ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জানিয়েছে রোসাটম

রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় রি-এ্যাক্টরও আসছে

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২২ এপ্রিল ২০২১

রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় রি-এ্যাক্টরও আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রি-এ্যাক্টর প্লান্টও দেশে আসছে। রাশিয়া থেকে এবারও ভল্গা হয়ে পদ্মাপারে পৌঁছবে ১ হাজার ২০০ ভিভিইআর শক্তির চুল্লিপাত্র ও দুইটি স্টিম জেনারেটর। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন-রোসাটম এ তথ্য জানিয়েছে। রোসাটমের দেয়া তথ্যে বলা হয়, রাশিয়ার জেএসসি এইএম টেকনোলজির ভল্গোদনস্ক শাখা (রোসাটমের যন্ত্র প্রস্তুতকারী শাখা এটোমএনার্গোম্যাস) রূপপুর প্রকল্পের মূল যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে। রি-এ্যাক্টর প্ল্যান্ট প্রস্তুতি অত্যন্ত উচ্চপ্রযুক্তির একটি কাজ, যার দক্ষতা বিশ্বে গুটি কয়েক দেশের আছে। জেএসসি এইম টেকনোলজি রাশিয়ার একমাত্র কোম্পনি, যা পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের স্টিম জেনারেটিং প্লান্টের সম্পূর্ণ অংশ তৈরি করে। এ্যাটোমম্যাস বছরে সর্বোচ্চ ৪ সেট যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে পারে। পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লির জন্য ২০১৭ সালের ৩০ নবেম্বর কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর জুলাইয়ে দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর ৬৮ মাসের মধ্যে এই বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল স্থাপনা নির্মাণের কথা রয়েছে রাশিয়ার কোম্পানি এ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রি-এ্যাক্টরটি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ৭৬৮টি অপারেশন এবং ১৪৩টি কন্ট্রোলিং পয়েন্টসহ এটি নির্মাণ করতে মোট সময় লাগে দুই বছর। এই প্ল্যান্টের বিশেষজ্ঞরা ওপরের ইউনিটের স্ট্যান্ডার্ড কভার যুক্ত হাইড্রোলিক টেস্টসহ চুল্লি পাত্রটির সব ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছেন। এই পরীক্ষা চলার সময় চুল্লিটির অভ্যন্তরে ২৪ দশমিক ৫ এমপিএ চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা অপারেটিং চাপের চেয়েও ১ দশমিক ৪ গুণ বেশি। যন্ত্রাংশ প্রস্তুতির শেষ ধাপ হলো অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশের পরীক্ষামূলকভাবে সাজানো। নক্সা অনুযায়ী কোর ব্যারেল, কোর বাফেল এবং প্রতিরক্ষামূলক টিউব ইউনিটকে চুল্লি পাত্রের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিসহ এই প্লান্টের বিশেষজ্ঞরা যন্ত্রাংশের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে প্রস্তুত করা এই যন্ত্রাংশের জ্যামিতিক পরিমাপ, নক্সা অনুযায়ী সারি এবং গুণগতমান নিশ্চিত করা হয়। রি-এ্যাক্টর ও স্টিম জেনারেটর প্রত্যেকটির ওজন ৩৪০ টন ও দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১২ ও ১৪ মিটার। এগুলোকে প্রথমে প্লান্টের বিশেষ বার্থে নেয়া হবে এবং সেখান থেকে যন্ত্রাংশগুলোকে জাহাজে করে জলপথে নভোরোসিস্কে নেয়া হবে। সেখান থেকে এগুলো ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। জেএসসি এইএম টেকনোলজির ডিরেক্টর জেনারেল ইগোর কটভ বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, এই কাজে বাংলাদেশী সহযোগীদের যে কোন জিজ্ঞাসা এবং অনুরোধের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী এই পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের মূল যন্ত্রাংশগুলো সময়মতো পাঠানো হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া সম্ভব হয়েছে আমাদের কার্যকর মিথষ্ক্রিয়া ও আমাদের ওপরে ভরসা রাখার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই সহযোগিতা যে কোন প্রকারে বজায় থাকবে।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে দেয়া হবে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট। রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। রাশিয়ার সহায়তায় এ প্রকল্পে দুই ইউনিট মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। ৮ হাজারের মতো জনবল এখন এ প্রকল্পে কাজ করছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮০০ জন রাশিয়ানসহ বিদেশী জনবল রয়েছে প্রায় ২ হাজার। তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সংবলিত এই পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র। ২০২০ সালের ১০ নবেম্বর প্রকল্প এলাকার নবনির্মিত জেটিতে নোঙর করে প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লিপাত্র এবং জেনারেটরবাহী বিশেষায়িত বার্জ। নৌবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় মংলা বন্দর থেকে বার্জটি রূপপুরে নেয়া হয়। যন্ত্র দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ভোলগাদোনস্কে। ওই চুল্লিপাত্রটির ওজন ছিল ৩৩৩ দশমিক ৬ টন এবং স্টিম জেনারেটরের ওজন ৩৪০ টন। একই বছরের আগস্টের শেষদিকে রাশিয়ার পেট্রোজাবাদ বন্দর থেকে যন্ত্র দুটি নিয়ে বিশেষ জাহাজ বাংলাদেশে রওনা দেয়। ১৪ হাজার কিলোমিটার আন্তর্জাতিক নৌপথ পাড়ি দিয়ে সেগুলো ২০ অক্টোবর মংলা বন্দরে পৌঁছায়।
×