ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২২ এপ্রিল ২০২১

বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা

অপূর্ব কুমার ॥ আশঙ্কাজনক হারে করোনার প্রকোপ বাড়ায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিকল্প উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে টিকার বিকল্প উৎসগুলো খুঁজে বের করে সাত দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকার সেরামের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছিল স্থানীয় এজেন্ট বেক্সিমকোর মাধ্যমে। চুক্তি অনুসারে, প্রতিমাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু, বুধবার পর্যন্ত দুই দফায় মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে সরকার। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের চালান হিসেবে এই টিকা বাংলাদেশে এসেছে। এছাড়া ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের হাতে এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫ জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৮৯ জন দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন। সবমিলিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭৪ লাখ ২৩ হাজার ২৭৪ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি এ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন রফতানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগামী ১ মে থেকে সেখানে ১৮ বছরের উর্ধে সকলকে টিকা দেয়া হবে। ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণ রুখতে গণটিকা প্রদানের বিকল্প দেখছে না ভারতের সরকার। সেই কারণে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে গেল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম ধাপে বাংলাদেশকে যে এককোটি ডোজ দিতে চেয়েছিল সেটিও অনিশ্চতায় পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, টিকা পাওয়া নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আমরা টিকার বিকল্প উৎস খুঁজতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। তিনি বলেন, চীনের টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। কমিটি প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। তারা এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার পর একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রয়োজনে কমিটিতে আরও সদস্য যুক্ত করা হতে পারে বলেও জানান তিনি। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজার এবং মডার্নার টিকা আনার ব্যাপারেও যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা এমুহূর্তে তাদের দেশের বাইরে টিকা সরবরাহ করছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সময়মতো টিকা না পেলে, টিকাদান কর্মসূচী বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সিনোফার্ম বাংলাদেশকে ৬০ লাখ ডোজ করোনার টিকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি এমন সময় এসেছে, যখন দেশে প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, সেরাম ইনস্টিটিউট ছয় ধাপে বাংলাদেশকে তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার টিকার বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সিনোফার্ম সম্প্রতি আরেকটি পক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ২০২০ সালের শুরুরদিকে বিবিআইবিপি-কোরভি নামে করোনার একটি টিকা তৈরি করে বেজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস। চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিসর, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ বর্তমানে এ টিকা ব্যবহার করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনও এ টিকার অনুমোদন দেয়নি। তবে, ডব্লিউএইচওর উপদেষ্টা প্যানেল জানিয়েছে, সিনোফার্ম তাদের সামনে নিজেদের টিকার কার্যকারিতা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছে। এ ছাড়া, রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি পাওয়ার জন্যও দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে টিকা তৈরির জন্য বিদেশীদের কাছে সহায়তাও চেয়েছেন। নতুন করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে তৈরির আগ্রহের কথা জানিয়ে কাঁচামাল সরবরাহের জন্য টিকা উদ্ভাবক একাধিক বিদেশী কোম্পানিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দেশে ব্যবহৃত টিকা ‘কোভিশিল্ডের’ উদ্ভাবক অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকাকে সরকার এবং অন্য টিকার উদ্ভাবকদের কাছে ওষুধ শিল্প উদ্যোক্তারা কাঁচামালের জন্য চিঠি দিয়েছে। তবে শুধু কাঁচামাল পেলেই এই টিকা তৈরি সম্ভব হবে না। এর জন্য বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরীক্ষাগারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী হতে হবে। সে জন্যও ডব্লিউএইচওর সহায়তা চেয়েছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী টিকা কবে পাওয়া যাবে এই বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মার এক উর্ধতন কর্মকতা বলেন, সেরামের কাছ থেকে এখনও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে, শীঘ্রই টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
×