ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় খালেদাকে সিসিইউতে স্থানান্তর

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ৪ মে ২০২১

শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় খালেদাকে সিসিইউতে স্থানান্তর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। সোমবার বিকেলে শ^াসকষ্ট দেখা দেয়ায় তাঁকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে বলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ ছাড়া সোমবারের পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার ফুসফুসে পানি জমেছে বলে অপর এক সূত্রে জানা যায়। এভারকেয়ার হাসপাতালের হেড অব মেডিক্যাল সার্ভিসেস ড. আরিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়া ২৭ এপ্রিল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি আছেন। একটু সমস্যা হওয়ায় তাঁকে সোমবার বিকেলে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেয়া হয়। চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর সাতদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার তেমন কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে সোমবার বিকেলে তাঁর শ^াসকষ্ট দেখা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বিকেল ৪টার দিকে তাঁকে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এতদিন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সে মোতাবেক তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমোন্নতি হচ্ছে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছিল। তবে চিকিৎসক বোর্ড আরও কিছু পরীক্ষা করার কথাও বলেছিল। সোমবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষার পর দেখা যায় তাঁর ফুসফুসে পানি কিছুটা জমেছে। ১০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় তাঁর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। যদিও খালেদা জিয়ার স্বজন বা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে তা প্রকাশ করতে চাওয়া হয়নি। ১১ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রথমে এবং পরে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার করোনাক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়। তবে তাঁকে কোন হাসপাতালে ভর্তি না করে অধ্যাপক ডাঃ এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল গুলশানের বাসা ফিরোজায় রেখেই চিকিৎসা চালিয়ে যান। আর এই চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করেন লন্ডন প্রবাসী পুত্রবধূ ডাঃ জোবাইদা রহমান। ১৫ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করানো হয়। গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে হাসপাতালে গিয়ে সিটি স্ক্যান করে আবার খালেদা জিয়ার বাসায় ফিরতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা। করোনাক্রান্ত হওয়ার ১৭তম দিনে দ্বিতীয়বারের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে খালেদা জিয়া করোনা পজিটিভ হওয়ায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। ২৭ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে কিছু পরীক্ষার পর রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে ভর্তি করা হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডাঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ৩ জন চিকিৎসকও রয়েছেন। খালেদা জিয়া করোনামুক্ত হয়েছেন বলে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আরও কিছুদিন আগে জানালেও এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। তবে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার যে আট কর্মী করোনাক্রান্ত হয়েছেন তারা করোনামুক্ত হয়েছেন বলে ক’দিন আগেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার এখন করোনা পরবর্তী বিভিন্ন সমস্যা ও পুরনো রোগের চিকিৎসা চলছে বলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এদিকে খালেদা জিয়া হাসপাতাল ছেড়ে আবার কবে গুলশানের বাসায় ফিরে যাবেন সে জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁর স্বজনরা। লন্ডন থেকে তাঁর ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ ডাঃ জোবাইদা রহমান, নাতনি জায়মা রহমানসহ দেশ-বিদেশে থাকা স্বজনরা প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাঁকে সাহস দিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরাও নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তাঁর রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করছেন। সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলও খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছেন এবং করছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যান। কারাগার থেকে মাঝে মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চিকিৎসা করানো হলেও স্বজনরা এতে সন্তুষ্টু হতে পারেননি। তাই খালেদা জিয়ার স্বজন ও বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানানো হয়। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে রেখে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় গত বছর ২৫ মার্চ থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এর পর করোনাক্রান্ত হওয়ার পর গত ১৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো গুলশানের বাসা থেকে ১ ঘণ্টার জন্য বের হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে সিটি স্ক্যান করান। পরে দ্বিতীয়বারের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফখরুলের ফোন ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামালকে ফোন করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় মির্জা ফখরুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে স্বজনরা তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মির্জা ফখরুলকে জানান, বিষয়টি সরকারের নয়, আদালতের। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে। সোমবার রাতে মির্জা ফখরুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন বলে সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করতে লন্ডনে নেয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া গত ১০ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করতে নেয়া হয়। তারপরের দিনই খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম তার বোনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেই আবেদনে এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে জানা গেছে, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান খালেদা জিয়াকে বিশেষ বিমানে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ বিষয়ে তারা সব প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেলেই যেকোন সময় বিশেষ বিমানে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে।
×