় বেশি থাকলেও সন্ধ্যার পর তুলনামূলক ভিড় কম দেখা গেছে। তবে যেসব মার্কেট সরকার নির্ধারিত সময়ের পর খোলা রাখা হচ্ছে সেগুলোতে সন্ধ্যার পর ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সরকার ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট-শপিংমল খোলার অনুমতি দিলেও ক্রেতাদের সুবিধা ও চাহিদার জন্য রাজধানীর অনেক মার্কেট রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও উদাসীন অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা। এই অবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতারা মাস্ক না পরলে মার্কেট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মার্কেটগুলোতে প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল দেখা যায়নি, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলতে দেখা গেছে। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দোকানেই কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা নেই। তবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা দেখা গেছে অনেক মার্কেটে। রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট, ইসলামপুর, টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেট, ওয়ারি, গুলিস্তানের বঙ্গবাজার, এনেক্স টাওয়ার, ইসলামিয়া সুপার মার্কেট, স্টেডিয়াম সুপার মার্কেট, পীর ইয়ামিনি মার্কেটসহ ঘুরে দেখা গেছে সব মার্কেটেই কম-বেশি ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। আর এ ভিড়ে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অনেকেই। এখনও বেশিরভাগ মার্কেটে নেই জীবাণুনাশক টানেল, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা মাস্ক পরিধানে তদারকি করার কোন ব্যবস্থা। সরেজমিনে দেখা গেছে সদরঘাট হকার্স, গ্রেটওয়াল, সুলতানা, গুলশান আরা মার্কেটের ভেতরে নিচতলায় ক্রেতাদের চাপ বেশি। ফলে একজন থেকে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। দোকানগুলোতেও কোন ধরনের ব্যারিকেড কিংবা পদচিহ্ন দিয়ে দূরত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হয়নি। এসব মার্কেটের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক স্প্রে করার টার্নেল দেখা যায়নি। একই অবস্থা ইসলামপুর, রাজধানী সুপার মার্কেট, গুলিস্তানের বঙ্গবাজার, এনেক্স টাওয়ারের। আর মৌচাক মার্কেটের চারটি গেটের মধ্যে সামনের প্রধান গেটে শুধু জীবাণুনাশক টানেল লাগানো রয়েছে। তবে এর থেকে ভাল অবস্থা ওয়ারির নামী দামী শোরুমগুলোর। সেখানে ট্যানেলের পাশাপাশি ক্রেতারা ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে তাপমাত্রা মাপার বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করার ব্যবস্থা দেখা গেছে। একইসঙ্গে এসব মার্কেটের অনেক দোকানদার বা শোরুমে কর্মরত কর্মচারীদের মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলতে দেখা গেছে। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দোকানেই কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা নেই। মার্কেটে অধিকাংশ ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতাদের অনেকের মাস্ক থুঁতনিতে নামানো ছিল। ক্রেতাদের চেয়ে বিক্রেতাদের মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা কম দেখা গেছে। মাস্ক নেই কেন এমন জানতে চাইলে অধিকাংশ ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলেন, মাস্ক আনতে ভুলে গেছি, কেউবা পাশেই রাখা মাস্ক দেখিয়ে বলছেন, সারাদিন পরে ছিলাম। মাত্র খুলে রেখেছি ক্রেতা নেই বলে। এ বিষয়ে গ্রেটওয়াল মার্কেটের ব্যবসায়ী নাসির ব্যাপারি বলেন, রমজানের এ সময়টা তাদের ব্যবসার মৌসুম। এ মাসে ব্যবসা করে তাদের সারাবছর সংসার চালাতে হয়। ঈদেরও আর বেশিদিন নেই। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান খুলেছি। দোকানে ক্রেতা আসলেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি। মাস্ক ব্যবহার নিয়ে একটু সমস্যা আছে। সারাদিন দোকানের ভিতরে মাস্ক পরে বসে থাকা যায় না। তাই মাঝে মধ্যে একটু মাস্ক খুলে রাখি। এছাড়া ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে রাত ১০টা পর্যন্ত অঘোষিত মার্কেট খোলা রাখছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। যদিও এটা বেআইনী কিন্তু কি করার সন্ধ্যায় ইফতারের সময় কোন দোকানে ক্রেতা থাকে না। ইফতারের পর সাড়ে ৭টা থেকে আবার ক্রেতা আসতে শুরু করে। তাই বাধ্য হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হচ্ছে। সরকার যদি এই সময়টা রাত ৮টার পরিবর্তে ১২টা পর্যন্ত করে দেয় তাহলে সবার জন্য ভাল হবে। রাজধানী সুপার মার্কেটের কাঁকন ফ্যাশনের মালিক নয়ন শেখ বলেন, করোনার জন্য অনেকদিন বন্ধ ছিল। আমরা বৈশাখের বাজার ধরতে পারি নাই। সামনে ঈদ গত শুক্রবার থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান খুলেছি। ক্রেতাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে দোকানে ঢুকতে দিচ্ছি না। মার্কেটের প্রবেশপথে টানেল থাকলেও কাজ করে না। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হচ্ছে। ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ শামসুল আলম শবজল বলেন, ইসলামপুরে কাপড় কিনতে সারাদেশের খুচরা ব্যবসায়ীরা আসেন। পহেলা বৈশাখ, রোজা ও ঈদের সময়ই ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেশি থাকে। তাই প্রতিটি দোকানদারকে বলা আছে মাস্ক ছাড়া কেউ এলে তাদের কাছে পণ্য বিক্রি না করতে। ক্রেতাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দোকানদারদের প্রতি নির্দেশ দেয়া আছে। তবে জীবাণুনাশক নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ আছে। অনেকে ওই জীবাণুনাশক স্প্রের ট্যানেলের মধ্য দিয়ে যেতে চায় না। আবার অনেকে প্রবেশের সময় মাস্ক পরে ঢুকে, পরবর্তীতে খুলে ফেলছেন। এদিকে মুখের মাস্ক নামিয়েই দোকানে পণ্যের দর-দাম করছিলেন ইমন সারোয়ার। মাস্ক পরেনি কেন জানতে চাইলেই বলেন, মাস্ক ছাড়া ঝুঁকি আছে জানি। কিন্তু মার্কেটের ভেতরে খুব গরম। সবসময় মুখে মাস্ক রাখা যায় না। তাছাড়া দর-দাম করার সময় মাস্কের ভেতর থেকে কথা বললে দোকানদার বুঝতে পারে না। তাই মাঝে মধ্যে একটু নামিয়ে বাতাস নিচ্ছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বলছে, চলমান লকডাউনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট ও দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা সাধারণ বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ইফতার করে। এতে দেখা যায় এ সময় মার্কেটে ক্রেতাদের চাপ বৃদ্ধি পায় ও প্রচ- ভিড় হয়। বাসায় গিয়ে ইফতার করতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে যায়। মার্কেট ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও একঘণ্টার জন্য কেউ মার্কেটে আসেন না। ফলে এ সময় মার্কেট ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। বিভিন্ন টক শোতে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন, বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মার্কেটে কেনাকাটায় ক্রেতা সাধারণের প্রচ- চাপ বাড়ে, সে জন্য মার্কেট ও দোকানসমূহ সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখলে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ক্রেতা সাধারণের মার্কেটে যে ভিড় থাকে সেটা কমে যাবে ও ক্রেতা সাধারণ সময় নিয়ে কেনাকাটা করার সুযোগ পাবেন।
×