ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কেট-শপিংমল দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২৩ এপ্রিল ২০২১

মার্কেট-শপিংমল দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি

এম শাহজাহান ॥ ঈদের বেচাকেনা করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট-শপিংমল, বিপণিবিতান ও ফ্যাশন হাউসগুলো দ্রুত খুলে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার করা হচ্ছে। আগামী রবিবারের মধ্যে মার্কেট ও শপিংমলমলগুলো খুলে দেয়ার সরকারী ঘোষণা তারা প্রত্যাশা করছেন। আগামী সোমবার থেকে পুরোদমে বাণিজ্যিক কর্মকা- চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর আগে পহেলা বৈশাখের বেচাবিক্রির জন্য দোকানপাট ও মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এবারও ঈদের বেচাবিক্রির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ করে দেয়া হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি-অবনতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। এর মধ্যে দেশের মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানের প্রায় ২০ লাখ দোকানদার ব্যবসায়ীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। তাদের সারাবছরের প্রায় অর্ধেক বেচাবিক্রি হয়ে থাকে ঈদের এই সময়টাতে। ঈদ বাণিজ্যের মাধ্যমে সারাবছরের অর্ধেক মুনাফা অর্জিত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউনের মধ্যে বর্তমান মার্কেটগুলো এখন বন্ধ থাকছে। শীঘ্রই মার্কেটগুলো খুলে দেয়া হবে কিনা তা করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীরা আবেদন করেছেন, এটা ঠিক। তবে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে দোকানপাট চালু করা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে করোনা কমে আসলে ঈদ বাণিজ্য সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়া হতে পারে। আগামী ২০ রোজা সামনে রেখে মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়া না হলে ঈদ বাণিজ্যে ধস নামার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি মোঃ হেলালউদ্দীন এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী সোমবারের মধ্যে সারাদেশের দোকানপাট ও বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে আগামী রবিবারের মধ্যে সরকারী ঘোষণা প্রয়োজন। তিনি বলেন, গতবারের মতো এবারও ঈদ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন, তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। তিনি বলেন, পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ব্যবসায়িক কর্মকা- চালিয়ে যাবেন। জীবনের মায়া সবার আছে। ব্যবসায়ীরা অসতর্ক থাকলে করোনায় তাদেরও মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দোকানপাট ও শপিংমলগুলো দ্রুত খুলে দেয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, ঈদের আগে মার্কেটগুলো চালু করার ব্যাপারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক চিঠি দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়ার দাবি রয়েছে সারাদেশের ব্যবসায়ীদের। সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। এছাড়া আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে রেখেছে সমিতি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে কিন্তু এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আশা করছি, ঈদের বেচাকেনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী রবিবারের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে মার্কেট ও শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। করোনা সংক্রমণরোধে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ১৮টি কঠোর বিধিনিষেধ ও নিদের্শনা মানার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতাকে বলা হয়েছে। জানা গেছে, আবহমান কাল থেকে রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে দেশে বহু রকমের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা ফিরে আসে। ব্যবসায়ীরা মুখিয়ে থাকেন উৎসবকেন্দ্রিক বেচাকেনার জন্য। চাঙ্গা হয় সামগ্রিক অর্থনীতি। হালে পহেলা বৈশাখ ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে ঈদকেন্দ্রিক বাণিজ্য বড় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর থেকে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণের মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে কেউ আর কেনাকাটায় উৎসাহ বোধ করে না। তবে মাস্ক পরে ও প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজার ব্যবহার করে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটায় তেমন কোন ঝুঁকি নেই বলেও মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গত বছর রোজার সময় দোকানপাট চালু থাকলেও ক্রেতাদের দেখা মিলেনি। অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে দোকানপাট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবারও সেই ঝুঁকি আবার তৈরি হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার প্রতিদিন বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের অর্থলগ্নী করে ফেলেছেন। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন তৈরি হচ্ছে ঈদেও পোশাক সামগ্রী। পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, জুতা, স্যান্ডেল ও গহনাসহ সব তৈরি হচ্ছে দেশী কারখানাগুলোতে। পাশাপাশি ভাসাবী, জারা, আলমাসসহ বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলো বিদেশ থেকে দামি পোশাক-আশাক ও ঈদ সামগ্রী আমদানি করেছে। এছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ড আড়ং, কেক্রাফট, বাংলার মেলা, রংসহ দামি দামি ব্র্যান্ডগুলোও তৈরি করছে বাহারি ডিজাইনের পোশাক সামগ্রী। এর পাশাপাশি জুয়েলার্সে তৈরি হচ্ছে স্বর্ণের গহনা, ফার্নিচার শো-রুমগুলো প্রস্তুত নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে। ফ্রিজ, টেলিভিশন, গাড়ি, বাড়ি-ফ্ল্যাট সব ধরনের ব্যবসায় চাঙ্গা হয়ে এই ঈদের সময়। অর্থ মন্ত্রণালয় গত অর্থবছরের মার্চ থেকে জুন অর্থাৎ চার মাসে করোনার কারণে ৮৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে একটি প্রাক্কলন করেছে। যদিও সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বর্তমান ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে পাশাক বিক্রির লক্ষ্যে অন্যমেলা, আড়ং, সাদাকালো, বাংলার রং, এড্রয়েট, কে-ক্র্যাফট, নবরূপা, ব্লু-আইয়েজ, স্মার্টেক্স, শৈল্পিক, স্টুডিও এমদাদ বহু ‘স্বদেশী’ ব্যান্ডগুলো নিজেদের পুরোপুরি প্রস্তুত করেছে। শো-রুমগুলোতে এনেছে বাহারি ডিজাইন ও রঙের পোশাক। সাদাকালোর একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, প্রতি ঈদে তাদের বিক্রির বড় টার্গেট থাকে, এর মধ্যে ৮০ ভাগই পূরণ হয়ে যায়। গত বছর করোনার কারণে ঈদ কেনাকাটায় ধস নামে। এবার প্রস্তুতি থাকলেও এখনও দোকানপাট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ক্রেতা পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, সামনে ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে সরকারেরও প্রস্তুতি রয়েছে। দোকানপাট চালু থাকলে তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারেন সেই বিষয়টির দিকে নজর রাখা হবে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যেমন পদক্ষেপ থাকবে ঠিক তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখতেও সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। জানা গেছে, করোনার দ্রুত সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এবারের বিধিনিষেধে কলকারখানা খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হলেও বিপণিবিতান, রেস্তরাঁ, সবজি বিক্রেতাসহ কম পুঁজির ব্যবসায়ীদের ওপর তুলনামূলক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে অফিস, ব্যাংক খোলা রাখা হলেও সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন লাখ লাখ ছোট ব্যবসায়ী। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শপিংমলসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অনলাইনে পণ্য বিক্রি করা যাবে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে, রাজধানীতে দোকানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। মাত্র হাতেগোনা কয়েকশ প্রতিষ্ঠান শুধু অনলাইনে পণ্য বিক্রির মতো সক্ষমতা আছে। আর শপিংমল রয়েছে দেড় শতাধিক। এছাড়া সমিতির হিসাবে সারাদেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে ৬০ লাখ জনবল কাজ করছে। করোনার কারণে এসব দোকানপাট ও মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলে ৬০ লাখ মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
×