ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দাউদকান্দির ভূট্টার বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ৩ মে ২০২১

দাউদকান্দির ভূট্টার বাম্পার ফলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি ॥ কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। এখন চলছে ভুট্টা সংগ্রহের কাজ। বর্তমানে ভুট্টার বাজার দর মন প্রতি দাম ৭৮০ টাকা বলে ভুট্টা আড়ৎদাররা জানায়। ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা জেলায় প্রথম দাউদকান্দিতে ঢাকা থেকে ভূট্টার বীজ এনে প্রথম চাষ শুরু করেন উপজেলার হাসানপুর গ্রামের কৃষক খোকন প্রধান। তখন ভূট্টা শুধু কয়লায় পুড়ে-তৈল দিয়ে ভেজে খাওয়ার জন্য জমি থেকেই ১/২টা করে কিনে নিয়ে যেত ক্রেতারা। তিনি প্রথম মাত্র ১৫শতক জমিতে ভূট্টা চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরই তার খরচ বাদ দিয়ে ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। তার পরের বছর তিনি ৩ একর জমিতে ভূট্টার চাষ করেন। তখন তার একটি মুরগীর ফার্ম ও দুই টি মাছ চাষের পুকুর ছিল। তখন সে বিক্রির পাশাপাশি ইলেকট্রিক মেশিনে ভূট্টা ভাঙ্গিয়ে গমের সাথে মিশিয়ে মুরগির ও মাছের খাবারের চাহিদা পূরন করত। ঐ বছরই তার ব্যাপক সাফল্য দেখে অন্য কৃষকরা ও আলু চাষের পরে ভূট্টার চাষ শুরু করে। কিছু জমিতে ভূট্টার আগাম চাষ করলেও সে জমিতে অন্য ফসল করা যায় না শুধু পাট ছাড়া আর পাট চাষে সফলতা না পেয়ে কৃষকরা পাট চাষ করে না। তাই আলু,সরিষা ও গম এর পরেই ভূট্টার চাষ করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভবান কৃষকরা। আর তাই দাউদকান্দির কৃষকদের সবচেয়ে পছন্দের ফসল ভূট্টা। কৃষকরা জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ৩০শতক জমিতে ভূট্টার ফসল তুলে বিক্রি করা পর্যন্ত খরচ হয় ৫-৬ হাজার টাকা। প্রতি মণ ভূট্টা ৫০০শত থেকে ৮০০শত টাকা দরে বিক্রি করা যায়। যার আনুমানিক মূল্য দাড়ায় ১৫ হাজার থেকে ২০হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা আয় হয়। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। যাদের সেচ দেওয়ার উপায় ছিল তারা খরচ একটু বেশি হলেও পানি দিয়ে ভালো ফলনই ফলিয়েছে, আর যারা পানির ব্যবস্থা করতে পারেনি তাদের ভূট্টার মুছি ছোট ফলন একটু কম হলেও এ বছর কোনো ঝড়ে কোন ক্ষতি না হওয়ায় মন খারাপ নেই তাদেরও। কৃষকেরা জানায়,সার বীজ চাষসহ একই খরচে ভুট্টার পাশাপাশি আন্যান্য ফসলাদি ও চাষ করা যায়। কৃষি অফিস সূএে জানা যায়,উপজেলার হাসানপুর,দাউদকান্দি সদর উওর ইউনিয়ন,বারপাড়া,সুন্দলপুর,গোয়ালমারী,মালিগাঁও ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ বেশী হয়েছে। পৌরসভার হাসানপুর ও দাউদকান্দি সদর উওর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রাম গুলোর বাড়ির উঠানে ভুট্টা আর ভুট্টা নিয়ে কিষান- কিষানিরা ভুট্টা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ফসলের জমিতে গিয়ে ভুট্টা সংগ্রহ করছেন। কেউ জ¦ালানির জন্য ভুট্টাগাছ,ভুট্টার মোচা, ভুট্টার ছোবড়া সংগ্রহ, কেউ আবার ভুট্টা শুকাচ্ছেন। হাসানপুর গ্রামের বশির আহমেদ বলেন,ভুট্টা চাষের ফলে পরিবারের রান্নার জন্য তার জালানি খরচও বাঁচবে। দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সারোয়ার জামান জনকন্ঠকে জানান, চলতি বছর দাউদকান্দি উপজেলায় ৭ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। গত বছর ভুট্টার চাষ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১শত ৩০ হেক্টর জমিতে বেশী ভুট্টা চাষ করা হয়। করোনাকালীর আবহাওয়া অনুকুলে তাকায় প্রতি ৩০শতাংশ জমিতে ৩০ থেকে ৪০ মন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ভুট্টা আগাম চাষ করতে পারলে এবং ব্যবস্থাপনা ভাল হলে বাম্পার ফলন পাওয়া সম্ভব।
×