ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় জীবন যেমন...

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৬ এপ্রিল ২০২১

করোনায় জীবন যেমন...

করোনায় পুরো পৃথিবীজুড়ে ভিন্ন রকম দৃশ্য। বদলেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রুটিন। আগের মতো ঘটা করে নেই কোন আয়োজন। চারপাশে নিস্তব্ধতার উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয় স্মৃতিময় প্রাণোচ্ছ্বল মুহূর্তগুলো। ঘরবন্দী জীবনে কেমন কাটছে? বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানাচ্ছেন -রুমান হাফিজ অল্পতেই ভাল থাকার অভ্যাসে সুখ রয়েছে বলে মনে করেন ফাইজুন নাহার সিফাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের এই শিক্ষার্থীর মতে, প্রথম বছরটা তো চারপাশের অবস্থা বুঝে উঠতে উঠতেই কেটে গেল। কী হচ্ছে, কী হবে সেসব ভেবে কোন যুতসই উত্তর মিলত না। এরমধ্যে আমরা নানা ধরনের দুর্যোগ পেরিয়ে এসেছি, আবার আশার কথাও শুনেছি। তবে বিস্মিত হয়ে থাকবার সুযোগ এখন আসলে খুব বেশি নেই। এখন প্রশ্নটা বোধহয় সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার। অনেক পরিকল্পনাই তো আগের মতো বাস্তব করে তোলা যাবে না, তার চেয়ে বরং যা আছে সেটুকুর মধ্যেই আশ্রয় খুঁজি। জীবন না হয় একটু ধীরে ধীরেই এগোতে থাকুক। এটুকুই চাওয়া। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ফারিহা। তিনি বলেন, কখনও যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম ছাড়া ক্লাস করতে হবে আগে ভাবিনি। করোনাকালীন জীবনযাপনের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কাটছে অনলাইন ক্লাসে। এছাড়াও বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একঘেয়ে সময় উপভোগ করতে পারছি। বিশ্বের বিভিন্ন নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার করা ফ্রি অনলাইন কোর্স করার মাধ্যমে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ করে তুলতে পারছি। তবে করোনার মন্দের ভাল এই যে আমাদের কাছের মানুষের যতœ নেয়া ও তাদের মূল্য অনুধাবন করতে শিখিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা । অবসরটাকে কাজে লাগাচ্ছেন নানা সৃজনশীলতায়। এরমধ্যে বই পড়া বেশি হচ্ছে এমসি কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। সানজিদা জাহিন প্রিমার। বলছিলেন, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে; তাই প্রায়শই মনের কোণে বিষণœতা হানা দেয়। যেহেতু পড়াশোনারও তেমন চাপ নেই তাই অনেকেই নিজের ভাললাগার জায়গায় কাজ করছে, দক্ষতা উন্নয়নে সময় ব্যয় করছে; আমিও ব্যতিক্রম নই। অনলাইনভিত্তিক কাজে মনোযোগ দিচ্ছি, বই পড়ার অভ্যাসটাকে আরও চাঙ্গা করে তুলছি। টুকটাক কলমও ধরছি, সানন্দে লেখনী প্রকাশ করছি, স্বপ্নের পথে হাঁটছি। কখনও বা ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি, তবু এই অনির্ধারিত যুদ্ধের ময়দানে হাসি-কান্নার ডালা সাজিয়ে ছুটে চলেছি নিজেকে। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোমেনা আক্তার মুক্তা। বললেন, গত বছর মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে বাড়ির পথে রওনা হই। বাড়িতে পরিবারের সবার সঙ্গে ভাল সময় কাটলেও কোথায় যেন আবার আতঙ্ক এসে উঁকি দেয়। আমরা কি আসলেই এ মহামারী থেকে রক্ষা পাব? দিনের বেশিরভাগ সময়ই কেটে যায় বাড়ির কাজে মাকে সহায়তা, টেলিভিশন, ফেসবুকিং আর টুকটাক লেখালেখিতে। এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গরীবদের জন্য কাজ করছে, সেখানে গরিবরা যেন খাদ্য সঙ্কটে না ভোগে, সবাই সহযোগিতা করি। সবার মাঝেই একটাই ভয়; এখন আমাদের কী হবে? ব্যস্ততায় নিজের লালিত স্বপ্নের পূর্ণতা দিতে না পারলেও করোনার ঘরবন্দী সময়ে সেটি সম্ভব হয়েছে নওরিন আক্তারের। গড়ে তুলেছেন ‘ নৈরিত্রী’ নামক দেশীও পোশাকের অনলাইন ব্যবসার। নওরিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। জানালেন, ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি আমার নিজস্ব উদ্যোগ ‘ নৈরিত্রী’তে অবসর সময়টুকু দিচ্ছি। প্রতিদিন গণমাধ্যমগুলোতে সাধারণ মানুষের মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে নানা ঘটনার সংবাদ দেখি। এক্ষেত্রে পরিবারের একে অপরের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা, হাসিখুশি সময় কাটানো খুব ভাল ভূমিকা রাখে বলে আমি মনে করি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু কিংবা বড়-ছোটদের খোঁজখবর নিই প্রায়ই। এই দুঃসময় কখন কাটবে আমরা কেউ জানি না, তবু আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি নিয়মিত নামাজ কায়েমের মাধ্যমে যেন আল্লাহ সবাইকে সুস্থতা দান করেন।
×