ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে কর্মহীনদের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১ মে ২০২১

বরিশালে কর্মহীনদের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইজিবাইক, রিক্সা, বাসসহ সকল প্রকার যানবাহন, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বরিশালের কয়েক হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে অধিকাংশ পরিবারে অনাহারে দিন কাটছে। ওইসব পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য বিরামহীন চেষ্টা করে আসছেন জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে (২৭ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঠানো ২০ লাখ টাকা দিয়ে বরিশালের কর্মহীন সহস্রাধিক খেটে-খাওয়া দিনমজুর পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দুস্থ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সাহায্য সামগ্রী দেয়ার কথা জানিয়ে বরিশালের চৌকস জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার হিসেবে এসব সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কঠিন সময়ে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও চলমান সঙ্কটাবস্থায় অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে তিনি ভুলেননি। বরিশাল নদীবন্দরে খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ প্রায় তিন শতাধিক অসহায় মানুষককে গত ২৫ এপ্রিল রাতে নিজ হাতে তিনি খাবারের প্যাকেট তুলে দিয়েছেন। তার এই মহান আচারণে নগরবাসীর কাছে প্রশংসায় ভাসছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। যা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে এখনও চলমান রয়েছে। দেশের এ মহামারী দুর্যোগের সময় সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়াবেন, এমন প্রত্যাশা জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দারের। এনডিসি নাজমুল হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, গত ২৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে নগরীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী হিসেবে এক হাজার পরিবারের প্রত্যেকের মাঝে ৮ কেজি করে চাল, ১ কেজি করে ডাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ এবং ১ লিটার সয়াবিন তেল বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ জন ফটো সাংবাদিকদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ করা হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দারের সভাপতিত্বে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে। আগতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার করে চলাফেরা করবেন, পাশাপাশি সবাই ঘরে থাকবেন প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন। জেলা প্রশাসন আপনাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেবে। করোনার চলমান দুর্যোগের সময় জেলা প্রশাসকের হাত থেকে খাবারের প্যাকেট পেয়ে বেজায় খুশি হয়ে নগরীর বাসিন্দা আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, আগে ভিক্ষা করতাম। করোনার কঠিন সময় মানুষ ভিক্ষা দেয় না। ভাত খামু কেমনে। শুনেছি লঞ্চঘাটে প্রতিদিন রাতে ডিসি স্যার খাবার দিচ্ছেন। তাই শুনে খাবার নিতে আইসা ডিসির নিজের হাতে দেয়া খাবার পাইছি। আমাগো মতো গরিবদের পাশে সবসময় যেন ডিসি স্যারে থাকতে পারেন সেই দোয়া করছি। সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা শাখার সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা জনকণ্ঠকে বলেন, অসহায়দের সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসকের এগিয়ে আসা এক প্রকার মানবিকতার অনন্য উদাহরণ। আমরা সবাই এ রকম ভাসমানদের পাশে দাঁড়ালে অসহায়দের দুঃখ থাকবে না। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা যদি সবাই মিলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই তাহলে কেউ না খেয়ে থাকবে না। ভাল কাজে সবসময়ই জেলা প্রশাসন পাশে থাকবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গরিব অসহায় মানুষের প্রতি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ কার্যক্রম করোনা যতদিন থাকবে ততদিন চলবে। সূত্রমতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর পরপরই পুরো জেলাবাসীর মধ্যে সতর্কতা আর সচেতনতা সৃষ্টিতে মাঠে নামেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সেই শুরু থেকে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের প্রাণপণ চেষ্টা পুরো বরিশালবাসীকে বিস্মিত করেছে। তার নির্দেশে জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১০টি উপজেলার নির্বাহী অফিসারগণ দিন-রাত সমানভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছেন। জেলাব্যাপী পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এবং করোনা প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশ শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সকল কার্যক্রমের তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। তিনি (জেলা প্রশাসক) জেলার কর্মহীন অসহায় পরিবারের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে সকলকে ঘরে থাকার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি সমাজের বিত্তবানদের দরিদ্র, অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেছেন।
×