ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যান্ডি টেস্ট

মুমিনুলের শতকে দ্বিতীয় দিনও বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০২১

মুমিনুলের শতকে দ্বিতীয় দিনও বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’- ক্যান্ডির পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আগেভাগে দ্বিতীয়দিনের খেলা থেমে যাওয়ার পর এখন এটাই বলা যায়। বাংলাদেশ দল প্রথমদিন যেভাবে অবলীলায় ব্যাটিং করেছে তা দ্বিতীয়দিনেও অব্যাহত থাকে। আহামরি কোন বিপত্তি ঘটাতে পারেনি শ্রীলঙ্কার বোলাররা। কিন্তু প্রথমে বৃষ্টি ও পরে আলো কমে যাওয়ায় ২৫ ওভার আগেই চলমান প্রথম টেস্টের দ্বিতীয়দিনের খেলা শেষ হয়েছে। দিনশেষে ৪ উইকেটে ৪৭৪ রান তুলে অবশ্য দারুণ অবস্থানেই আছে সফরকারীরা। নাজমুল হোসেন শান্ত ১৬৩ রানে ও অধিনায়ক মুমিনুল হক বিদেশের মাটিতে প্রথম শতক হাঁকিয়ে ১২৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু দু’জন তৃতীয় উইকেটে ২৪২ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে বড় সংগ্রহ পাইয়ে দেন বাংলাদেশকে। দ্রুত কিছু রান তুলে ইনিংস ঘোষণা দিয়ে এদিনই লঙ্কানদের হয়তো কিছুক্ষণ ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিতেন মুমিনুল। এখন তা দীর্ঘায়িত হয়েছে। অবশ্য আজ তৃতীয়দিনের শুরুতে মারকুটে স্বভাবের লিটন দাসের কাছ থেকে স্ট্রোকসমৃদ্ধ ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েই নামাটা স্বাভাবিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের। মুশফিকুর রহিম ৪৩ ও লিটন ২৫ রানে ব্যাট করছেন। ২ উইকেটে ৩০২ রানে প্রথমদিন শেষ করে বাংলাদেশ। ১৫০ রানের জুটি গড়ে ক্রিজে ছিলেন শান্ত ১২৬ ও মুমিনুল ৬৪ রানে। তারা সেই জুটিকে দ্বিতীয়দিন নিয়ে গেছেন ২৪২ রান পর্যন্ত। এটি তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটির রেকর্ড। এর আগে চট্টগ্রামে ২৩৬ রানের জুটি ছিল মুশফিকের সঙ্গে মুমিনুলের ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। এবার ৮৫.৪ ওভার ক্রিজে ছিলেন শান্ত-মুমিনুল, বলের হিসেবে তারা খেলেছেন ৫১৪ বল। আর ৫টি বল খেলতে পারলেই এই জুটিতে হয়ে যেত সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই গলে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিকের ২৬৭ রানের জুটি হয়েছিল ৫১৮ বল খেলে। শান্ত ও মুমিনুলের জুটি এবার শেষ হলো ৫১৪ বল খেলে। লাঞ্চ বিরতির পর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে শান্তর। চলতি ইনিংসে প্রথমবার তার মনোসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সুযোগে তাকে ফিরতি ক্যাচে সাজঘরে পাঠান পেসার লাহিরু কুমারা। ৩৭৮ বলে ১৭ চার, ১ ছক্কায় ১৬৩ রানে যবনিকা ঘটে শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক শতকের। এরপর মুশফিকের সঙ্গে অবশ্য বেশিক্ষণ থাকেনি মুমিনুলের জুটি। ৩০ রানেই তাদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরিয়েছেন স্পিনার ধনঞ্জয়া। চা বিরতির কিছু আগেই মুমিনুল ফিরে যান ব্যক্তিগত ১২৭ রানে। স্পিনটা বেশ ধরতে শুরু করে ক্যান্ডির উইকেটে। সে জন্যই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধৈর্যশীল শতক হাঁকানো মুমিনুল বিভ্রান্ত হয়েছেন। ৩০৪ বলে ১২৭ রান করতে মাত্র ১১টি চার হাঁকিয়েছেন তিনি। দেশে ১০টি সেঞ্চুরি থাকলেও এতদিন বিদেশের মাটিতে তার সেরা ছিল ৭৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৭ সালে সেটি করেছিলেন মুমিনুল। এবার বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি খরা কাটিয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন তিনি অধিনায়ক হিসেবে। শান্ত-মুমিনুল বিদায় নেয়ার পর মুশফিক-লিটন জুটি সতর্ক হয়েই খেলেছেন। ৪ উইকেটে ৪৪০ রান নিয়ে চা বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ তখন পরিকল্পনা আঁটছিল দ্রুত রান তোলার। কিন্তু চা বিরতির পর ২.১ ওভার খেলা হতেই বৃষ্টি বিঘœতা সৃষ্টি করে। পরে খেলা শুরু হলেও ছন্দে ফিরতে পারেননি মুশফিক-লিটন। ধীরস্থিরভাবেই ব্যাটিং করেছেন বৈরী পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে। আর কোন বিপদ ঘটতেও দেননি তারা। তবে প্রত্যাশিত অবস্থানে যেতে পারেনি বাংলাদেশ, দ্বিতীয়দিনটি ২৫ ওভার আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায়। আলোর স্বল্পতা চলতি টেস্টে আরও ভাল কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। কারণ স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয়দিনের শেষভাগে কিংবা পুরোদিন ব্যাট চালিয়ে তৃতীয়দিনের শুরুতেই শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠাত বাংলাদেশ দল। তবে এই পরিস্থিতিতে আজও হয়তো দ্রুত কিছু রান তুলতে ব্যাটিংয়েই নামতে হবে মুমিনুলদের। মারমুখী স্বভাবের লিটন যদি খোলস ছেড়ে সেই প্রচেষ্টা চালান তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৭৪ রান তুলে ফেলেছে বাংলাদেশ এবং শেষ হয়ে গেছে দ্বিতীয়দিন। এখন দ্রুত কিছু রান বাড়িয়ে নিয়ে বোলারদেরও সুযোগ করে দিতে হবে এই টেস্টে বাংলাদেশের জন্য দারুণ কিছু বয়ে আনার জন্য।
×