ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জটিল মামলার সহজ সমাধান দিচ্ছে সিসি ক্যামেরা

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১ মে ২০২১

জটিল মামলার সহজ সমাধান দিচ্ছে সিসি ক্যামেরা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কারণে অপরাধীদের এখন অনেক সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। রহস্যঘেরা জটিল মামলার সহজ সমাধান দিয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। তাই সিসি ক্যামেরার বদৌলতে পাওয়া এমন সফলতার অনেক গল্পই এখন জমেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ঝুড়িতে। অভিযোগ তদন্তেও ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে সিসি ক্যামেরা। মহানগরে ছিনতাই ও বখাটেদের অনেক অপতৎপরতাও রুখে দিতে পারছে পুলিশ। গেল বছরের ১০ আগস্টের ঘটনা। ওইদিন সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরের ব্যস্ততম মনিচত্বর এলাকায় স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে যৌন হয়রানি করে বখাটেরা। এতে বাধা দিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষক। স্ত্রীর এ ঘটনায় রুয়েট শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম থানায় অভিযোগ না করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। পুলিশ তার ওই স্ট্যাটাস দেখে নিজে বাদী হয় জিডি করে। পরে পুলিশের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার ৫ দিনের মাথায় ১৬ আগস্ট শিক্ষকের স্ত্রী তাবাসুম ফারজানা বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং সবাইকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। পরে তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। আর এ সিসি ক্যামেরার সাহায্যেই মহানগরের হেতেমখাঁ এলাকায় কলেজছাত্র খুনের রহস্য উদ্ঘাটন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজনকে পুলিশ গ্রেফতার ও এরপর রুয়েটের এক ছাত্রী অটোরিক্সায় লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় মহানগরে বসানো এ সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরেই। এজন্য পুরো রাজশাহী মহানগর এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা মহানগর এলাকাজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিসি ক্যামেরা (ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা) বসানোর কাজ শেষ হলে অপরাধীরা আর অপরাধ সংঘটিত করে পার পাবে না। মহানগরজুড়ে চুরি-ছিনতাই, যৌন হয়রানি ও খুনসহ যেকোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ ও দমনে পুলিশের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে এ সিসি ক্যামেরা। অপরাধ প্রবণতা কমাতে তাই পুরো শহরজুড়ে ৫০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহানগরের নিরাপত্তা ও পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৬৫টি ক্যামেরা বসিয়েছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হয়েছিল ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এ ৬৫টি ক্যামেরার মাধ্যমেই পুলিশ নজরদারি শুরু করে। এর আগে মহানগর পুলিশের উদ্যোগেও আটটি পয়েন্টে ১৬টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। কিন্তু রাজশাহী মহানগরের ওইসব সিসি ক্যামেরার অধিকাংশই অকেজো হয়ে যায়। এরপর থেকে মহানগর পুলিশের সদর দফতরে সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খুন, চুরি-ছিনতাই ও সড়কে যৌন হয়রানিসহ সব অপরাধমূলক কর্মকা- রোধে মহানগরজুড়ে এবার ৫০০ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে ৩০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সমস্যারও দ্রুত সমাধান পেয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের অপারেশন কন্ট্রোল এ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার গঠন করা হয়েছে। সেখানে সেন্ট্রাল সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোল ইউনিট নিরবচ্ছিন্নভাবে মহানগর এলাকা মনিটরিংয়ের কাজ করছে। যার সুফল পেতে শুরু করেছেন রাজশাহী মহানগরবাসী। সবগুলো সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হলে রাজশাহী মহানগরের সব অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণে এ ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন আরএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর মাধ্যমে আগামীতে রাজশাহী একটি নিরাপদ মহানগর হবে উল্লেখ করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ও অপারেশন কন্ট্রোল এ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের ইনচার্জ উৎপল কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, যতই সময় যাচ্ছে সমাজে অপরাধের ধরণ পাল্টাচ্ছে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। যার সুফলও বইতে শুরু করেছে। তিনি জানান, অনেক রহস্য ও চাঞ্চল্যঘেরা ঘটনা সহজেই সমাধান করা যাচ্ছে। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১২ মার্চ মহানগরের ষষ্ঠীতলা মহল্লায় এক ব্যক্তির ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তাদের হামলার সেই দৃশ্য ধরা পড়ে পাশে থাকা সিসি ক্যামেরায়। এরও আগে মহানগরের বাইপাস সড়কে পুলিশ সার্জেন্টের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পরে অপরাধী শনাক্ত করা হয়। এভাবেই রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে গঠিত অপারেশন কন্ট্রোল এ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের সুফল পেতে শুরু করেছে সবাই। রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মোঃ গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, যেকোন সময় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে ভুক্তভোগীর পক্ষে মামলা করে, আসামি শনাক্ত করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে। কারণ প্রযুক্তিগতভাবে রাজশাহী মহানগর পুলিশ এখন আগের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। কেউ কোন অপরাধ ঘটালে তা সঙ্গে সঙ্গে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ছে। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি নজরদারিতে রাখছেন উর্ধতন কর্মকর্তারা। এর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি চলছে। নজরদারির মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। তাই কেউ আর অপরাধ করে পালাতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেন পুলিশের এ উর্ধতন কর্মকর্তা। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, শিক্ষানগর হিসেবে রাজশাহীর বেশ পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু এখানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধও সংঘটিত হয়। তাই অপরাধ প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নামাতে পুরো রাজশাহী মহানগর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। এরইমধ্যে ৩০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুত স্থাপন করা হবে।
×