রহিম শেখ ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নিরাপদ কেনাকাটার উৎস হিসেবে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অনলাইনের প্রতি নির্ভরতা। লকডাউনে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য মতে, লকডাউন সময়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যভেদে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩০০ শতাংশ। নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ডেলিভারি হচ্ছে। মহামারীতে অনলাইন ব্যবসায় এমন উল্লম্ফনের মধ্যেও লেনদেনে পর্যাপ্ত ঝুঁকিও রয়েছে। কখনও ক্রেতার অসতর্কতা, আবারও কখনও বিক্রেতার প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক।
বর্তমানে দেশে ওয়েবসাইটভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন প্রায় ২ হাজার। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেন্দ্রিক উদ্যোগ রয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি। বছরে বিক্রির পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার মতো। সম্প্রতি ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) একটি জরিপের তথ্য মতে, করোনাকালীন সময়ে যেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে ই-কমার্সের অনেক প্রতিষ্ঠান অতীতের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ডেলিভারি দিয়েছে। নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। করোনাকালীন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ভাল করেছে। নিত্যপণ্য ও খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষেত্রবিশেষ ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে। ২০১৯ সালেও দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশ। ২০২০ সালে এসে সেই প্রবৃদ্ধি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ই-ক্যাব জানায়, ২০২০ সালের শেষ ৮ মাসে ই-কমার্সে শুধু নিত্যপণ্য লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ডেলিভারি হচ্ছে। ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার জানান, গতবছর করোনা সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। ওই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিত্যপণ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি সচল রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও অনলাইনে নিরাপদে পণ্য ও সেবা সচল রাখার ব্যাপারে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। মূলত এসব কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছে। ফলে প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা নওরিন আক্তার বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর থেকেই তিনি অনলাইন কেনাকাটায় মনোযোগী হন। সেই থেকে তিনি চাল, ডাল, সবজি, মাছ-মাংস, দুধ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অন্যান্য গৃহস্থালী পণ্য ও পোশাক কেনার জন্য অর্ডার করেন অনলাইনে। মানুষের ভিড়ভাট্টার মতো জায়গা থেকে পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা থেকেই অনলাইনে নির্ভরতা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, মূলত অনলাইন কেনাকাটা হয় দুইভাবে। প্রথম পদ্ধতিটির পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হয় অনলাইনে। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে তাদের নিজস্ব ওয়েবপেজে পণ্যের নমুনা ও দাম দেখিয়ে থাকে। ক্রেতারা তা দেখে অনলাইনেই পছন্দসই অর্ডার করেন। আর অর্ডার অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সংশ্লিষ্ট পণ্যটি ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেয়। অন্য প্রক্রিয়ায় প্রথম দিককার যোগাযোগ অনলাইনে হলেও বেচাকেনা হয় ব্যক্তিপর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে। ক্রেতার চাহিদা পূরণে অনলাইন শপগুলোও আগের তুলনায় নিজেদের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি করোনা মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় উদ্যোক্তাদের অনেকেই এখন এ্যাকচ্যুয়াল মার্কেটে বিনিয়োগের পরিবর্তে ঝুঁকছেন ভার্চুয়াল শপে। ফলে আসছে আরও অনলাইন প্রতিষ্ঠান। এ তালিকায় দেশে পাইকারি কেনাবেচায় ই-পাইকার নামের আরেকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মও যুক্ত হতে যাচ্ছে।
দেশের শীর্ষ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে বিক্রয় ডটকম, চালডাল, দারাজ, আজকের ডিল, বাগডুম, প্রিয়শপ, রকমারি, পিকাবু, ই-ভ্যালিসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। তবে এই লকডাউনে নামী থেকে অখ্যাত সবার ব্যবসায় বেড়েছে। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্য ও কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচার, প্রসাধনী, গয়না, ফ্যাশনওয়্যার, শিশুপণ্য, স্মার্টফোন ও ক্যামেরা, হোম ডেকোর ও লাইটিং, হোমওয়্যার, স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক পণ্য এখন কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনে।
এ প্রসঙ্গে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, লকডাউনের সময় ছাড়াও স্বাভাবিক সময়েও গ্রাহকদের অর্ডারকৃত পণ্য তাদের কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন ডেলিভারি এবং লজিস্টিক্স পার্টনারদের সাহায্য নিয়ে থাকে ই-ভ্যালি। যেমন ঃ পেপারফ্লাই, ই-কুরিয়ার ইত্যাদি। এছাড়াও ই-ভ্যালির নিজস্ব ই-লজিস্টিক্স বিভাগ আছে যার মাধ্যমে গ্রোসারি, ওষুধ এবং রেস্টুরেন্টের খাবার সরবরাহ করা হয়। দেশব্যাপী ৮টিরও বেশি শহরে আমাদের এই কার্যক্রম চালু আছে। প্রায় ছয় হাজার ‘ই-ভ্যালি হিরো’ এই বিভাগে কাজ করছেন।
তবে অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য কিনতে হরহামেশা প্রতারণা শিকারও হচ্ছেন অনেকেই। একাধিক অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের অভিযোগ-যথাসময়ে পণ্য পৌঁছানো হয় না। থাকে না গুণগতমান। ন্যায্যমূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া ছাড়াও এক পণ্য দেখিয়ে আরেকটা দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। নষ্ট-ছেঁড়া-পচা পণ্য গছিয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আকার ও পরিমাণ ঠিকমতো না থাকার পাশাপাশি ভেজাল পণ্য সরবরাহেরও অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অনলাইনে কেনাকাটা করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এনজিও কর্মকর্তা ফারহানা রুমা। তিনি বলেন, ‘এখন তো অনলাইনে কেনাকাটায় সুবিধা। যদিও ক্রেতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি সব অনলাইন শপ। ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেম ও কুরিয়ারের লোকের সামনে প্যাকেট খুলে পণ্য বুঝে নিতে হয়। পরে রিপোর্ট করলে একথা-সেকথা বলে ঘোরায়।’ একটি বেসরকারী গণমাধ্যমে কাজ করেন ওমর ফারুক। সম্প্রতি অনলাইন প্রতারণার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘স্মার্টডিলবিডি ডটকম থেকে একটি ল্যাপটপ টেবিল অর্ডার করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি কুরিয়ারে পাঠিয়েছে কাঠের একটি টুকরো। যোগাযোগ করেও কোন সমাধান হয়নি বলে তিনি জানান।
ক্রেতাদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে ই-ভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পণ্য বা সেবা বিষয়ক গ্রাহকদের অভিযোগ সবসময়ই গুরুত্ব সহকারে নিয়ে থাকে ই-ভ্যালি। একজন গ্রাহক ই-ভ্যালির নিজস্ব এ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং আমাদের ই-মেইল বার্তায়ও তার সমস্যার কথা জানাতে পারেন। গ্রাহকদের সেবা দেয়ার জন্য এবং সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য গ্রাহক সেবা বিভাগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগ কাজ করে। এছাড়াও সঙ্গীন বিষয়গুলো দেখার জন্য ‘ইস্যু রেজুলেশন’ নামের আমাদের একটি ডেডিকেটেড বিভাগ আছে। এসব বিভাগে প্রায় দুই শতাধিক কর্মী কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন এবং লকডাউন ছাড়াও সবসময়েই ই-ভ্যালি গ্রাহক বান্ধব। শুধু গ্রাহক বান্ধবই বলব না বরং আমরা বিক্রেতা বা উদ্যোক্তা বান্ধবও। করোনার আগেও আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ ছিল। এখন আমাদের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি। করোনার আগে আমাদের প্ল্যাটফর্মে বিক্রেতা বা ব্যবসায়ী ছিলেন পাঁচ হাজারের মতো। এখন সেটি প্রায় ৩০ হাজার। দেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন আমাদের সঙ্গে কাজ করছে তেমনি ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তারাও কাজ করছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সম্প্রতি আমরা একটা ক্যাম্পেন চালু করেছি ‘এসএমই ডিল’। কাজেই মার্কেটপ্লেস হিসেবে আমরা গ্রাহক ও ব্যবসায়ী উভয়ের জন্য দারুণ কিছু সুযোগ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি।
‘চালডাল’-এর চীফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ বলেন, ‘প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার অর্ডার সরবরাহ করে থাকি। হঠাৎ কোন কারণে অর্ডারের সংখ্যা বেড়ে গেলে বা ডেলিভারিম্যানের গাফিলতিতেও ডেলিভারিতে দেরি হতে পারে। প্যাকেটজাত সব পণ্য আমরা সরাসরি কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করি। তাই এর মান নিয়ে সাধারণত কোন কমপ্লেইন পাই না।’ পণ্যের গুণগতমান ঠিক না থাকার অভিযোগ স্বীকার করে জিয়া আশরাফ বলেন, ‘ফ্রোজেন আইটেম ডেলিভারি দিতে দেরি হলে কখনও কখনও গুণগতমানের তারতম্য ঘটতে পারে। শাক-সবজি লোকাল বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে পৌঁছানোর লম্বা সময়ে কোয়ালিটি একটু খারাপ হতে পারে। আমরা সবসময় মার্কেট প্রাইস রাখার চেষ্টা করি। বেশি দাম রাখার সুযোগ নেই। বরং মাঝে মাঝে গ্রাহকদের স্পেশাল ডিসকাউন্ট দেই আমরা।’
ফেসবুক পেজ খুলে যারা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন, তাদের একজন ফারহানা জেবীন। তার পেজের নাম ‘মুদিতা’। ক্রেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান অন্যদের কাছ থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করে, তারাই সময়মতো ডেলিভারি করতে পারে না। অভিযোগ পেলে পণ্য আমরা বদলে দেই। এমনকি চাইলে টাকাও ফেরত দেই। বড় উদ্যোক্তা বা বেশি পুঁজি না থাকায় অল্প করে পণ্য তৈরি করতে হয়। ফলে খরচও বেশি পড়ে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বাজারজাত করেন ত্রিদিব বর্মণ। তার পেজের নাম ‘দেশীঘর’। তিনি বলেন, ‘ছোট উদ্যোক্তাদের নিজস্ব ডেলিভারি ব্যবস্থা না থাকায় সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারে না। ছোট উদ্যোক্তাদের পুঁজি কমের কারণে অল্প পণ্য সংগ্রহ করতে হয়। ফলে দাম বেশি পড়ে। তবে, আমাদের পণ্যের মানের ক্ষেত্রে কোন আপোস করি না।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (তদন্ত) শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ পেলে সেগুলো অভিযোগ আমলে নেই। প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দেই। নির্দিষ্ট দিনে দুইপক্ষকে হাজির থাকতে বলি। এরপর তাদের উপস্থিতিতে শুনানি হয়।’ শুনানিতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দোষী প্রমাণিত হলে তার জরিমানা করা হয় বলেও তিনি জানান।
এছাড়া অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে গতানুগতিক এসব প্রতারণা বাইরে রয়েছে ‘ডিজিটাল থ্রেট’। অনেকেই পণ্য কিনতে লোভনীয় কোন ই-মেইলে যাচাই-বাছাই ছাড়া ক্লিক করেন। এতে নিজের কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইলে ভাইরাস প্রবেশ করে মুহূর্তেই। এছাড়া অনেকেই ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে লেনদেন করেন। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, ব্যাংক এ্যাকাউন্টের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে ডেবিট কার্ড। কার্ড ক্লোন করা হলে ব্যাংক হিসাবের সমস্ত অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে প্রতারক চক্র। এছাড়া অনলাইনে পণ্য কিনতে নিজের ডিভাইসটিকে ম্যালওয়্যার মুক্ত কি-না তা অনেকেই জানেন না। এক্ষেত্রে হ্যাকাররা ডিভাইস হ্যাক করে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট হ্যাক বা পেমেন্টের তথ্য নিতে না পারে।