ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৪ মে ২০২১

ঢাকার দিনরাত

রবিবার উত্তরা থেকে নিউ ইস্কাটনে আসতে বিভিন্ন স্থানে যানজটে বসে থাকতে থাকতে অবাক হচ্ছিলাম। মনেই হচ্ছিল না যে ঢাকায় লকডাউন সামনের বুধবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাস-মিনিবাস, মানে যেগুলোকে আমরা গণপরিবহন বলে থাকি, সেগুলো ছাড়াই বনানী ও মহাখালীতে ভাল যানজট দেখলাম। বাস-মিনিবাস বাদে সবই চলছে, তবে ব্যক্তিগত গাড়িরই প্রাধান্য এখন ঢাকায়। অবশ্য একখানা ব্যক্তিগত গাড়িতে বড়জোর চারজন যাতায়াত করেন। আর গণপরিবহনে ৪০ থেকে ৭০ জন ওঠেন। রাস্তায় সিএনজি অটোরিক্সা এবং মোটরসাইকেলও প্রচুর। আরও আছে কাভার্ড ভ্যান। এতেই সড়ক ভর্তি হয়ে গেছে। এ থেকেই অনুমান করা যায় যখন বাস-মিনিবাসও চলা শুরু হবে তখন এই বৈশাখী রোদের ভেতর রোজা-রমজানের দিনে যানজটে যাত্রীদের কী কষ্টই না হবে। গণপরিবহনে সংক্রমণের ঝুঁকি রবিবারেই গণপরিবহন চালু করাসহ তিন দফা দাবিতে সকাল থেকে দেশের সব টার্মিনালে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, পিকআপ চললে গণপরিবহন চলবে না কেন। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সড়ক পরিবহনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার। এতে তাদের জীবিকা নির্বাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। পরিবহন শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে এলে তার দায়দায়িত্ব ফেডারেশন নেবে না। ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, তাদের তিনটি দাবি, এগুলো হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে, সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা দিতে হবে এবং সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ওএমএসের চাল দিতে হবে। টার্মিনালে জমায়েত হওয়া পরিবহন শ্রমিকদের একটি বক্তব্য চমক জাগায়। তারা বলছেন, মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে। অনেকে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, পরিবহন শ্রমিকদের সন্তানেরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। গাড়ি না চললে শ্রমিকেরা টাকা পান না। পরিবহন শ্রমিকদের জীবিকা ও প্রতিদিনের ব্যয় সংকুলানের প্রশ্নে উত্থাপিত যুক্তিগুলো অস্বীকার করার নয়। তাদের অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজন সম্পূর্ণ মেটাতে পারলে তাদের ঘরে রাখা যেত। কিন্তু সেটি কি সম্ভব? করোনার ভয়ঙ্কর নতুন ধরন নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিন সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি যেসব জায়গায় তার শীর্ষস্থানেই রয়েছে গণপরিবহন। এটি অস্বীকার করার নয়। গণপরিবহনের মাধ্যমেই গণহারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। আমরা লক্ষ্য করে দেখলাম শপিংমল খুলে দেয়া হলেও গণপরিবহন বন্ধই থেকেছে। এখন শপিংমল ও বাজার-ঘাটে ঈদের কেনাকাটার জন্য মানুষ যেভাবে উপচে পড়েছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই ভয় এসে ভর করছে অনেকেরই মনে। কেননা সামাজিক দূরত্ব না মানা হলে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। যদি জীবন বাঁচানোর কথা ওঠে তাহলে অবশ্যই যেসব স্থানে জনসমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই সমীচীন। কিন্তু জীবিকার কথা বলে এক্ষেত্রে যদি ছাড় দেয়া হয় তাহলে করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা বড় ধরনের ধাক্কাই খাবে। প্রতিবেশী দেশে যেখানে করোনাভাইরাসের নতুন ও অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপবদল (মিউটেশন) ঘটায় মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, সেখানে আমাদের অতিসতর্কতার কোন বিকল্প নেই। হায় সেলুকাস, কেজি দরে তরমুজ! গ্রীষ্মে রসাল ফল দেহের জন্য উপকারী তা বলাইবাহুল্য। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বেশি পুষ্টি পাওয়ার উপায় হলো মধুমাসে মৌসুমী ফল খাওয়া। বিশেষ করে তরমুজের দুটি ফালি কিংবা কাঁঠালের দশ-বারোটি কোয়া খেলে এক বেলার খাবার হয়ে যায়। ঢাকার শ্রমজীবী মানুষ বলতে সবার আগে যে কয়টি পেশার নাম চলে আসে তার ভেতর রয়েছে রিক্সাচালনা, পোশাক-শ্রমিক ও নির্মাণ-মজুর। এদের সীমাবদ্ধ আয়ের টাকা দিয়ে ক্রয়ক্ষমতা আর কতটুকুই বা অর্জিত হয়। তাই রাজধানীতে রাস্তার পাশে এদেরই এক ফালি তরমুজ কিংবা এক প্লেট কাটা আনারস কিনে খেতে বেশি দেখা যায়। আনারস তবু ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে। কিন্তু তরমুজ এবার আকাশের চাঁদ হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অভিনব কৌশলে। আস্ত তরমুজ কিনতে হয়েছে কেজি দরে। এমন কথা কখনোই এর আগে বাঙালী শোনেনি। সাম্প্রতিক সময়ে তীব্র গরম এবং রমজানের কারণে বাংলাদেশে মৌসুমী ফল তরমুজের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম। বাংলাদেশের সর্বত্র খুচরা পর্যায়ে তরমুজ কেজি দরে বিক্রির অভিনব কথা শোনা গেছে। এ নিয়ে ক্রেতারা আপত্তি জানাচ্ছেন। খুচরা বাজারে তরমুজের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রির এই প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। এমন প্রেক্ষাপটে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযানে নামে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সাধারণ মানুষ যাতে ‘ন্যায্যমূল্যে’ তরমুজ এবং অন্যান্য ফল কিনে খেতে পারে সেজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী তরমুজসহ যে কোন ফল পিস্ হিসেবে ক্রয় করে কেজি দরে বিক্রি করা যাবে না। অথচ ব্যবসায়ীরা মাঠ বা গ্রাম-গঞ্জের বাজার থেকে পিস হিসেবেই তরমুজ কিনে আনছে। এবার রমজানে তাই নতুন ধরনের মুনাফাখোরের দেখা পেল ফলক্রেতারা। করোনাকে তুড়ি মারা ঈদের শপিং! এবারের পরে কি আর ঈদ আসবে না! তাহলে ঈদের নতুন জামা-জুতো কেনার এমন মরিয়াভাব কেন? শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির পরদিন মে দিবসের ছুটি ছিল। পরপর দুদিন ঈদের বাজারে রীতিমতো ক্রেতাদের ঢল নামে। এতে উধাও হয়ে যায় স্বাস্থ্যবিধি। করোনা মহামারীতে থেমে নেই মানুষের মৃত্যু। বাড়ছে সংক্রমণও। সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ জারির পরও নগরবাসী কিংবা জনসাধারণের মধ্যে যেন কোন ধরনের করোনাভীতি নেই। এই সঙ্কটকালেও নিশ্চিন্তে ঈদের কেনাকাটা করছেন তারা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকছে। ( ব্যবসায়ীরা আবদার করেছেন রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখার) তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে বলে জানানো হয় নির্দেশনায়। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্ক ও পলওয়েলস অভিজাত শপিংমলগুলোতেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকালে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের গেট খোলার আগে থেকেই ক্রেতাদের লাইন দেখা যায়। সিরিয়াল দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করেত দেখা গেছে। ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে কেনাকাটায় মহাব্যস্ত রাজধানীবাসী। এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ছুটছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ তাদের পছন্দের জিনিসপত্র কিনতে। প্রতিটি মার্কেটেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন তাড়না নেই। কিছু কিছু মার্কেটে পা ফেলার জায়গাও পাওয়া দুষ্কর। এমন অবস্থা দেখে আমাদের এক রসিক বন্ধু ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘আজকের আড়ং আর বসুন্ধরা শপিংমলের সামনের আত্মাহুতির দৃশ্য দেখে আমি পাথরে মাথা ঠুকে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছি, মানে আরেকটু হলেই রক্তারক্তি হয়ে যেত আরকি! যারা এসব শপিংমলের ক্রেতা, আমি গ্যরান্টি দিয়ে বলতে পারি তাদের ঘরে একটা নয় দশ দশটা ঈদ পার করার মতো ড্রেস আছে। সুন্দর বা ভাল ড্রেসের অভাব হয় না। বরং দীর্ঘ সময়ে ঘরে পরার ড্রেসের চাহিদা থাকতে পারে। কারণ এটাই পরা হয় বেশি, ধোয়া-শুকানো হয় বেশি বেশি। এর সমাধানও বাসাতেই করা সম্ভব অনায়াসেই। ভোগবাদী আমাদের ড্রেসের ক্যাটাগরিও বহুবিধ- থিপিস, টুপিস, জিন্স ফতুয়া, টপ স্কার্ট, লেহেঙ্গা, ম্যাক্সি, টিশার্ট, আর নানা ধরনের নানা ফেব্রিক্সের শাড়ি তো আছেই। এসব সবার আলমিরা, ওয়ারড্রোব ভরা আছে, হ্যাঁ হ্যাঁ ভর্তি আছে। তা ছাড়া ঈদের দিন সেজেগুজে দামী ড্রেস পরে যাবেন কই! আসবে কে! যারা নানা শপিংমলে গুড়ের পিঁপড়ার মতো উথলাচ্ছে করোনায় যদি কেবল তারাই আক্রান্ত হতো, তাহলে মানুষের আলমিরা ভরা কাপড়ের হিসাব কষতে আমি বসতাম না। আরে নির্বোধগুলো নিজে মরবে তো মরবে, আরও দশঘর নিয়ে মরবে। সত্যি বড় আজব আর উন্মাদ জাতি আমরা!’ কুকুর টানাহেঁচড়া করছিল নবজাতকের লাশ এমন শিরোনামের একটি সংবাদ পড়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনের ফুটপাথ থেকে পুলিশ নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশ বলছে, নবজাতককে নিয়ে কুকুর টানাহেঁচড়া করছিল। উদ্ধার করতে যাওয়ার সময় কুকুর পুলিশকে নবজাতকের কাছে যেতে দিচ্ছিল না। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। নবজাতকটি মেয়েশিশু। চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ইসিজি করে নবজাতককে মৃত বলে নিশ্চিত করা হয়। এর আগে আমরা একাধিকবার এ জাতীয় সংবাদ পড়েছি। যেমন, পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে বিড়ালের টানাহেঁচড়া, খুলে মিলল নবজাতক। ময়লার মধ্যে পড়ে থাকা পলিথিনের ব্যাগ থেকে জীবন্ত নবজাতককে উদ্ধার করার সংবাদটি ভুলিনি। ব্যাগটি নিয়ে একটি বিড়াল টানাহেঁচড়া করছিল। ঢাকা শহরে এ ধরনের ঘটনা ঘটে অনেক, যার সবগুলোই গণমাধ্যমে আসে না। ডাস্টবিনে কাপড়ে জড়ানো নবজাতকের লাশ পাওয়ার একটি সংবাদ এসেছিল কিছুকাল আগে। অনেক সময় দেহ শেয়াল কুকুরের খাদ্যও হয়। মনে আছে অনেকরই হয়ত, রাজধানীর ভাটারায় একটি পারিবারিক গোরস্তান থেকে এক নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশটি একটি গেঞ্জি দিয়ে মোড়ানো ছিল। নবজাতকটির হাত, নাক ও মুখের মাংস কুকুর বা অন্য কোন প্রাণীর পেটে যায়। এই নিষ্ঠুর রাজধানীতে কিছুকাল পরপরই আমরা এমন নবজাতক হত্যার খবর শুনি। একবার মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকার ন্যাম ভবনের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন নর্দমার পাশ থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সদ্য জন্মগ্রহণের চিহ্নসহ লাশটি ছিল একটি কাগজের কার্টনে। শিশুটি পৃথিবীতে কি মৃত হিসেবেই এসেছিল, নাকি জন্মের পর মারা গেছে? মারা গেছে, নাকি মেরে ফেলা হয়েছে! এমন আরও কিছু শ্রাব্য-অশ্রাব্য কথাবার্তা কি খুব অসঙ্গত বলে মনে হবে? এ কথা আমরা কী করে ভুলব যে, প্রতিটি নতুন শিশুর জন্মগ্রহণের নেপথ্যে রয়েছে এক জোড়া মানব-মানবী। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, তারা জনক-জননী। অথচ তাদের অনেকেই তাদের সন্তানের জন্মক্ষণেই পরিত্যাগ করেন, তার মৃত্যুই চান! নিজেদের রক্ষার জন্য নিজ সন্তানের মৃত্যু! কিসের রক্ষা? লোকলজ্জার ভয় থেকে? এই পৃথিবীতে যত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে সেসবের মধ্যে একমাত্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব সদ্যজাত সন্তানকে মৃত্যুপুরিতে নিক্ষেপ করা। একটি হায়েনা কিংবা একটি কুকুর বা কোন শকুন কি কখনও তার সদ্য জন্মগ্রহণকারী শাবকটিকে ছুড়ে ফেলে! ঢাকায় নর্দমায় বা গোরস্তানে নবজাতককে ফেলে দেয়ার বিষয়টিকে আমরা উপেক্ষা করে যেতে পারি না। এটি স্বার্থপর মানুষের এক অজ্ঞাত মানসিক অবস্থা, তার চূড়ান্ত বিকার। এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে! যে নগরে বা যে সমাজে মানুষ তার সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানকে অস্বীকার ও নোংরা ন্যাকড়ার মতো পরিত্যাগ করতে পারছে, সেই নগর বা সমাজেরও কি কোন দায়ভাগ নেই এতে? কালক্রমে সদ্যমৃতের তালিকায় উঠে যাচ্ছে মানুষের বিবেক, তার মনুষ্যত্ব। শহরের নিঃশব্দ আর্তনাদ নিষ্ঠুর ও ইঁদুরদৌড়ে ব্যতিব্যস্ত মানুষের কানে কি পৌঁছোয়? ঝুলন্ত তারে ঝুল খাওয়া মে দিবসে ছুটির দুপুরে বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় ঝুলন্ত তারের জঞ্জালে ঝুল খাচ্ছিল পথশিশু ও বস্তির ছেলে-মেয়েরা। এক, দুই, তিন করে চার-চারজন সেই তারে ঝুল খেল দোলনার মতো করে। তাদের যে কী আনন্দ। অথচ এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, সেটি তারা দিব্যি ভুলে গেছে। ঢাকা মহানগরজুড়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের গ্রাহকদের সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা একটি পুরনো সমস্যা। ঢাকা মহানগরের পাড়া-মহল্লা, বাণিজ্যিক এলাকাসহ সর্বত্র ঝুলন্ত তারের জট-জঙ্গলের যেসব দৃশ্য দেখা যায়, তা সভ্য দুনিয়ার কোন দেশের রাজধানীর চিত্র হতে পারে না। কিন্তু আমাদের রাজধানীতে এ সমস্যা সমাধানের কার্যকর ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ কখনোই নেয়া হয়নি। অবশ্য বিদ্যুত বিভাগ এসব ঝুলন্ত তার সরানোর বিষয়ে কথা বলে আসছে বহু বছর ধরে। অন্তত ২০১০ সাল থেকে তাদের এ চেষ্টার কথা শোনা যায়, কিন্তু তা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঝুলন্ত তার অপসারণের অভিযান শুরু করেছিল। সেটি নানা বাধায় বেশিদূর এগায়নি। বলা হয়েছে, ইন্টারনেট ও ক্যাব্ল টিভি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী নবেম্বর মাসের মধ্যে এসব সংযোগের তার মাটির নিচে নিয়ে যেতে হবে। গত অক্টোবর থেকে ইতোমধ্যে ৭ মাস চলে গেছে। আগামী ৫ মাসের মধ্য কি ঢাকা ঝুলন্ত তারের জঞ্জালমুক্ত হবে? তার কোন লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না। ০২ মে ২০২১ [email protected]
×