ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভার্চুয়াল সংলাপ

মহামারীতে পোশাক খাতের পুনরুদ্ধার ব্যাহত

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২২ এপ্রিল ২০২১

মহামারীতে পোশাক খাতের পুনরুদ্ধার ব্যাহত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পোশাক খাতের ভ্যালু চেনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে মধ্যমেয়াদী পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছিল তা দীর্ঘমেয়াদে চলা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট চাহিদা মন্দার কারণে ব্যাহত হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি-আগস্টের সময়কালে বিশ্বব্যাপী পোশাকের আমদানি একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমেছে। শুধু জাতীয় স্তরের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই মধ্যমেয়াদী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা ক্রমাগত কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাসহ অনেক সরবরাহকারী দেশের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর গতিতে চলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘ভ্যালু-চেনভিত্তিক সমাধান’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই পর্যবেক্ষণগুলো ‘বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার পোশাক খাতের পুনরুদ্ধার : ভ্যালু-চেনভিত্তিক সমাধান কি সম্ভব?’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক সংলাপে উঠে আসে। মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ অব শ্রীলঙ্কা (আইপিএস), কলম্বো এবং ৫২টি চিন্তক প্রতিষ্ঠানের আন্তির্জাতিক পর্যায়ের নেটওয়ার্ক সাউদার্ন ভয়েজ-এর সহযোগিতায় এই সংলাপটি আয়োজিত হয়। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বক্তব্য দেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এছাড়া সভায় অংশ নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামান। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সিপিডি এবং আইপিএস সম্প্রতি স্থানীয় পোশাকের পুনরুদ্ধার বিষয়ে একটি ভ্যালু-চেনভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করার জন্য যৌথভাবে সাউদার্ন ভয়েজ-এর সহযোগিতায় একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। তিনি মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতে ভ্যালু-চেনের যে ক্ষতি হয়েছে তার উল্লেখ করে বলেন, এই গবেষণাটি সরবরাহকারী দেশসমূহ বিশেষত বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলায় সহায়তা করবে। মূল বক্তব্যে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং আইপিএসের অর্থনীতিবিদ কিথমিনা হিউজ জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে বড় দেশগুলো এই মহামারীর সময়ে সীমাবদ্ধ সংখ্যক সোর্সিং দেশগুলোতে বেশি গেছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় ক্রেতাদের কাছে ঠেকে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পরেনি। মাহামারীর সময়কালে (জানুয়ারি থেকে জুন ২০২০) ক্রেতারা রফতানি আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি বড় সরবরাহকারী দেশকে বঞ্চিত করেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সরবরাহকারী দেশগুলোতে অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্ডার পুনরায় বিতরণ করা যেতে পারে যদি কোভিড-১৯ পূর্ব সময়ের রফতানির আদেশের অংশ বজায় রাখা সম্ভব হয়। সমীক্ষায় প্রস্তাব করা হয়েছে, যেকোন বড় বৈশ্বিক সঙ্কটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে সঙ্কট পূর্ব পর্যায়ের রফতানি আদেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি পুনর্বিতরণ পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে হবে, বিশেষত যেসব দেশগুলো আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। শ্রীলঙ্কার এমএএস হোল্ডিংস স্ট্রেটেজিক ট্রান্সফরমেশনের পরিচালক হুসনি সালিহ বলেন, ভ্যালু-চেনের মান বেড়ে যায় যদি সকল অংশীজন একসঙ্গে কাজ করে, বিশেষ করে এরকম সঙ্কট পরিস্থিতিতে। তুলনামূলকভাবে বৈচিত্র্যময় তবে বিদ্যমান ভ্যালু-চেনের মধ্যে সহনশীলতা তৈরির মাধ্যমে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সঙ্কট সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ এ্যাপারেল এক্সজেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, চলমান সঙ্কটে ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে দায়বদ্ধ ব্যবসায়িক আচরণের অভাব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্র্যান্ডগুলোর সরবরাহকারীদের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং দায়িত্বপূর্ণভাবে কাজ করা উচিত। শ্রীলঙ্কার ডিজাইন কালেক্টিভ স্টোরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনু বিক্রমাসিংহে বলেন, তার মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই অতিমারীর জন্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, বিশেষ করে ঋণ পাওয়া ও নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। অনলাইন বাণিজ্য এই অতিমারীতে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মনে করেন। এইচএনেম গ্রুপের হেড অব সাসটেইনেবিলিটি, গ্লোবাল প্রডাকশন পিয়েরের মতে, এই অতিমারীর কারণে ব্যবসা সহজতর করায় আধুনিকায়নের তাৎপর্য উঠে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিবেচনা করা উচিত যে কিভাবে বাজারকে পণ্য বৈচিত্র্য, পণ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত পরিষেবাদি এবং অতীতের তুলনায় উচ্চতর ব্যবসায়ের সম্ভাবনা অর্জনের টেকসই তা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বাজারকে আরও প্রস্তুত করা যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বেটার ওয়ার্ক ড্যান রিস বলেন, শুধু খাতভিত্তিক পরিমাপ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করতে পারবে না। সহনশীলতা তৈরি করতে এবং শ্রমিকদের রক্ষা করতে, অংশীজনদের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা এবং একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পোশাক খাতের ভ্যালু-চেনের সকল অংশীজনরা অতিমারীতে প্রভাবিত হয়েছিল তাই এই গবেষণার ফলগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এই খাতকে টেকসই করে সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে সকল অংশীজনের কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, আইএলও সরবরাহকারী দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যবস্থাপনার পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রয়কারী দেশগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে একটি উদ্যোক্তা ভূমিকা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
×