ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে শিবচরে নৌ দুর্ঘটনা

মায়ের লাশ দেখতে গিয়ে আদুরী ফিরলেন স্বামী-সন্তানের লাশ নিয়ে

প্রকাশিত: ১৯:০১, ৩ মে ২০২১

মায়ের লাশ দেখতে গিয়ে আদুরী ফিরলেন স্বামী-সন্তানের লাশ নিয়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসে কাঁদছিলেন ৩৫ বছর বয়সী আদুরী বেগম। তাঁকে সান্ত্বনা দেয়ার কেউ নেই। স্বজন হারানোর কান্না থামছেই না। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে স্পিডবেট দুর্ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী তিনি। দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী আরজু মিয়া (৪০) ও দেড় বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন প্রাণ হারিয়েছে। আদুরীর বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাইগ্রো গ্রামে। স্বামী– সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকার হাসনাবাদে। রবিবার রাতে আদুরীর মা মনোয়ারা বেগম মারা যান গ্রামের বাড়িতে। মায়ের লাশ দেখতে স্বামী–-সন্তান নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার সকাল ৬টার দিকে ৩২ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট শিমুলিয়া ঘাট থেকে শিবচরের বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করা বালুবোঝাই বাল্কহেডে ধাক্কা খায় স্পিডবোটটি। ঘটনাস্থলেই ২৬ যাত্রী প্রাণ হারান। স্থানীয় লোকজন পাঁচ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। উদ্ধারকারীরা লাশ উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ির ইয়াছিন মাদবরকান্দি গ্রামের দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখেন। মৃত ২৬ জনের মধ্যে আছেন আদুরির স্বামী ও ছেলে। আর জীবিত উদ্ধার হন আদুরি। সকাল ১০টার দিকে আদুরি স্বামী-সন্তানের খোঁজে ছুটে যান নদীর পাড়ে। সেখানে কাউকে না পেয়ে যান দোতরা স্কুলের মাঠে। স্বামী–-সন্তান নেই জেনে তাঁর কান্না আর থামছিল না। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে যান আদুরির দুই চাচা ও ফুফু। তাঁরা লাশের সারি থেকে আদুরির স্বামী আরজু মিয়া ও ছেলে ইয়ামিনকে শনাক্ত করেন। আদুরির চাচা বলেন, ‘মায়ের লাশ দেখতে যাচ্ছিল মেয়েটি। এখন স্বামী-সন্তানের লাশ নিয়ে তাকে ফিরতে হচ্ছে। আমরা কী বলে সান্ত্বনা দেব ওকে? বাড়িতে একটি কবর খুঁড়ে এসেছি। ফোনে আরও কবর প্রস্তুত করতে বলেছি। বিধাতা কেন এমন করল!’ আদুরি কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ঢাকায় আটকা পড়েছিলাম। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রামে যাচ্ছিলাম। দেড় বছরের ছেলে আমার কোলে ছিল। স্পিডবোটটি অতিরিক্ত গাদাগাদি করে ছাড়ে। চলছিল অতিরিক্ত গতিতে। আমি এক হাতে ছেলেকে ও আরেক হাতে স্বামীকে ধরেছিলাম। হঠাৎ সজোরে ধাক্কা লাগে। আমরা সবাই ছিটকে পড়ি। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে গিয়ে শুনি, আমার সব শেষ।
×