ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণোদনার অর্ধেক টাকাই পেয়েছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা

প্রকাশিত: ২১:২০, ৪ মে ২০২১

প্রণোদনার অর্ধেক টাকাই পেয়েছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেক, অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকাই পেয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। এরইমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ফের ওলটপালট বাংলাদেশের অর্থনীতি। আর এ ধাক্কা সামাল দিতে সরকারের কাছে নতুন প্রণোদনা চেয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। এবার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন-ভাতা দিতে টাকা চেয়েছেন তারা। প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ নিয়ে চার মাসের বেতন-ভাতা দিয়েছিলেন এই শিল্প মালিকেরা। নতুন প্রণোদনার ব্যাপারে সরকার এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। পোশাকশিল্পের মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ‘চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সরকার আমাদের আবেদনের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে আশা করছি।’ গতবছরের মার্চে দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর মোট ২৩টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২৪ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার পাশাপাশি ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ। এরমধ্যে বড়দের ঋণের পুরোটা অনেক আগে শেষ হয়ে গেলেও ছয় দফা মেয়াদ বাড়িয়েও ছোট ঋণ বিতরণ শেষ হয়নি। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রণোদনার সিংহভাগই পেয়েছেন এই পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, বড় উদ্যোক্তাদের ৪০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন ৩ হাজার ১২৯ জন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক। এর মধ্যে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা তারা নিয়েছেন শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য। বাকিটা নিয়েছেন ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে। এই অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে সরকারের কাছে আবার টাকা চেয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। ঈদের আগে আর্থিক সঙ্কটের কথা বলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস দিতে এ টাকা চেয়েছেন তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। গতবারের মতো একই শর্তে এপ্রিল, মে ও জুন- এই তিন মাসের বেতন-ভাতা ও বোনাস দেয়ার জন্য ঋণ চেয়েছেন তারা। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এবং বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন গত ২৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দিয়ে ঋণ দেয়ার অনুরোধ করেছেন। চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বরাবরও পাঠানো হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বর্তমানে পোশাক রফতানির অর্থ সময়মতো দিচ্ছে না অনেক ক্রেতা। তারা ৬০ থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত সময় চাইছে। এছাড়া অনেক ক্রেতাকে মূল্যছাড়ও দিতে হচ্ছে। আবার ঈদের আগে বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস দিতে অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ কারখানা মালিকের হাতেই পর্যাপ্ত অর্থ নেই। সে কারণে আমরা সরকারের কাছে ঋণ চেয়েছি। করোনার কারণে গতবছর মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। তখন পোশাকশিল্পের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রফতানিমুখী শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন তিন মাসের মজুরি দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।এই ঋণের বিপরীতে সেবা মাশুল ছিল ২ শতাংশ। পরে পোশাকশিল্পের মালিকেরা আরও এক মাসের মজুরি দেয়ার জন্য ঋণ দাবি করেন। সরকারও মেনে নেয়। তখন তহবিলের আকার বেড়ে ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। তবে চতুর্থ মাসের জন্য ঋণের মালিকদের সুদ দিতে হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার।তবে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ বাস্তবায়ন মোটেও সন্তোষজনক নয়। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে করোনার ক্ষতি পোষাতে সরকার গতবছরের এপ্রিলে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। প্রথমে আগস্টের মধ্যে পুরো ঋণ বিতরণ শেষ করতে বলা হয়। পরে পাঁচ দফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে বলা হয়। তবে এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ শেষ করার সময়সীমা ষষ্ঠবারের মতো বাড়িয়ে জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।
×