ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিউলি আহ্মেদ

মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৬ এপ্রিল ২০২১

মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা

‘বৈশাখ’-শব্দটা উচ্চারিত হতেই আনন্দ-উৎসবে ভরপুর রঙিন একটি পরিবেশ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ঢাক-ঢোল, গান-বাজনা আর বৈশাখী মেলায় মুখরিত চারপাশ!’ মনের মধ্যে খুশির হাজারটা প্রজাপতি ডানা মেলে- কখন মেতে উঠবে বৈশাখী উৎসবে! ৪৩৫ বছর আগে, মোঘল সম্রাট আকবর, খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে, তাঁর সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লা শিরাজীর সহযোগিতায়, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ থেকে ‘তারিখ-এ-এলাহি’ নামে নতুন একটি বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন। কৃষকদের কাছে এটি ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত হয়। যা পরে ‘বঙ্গাব্দ’ বা ‘বাংলা সন’ নামে প্রচলিত হয়ে ওঠে। তবে বাংলা সন শূন্য থেকে শুরু হয়নি। যে বছর বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়, সে বছর হিজরী সন ছিল ৯২৩ হিজরী। সে অনুযায়ী সম্রাটের নির্দেশে প্রবর্তনের বছরই ৯২৩ বছর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বাংলা সনের। বাংলা বর্ষের মাসগুলোর নামকরণ হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামে। বৈশাখ একান্তই বাঙালীর উৎসব। প্রাণের উৎসব। এদিন নানা আয়োজনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বাঙালীরা মেতে ওঠে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে। ব্যবসায়ীরা হালখাতা খুলেন, খই, মুড়ি-মুড়কি মিষ্টি-বাতাসা বিতরণ করা হয়। সারা বাংলা জুড়ে উদযাপিত হয় এই উৎসব। ভোরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ দিয়ে শুরু হয় ঢাকার বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুখরিত থাকে পুরো দেশ। লাল-সাদা শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে নিজেদের রাঙিয়ে নেয় ছেলে-মেয়ে-বুড়ো, এমনকি শিশুরাও। ফুলের গয়না পরে একেকজন হয়ে ওঠে অপরূপ। শুধু গান-বাজনা নয়, সভার এমন সাজ-সজ্জা দেখেও মন আর চোখ জুড়িয়ে যায়। গ্রামাঞ্চলে চলে মেলা, নাগরদোলার কচকচ শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ। আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় লাগে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। এক সময় আমিও স্বদলবলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্র সরোবর, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন জায়গায় সুরের তালে বাংলা নববর্ষকে বরণ উৎসবে মেতেছি। অনেকদিন এসব থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও পয়লা বৈশাখ এলেই সুর-তাল-লয় আমায় শিহরিত করে। বের করে নিয়ে যায় নতুন বর্ষকে বরণ করতে। লাল-সাদা শাড়ি পরে একাই চলে যাই প্রাণের উৎসব বৈশাখ বরণ দেখতে। মাথায় ফুলের টায়রা পরে দোয়েল চত্বর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, শাহবাগ, রমনা ঘুরে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি। আর গত বছর মহামারী করোনার প্রভাবে পুরো পৃথিবী মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছিল। তবু এত আতঙ্কের মাঝেও বাঙালীরা ঘরে বসেই নিজেদের মতো করে ছোট্ট পরিসরে পহেলা বৈশাখকে বরণ করেছিল। পান্তা-ইলিশ, বিভিন্ন ভর্তা-ভাজি দিয়ে যার যার মতো আয়োজন করেছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়েও পড়েছিল। হয়েছিল নানা আলোচনা সমালোচনা। এ বছরও পরিবেশ পরিস্থিতি তেমনি হয়ে আছে। জানি না আবার কবে পৃথিবী স্বাভাবিক হবে! জানি না কবে আবার বাঙালী স্বাচ্ছন্দ্যে মেতে উঠবে বৈশাখী উৎসবে! কবে আবার নববর্ষে বর্ণিল হবে বাংলা! তবে বাঙালী বড় স্বপ্নপ্রিয়, বড় আশাবাদী। তাই আশায় বুক বেঁধে থাকে।
×