ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাছে গাছে পাকছে লিচু, দামে হতাশ ক্রেতা

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৩ মে ২০২১

গাছে গাছে পাকছে লিচু, দামে হতাশ ক্রেতা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর গাছে গাছে গ্রীষ্মের সুমিস্ট ও রসালো ফল লিচু পাকতে শুরু করায় বাজারেও এসে গেছে। চাষীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে এ বছর লিচু উৎপাদন কম হবে। কৃষিবিদ এবং কৃষি বিজ্ঞানীরাও এমন তথ্যই দিয়েছেন। এদিকে এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে লিচু। অনেকটা অপরিপক্ব এসব লিচু খেতে কিছুটা টক হলেও রঙিন এই লিচু দেখে ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছেন। রবিবার নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে প্রথম লিচু এনেছেন ব্যবসায়ী মনির হোসেন (৫২)। লিচু এনে ভ্যানের ওপর থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। মনির হোসেন বলেন, ‘বাজারে ওঠা প্রথম লিচু হওয়ায় এখন প্রতি ১০০ লিচুর দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। দেশী জাতের লিচুগুলো একটু টক ও হাল্কা মিষ্টি। টসটসে মিষ্টি লিচু আসবে কিছু দিন পর। আর কয়েকদিন পর বিভিন্ন উন্নত জাতের লিচু বাজারে পাওয়া যাবে। তখন বিভিন্ন জাতের লিচু উঠলে দামও কিছুটা কমবে। তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না, কাঁঠালি বোম্বাই কোনটাই এখনও বাজারে আসেনি। এসব লিচু বেশ সাইজের বড় হয়ে থাকে, প্রচুর রসালো ও খেতে মধুমিষ্টি। তবে করোনার কারণে চাষীরা লিচুতে তেমন লাভ করতে পারবে না। লকডাউনে লিচু বিক্রি না হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।’ মৌসুমের প্রথম লিচু দেখে ভিড় করা কয়েকজন ক্রেতার মধ্য থেকে মোঃ রুবেল বলেন, ‘প্রতি ১০০ লিচুর দাম নিচ্ছে ৪০০ টাকা করে। রাজশাহীর বাজারে আজই প্রথম বিক্রি করতে দেখছি। মৌসুমের প্রথম ফল বাজারে আসায় দামটা একটু বেশি। তবে অন্যান্য জাতের লিচু বাজারে উঠলে দাম কমে যাবে।’ এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ফলন বেশি ছিল বলে গাছে এবার এমনিতেই কম লিচু ধরেছে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, গতবছর গাছে প্রচুর লিচু ধরেছিল। তাই এ বছর এমনিতেই লিচু কম ধরার কথা। এর ওপরে এবার ফুল থেকে গুটি আসা পর্যন্ত নানারকম বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়েছে লিচুগাছ। তাই ফলন হবে কম। তিনি জানান, লিচুর ফুলের পরাগায়নের সময় তাপমাত্রা কম থাকা প্রয়োজন। কিন্তু শীত শেষে হঠাৎ করে গরম পড়ে গেছে। এর কয়েকদিন পর হঠাৎ একটানা কয়েকদিন ভোরে কুয়াশা পড়েছে। ফলে পরাগায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আবার খরা চলছে। বৃষ্টির পরিমাণ খুব কম। এতে গুটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড. আবদুল আলীম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লিচু হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে। সেখানেও এবার লিচুর অবস্থা ভাল না। উৎপাদন কম হবে বলে বাজারে লিচুর দাম বেশি থাকবে। লিচুর ফলন কম হতে পারে বলে স্বীকার করেছেন রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়ালও। এ জন্য তিনি আরও একটি কারণ জানিয়েছেন। কৃষিবিদ আবদুল আউয়াল বলেন, এবার হঠাৎ করেই শীত শেষ হয়ে গেছে। লিচুর ভাল পরাগায়নের জন্য ১২০ ঘণ্টা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তারও কম তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই সময়টা এবার পাওয়া যায়নি। গরম শুরু হয়ে গেছে। আবার গরমের মধ্যেই কুয়াশা পড়েছে। এসব বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর উৎপাদন কম হবে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচুগাছ রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে। কিন্তু সেটি এবার পূরণ নাও হতে পারে। এখন গাছে থাকা লিচুর গুটি যেন ঝরে না পড়ে তার জন্য চাষীদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আরেক লিচুচাষী আফসার আলী জানান, লিচুর গুটি টেকাতে ফল গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী ৭ থেকে ১০ দিন পর পর গাছের গোড়ায় পানি দিয়েছেন। কয়েক প্রকার ওষুধও দিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তবে এবার গাছে পোকার আক্রমণ কম বলেও জানান এই চাষী। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা বাগান ঘুরে দেখেছি কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম। তাই প্রথম দিকে লিচুতে আমের মতো রুটিন স্প্রে করা লাগেনি। কিন্তু আবহাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়ে গেছে শুরুতে। এখন আবার খরা চলছে।
×