ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একগুঁয়েমী ॥ শতাধিক কৃষকের আড়াইশ’ বিঘা জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ৩ মে ২০২১

নওগাঁয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একগুঁয়েমী ॥ শতাধিক কৃষকের আড়াইশ’ বিঘা জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় পল্লীবিদ্যুত সমিতির একগুঁয়েমীর কারনে পানি সেচ দিতে না পারায় শতাধিক কৃষকের প্রায় আড়াইশ’ বিঘা জমির বোরো ধান সম্পূর্নভাবে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বিল পরিশোধ করে আবেদন করার পরও এলএলপি লাইনে সংযোগ না দিয়ে মিটার খুলে নিয়ে যায়ওয়ার ফলে জমিতে সেচ দিতে পারেনি কৃষক। ফলে এসব জমির ধান সম্পূর্নভাবে পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। যেখানে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মন ধান উৎপাদিত হওয়ার কথা, সেখানে মাত্র ৩ থেকে ৪ মন ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন। অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। ধানের এই অবস্থা দেখে একজন কৃষক মাঠেই হার্ট ফেল করে মৃত্যুবরন করার ঘটনাও ঘটেছে। সরেজমিন জানা গেছে, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নে দর্শনগ্রামের মহাতাব উদ্দিনের একটি এলএলপি কানেকশন রয়েছে। পল্লী বিদ্যুত সমিতির নিকট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে আত্রাই নদী থেকে এলএলপি’র মাধ্যমে পানি নিয়ে দর্শনগ্রাম মাঠে শতাধিক কৃষকের প্রায় আড়াইশ’ বিঘা জমির ধান চাষ করা হয়। মার্চ মাসে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারনে পানি বন্ধ করে দিয়ে মিটার খুলে নিয়ে যায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বকেয়া বিদ্যুুৎ বিল পরিশোধ করার পর পুনরায় মিটার স্থাপনের আবেদন করেন উক্ত মহাতাব হোসেন। কিন্তু পাশের এলএলপির ম্যানেজার জনৈক আজাহার আলীর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে। এখন আজাহার আলীর বকেয়া বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত এই প্রকল্পেও সংযোগ দেয়া হবেনা বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এখন আজহারের দায়ভার এই এলএলপির ওপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে মহাতাব উদ্দিনের আওতাভুক্ত কৃষকরা পানির জন্য তাকে চাপ দিতে থাকে। কারন ওইসব জমিতে আরও কমপক্ষে ৩টি সেচ প্রয়োজন। সেচের অভাবে এসব জমির ধান মরে যেতে শুরু করে। কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েন। প্রায় এক মাস ধরে জমিতে সেচ দিতে না পারায় এসব জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়ে। জমির ধান কাটতে গিয়ে আপাতদৃষ্টে পাকা মনে হলেও বাস্তবে সব ধান চিটা হয়ে গেছে। কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমন কি এই জমিগুলোর মধ্যে এক বিধবার একমাত্র সম্পত্তি রয়েছে যা সম্পূর্নভাবে পুড়ে গেছে। নিঃস্ব এই বিধবার দিন কি ভাবে চলবে তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিনি। এ ছাড়াও দর্শনগ্রামের জনৈক শামসুল আলম নামে এক ব্যক্তি সম্প্রতি জমিতে গিয়ে একমাত্র সম্বল এই ধানের অবস্থা দেখে জমিতেই হার্টফেল করে মৃত্যু বরন করেন। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর স্বাভাবিক ভাবে মাঠের অন্য জমিগুলোতে বিঘা প্রতি ২৮ থেকে ৩০ মন ধান উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৩ থেকে ৪ মন ধান তাঁরা ঘরে তুলতে পেরেছেন। ফলে এই শতাধিক কৃষক সম্পূর্নভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের চাপে বার বার আত্রাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে ধর্না দিয়েছেন এল এল পি’র ম্যানেজার মহাতাব উদ্দিন। সমিতির কর্মকর্তারা তার নিকট বকশীষ দাবী করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। বকশীষ ছাড়া সংযোগ দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
×