ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিলাসী ব্যয় নয় ॥ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কৌশলী পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২২ এপ্রিল ২০২১

বিলাসী ব্যয় নয় ॥ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কৌশলী পদক্ষেপ

এম শাহজাহান ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি সুরক্ষায় সরকারী অর্থ সাশ্রয়ে আগামী বাজেটে বিলাসী ব্যয় পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো ও কর্মসংস্থান তৈরিতে বেশি জোর দেয়া হবে। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত একবছর ধরে চাপের মুখে পড়েছে এনবিআরের রাজস্ব আদায়। এরপরও অর্থনীতি সচল রাখতে এবারও কর ছাড় দিয়ে ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠান সচল রেখে উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগকারীদের নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে। নতুন করে কোন খাতে ভ্যাট ও কর আরোপ করা হচ্ছে না। তবে কর ও ভ্যাট দিতে সক্ষম এমন সব নাগরিককে কর নেটে নিয়ে আসার উদ্যোগ রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। এজন্য কর না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো হবে। জানা গেছে, কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করে অর্থনীতি দ্রুত পুনর্গঠন করার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কৌশলই হচ্ছে-বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া। ঘন ঘন সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত, অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং নতুন করে কোন অবকাঠামো খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করা থেকে সরে আসা হয়েছে। বিলাসী পণ্য উৎপাদন ও আমদানিতে ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি করা হবে। তবে সরকারী চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের তাগিদ রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আওতায় হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকা-ে নিয়োজিত জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হবে। এছাড়া করোনা চিকিৎসা সহজ করতে স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এজন্য করোনা চিকিৎসা মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে ঢেলে সাজানো হবে স্বাস্থ্য খাত। স্বল্পব্যয়ে করোনার চিকিৎসা সেবা পেতে বেশ কিছু কর্মসূচী নেয়া হবে নতুন বাজেটে। করোনার টিকা আমদানিসহ সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এবারও সর্বত্র কর ছাড়ের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন, করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি, ব্যাপক কর্মসংস্থান ও পল্লী উন্নয়ন, এক কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা, গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ, দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার মতো কর্মসূচী নেয়া হবে আগামী বাজেটে। করোনার প্রথম ধাক্কা সামলানোর আগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশের অর্থনীতির ওপর আঘাত আনতে শুরু করেছে। উৎপাদনমুখী বড় শিল্প কারখানাগুলো চালু থাকলেও রফতানিতে বিপর্যয় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় ও চাহিদাও কমে যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ আবার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতির দ্বিতীয় শক্তি রেমিটেন্স আহরণ কমে যাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। চাপের মুখে সামগ্রিক অর্থনীতি। এ কারণে বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আর এতে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে মানুষের জীবন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি প্রাক-বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানান, বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে মানুষে জীবন বাঁচানোর ওপর। করোনার চিকিৎসা, ওষুধ ও টিকা যাতে সবাই পান সেই কর্মসূচীকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে আগামী বাজেটে। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ থেকে অর্থনীতি সুরক্ষা করতেও বাজেটে পৃথক কর্মসূচী নেয়া হবে। দেশের অর্থনীতি গতিশীল ও সচল রাখার বাজেট দেয়া হবে। জানা গেছে, আগামী ১০ জুন মহান জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন। করোনার কারণে এবার বাজেট প্রণয়নের কাজটি চলছে অনলাইনে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনাগুলোও চলছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদাপত্র জমা দিচ্ছে। অর্থ বিভাগ থেকে ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে মতামত, সুপারিশসহ অন্য সব ধরনের বাজেটীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাজেট প্রণয়ন ও দৈনন্দিন সব কাজকর্ম অনলাইনেই সম্পাদন করছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখতে কর্মসংস্থানের জন্য থাকবে পৃথক কর্মসূচী। কৃষি ও শিল্প খাতের জন্য কর্মসূচী থাকবে উৎপাদন সচল রাখতে। তবে করোনার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হতে পারে। এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এনবিআর। এর আগে অর্থ বিভাগ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে কোন খাতে বাড়তি করারোপ করা হচ্ছে না। বরং ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে কর ছাড়ের বিষয়ে জোরালো দাবি করেছে। বিভিন্ন শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা ব্যবসা ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন। সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এ্যাপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, এবার উৎপাদন খাতে কর ও ভ্যাট বাড়ানো হলে তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, যারা নিয়মিত ভ্যাট ও ট্যাক্স দেন তাদেরই বেশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ ধরনের মানসিকতা থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে। উদ্যোক্তাদের নীতিগত সহায়তা দেয়া না হলে এদেশে কোন ব্যবসা আর টিকবে না। স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ॥ স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ণের কাজ এগিয়ে চলছে। করোনা পরিস্থিতি সামনে রেখে বাজেটের অগ্রাধিকার খাতগুলো নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিন ধাপে দেশের ১৭ কোটি মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দিতে বড় অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে। চলতি বাজেটে টিকা আমদানির জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও আগামী বাজেটে এই বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ করোনার টিকা কিনতে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ওই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইডিবিসহ দশ উন্নয়ন সহযোগীর কাছে প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার তহবিল চাওয়া হয়েছে। এই অর্থ আসবে সহজ শর্তের ঋণ হিসেবে। এর বাইরে করোনার টিকা কিনতে বাজেটে ১০-২০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ প্রদান এবং সার্বিক স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে আরও ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। করোনার পর থেকে এ খাতে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। করোনার টিকা, সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য উপকরণ কিনতে এখন আর বাজেট বরাদ্দে মেটানো সম্ভব নয়। এ কারণে টিকা কিনতে আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা ও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নতুন হাসপাতাল নির্মাণসহ আরও বেশকিছু কর্মসূচী রয়েছে। সব মিলিয়ে করোনা মোকাবেলাসহ স্বাস্থ্য খাতে ৭৫ হাজার কোটি টাকার ব্যয় করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর বাইরে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলেও সেটার ব্যয় নির্বাহ করবে স্বাস্থ্য বিভাগ। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও নতুন নতুন হাসপাতাল করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। করোনা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি নির্ধারিত বরাদ্দের পরেও যদি প্রয়োজন হয় তাহলে জরুরী প্রয়োজনে সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু, সহায়ক স্বাস্থ্য সেবা (সাপোর্ট কেয়ার), করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট (সরঞ্জাম) এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে এ টাকা ব্যবাহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এমন সব পণ্য আমদানিতে শতভাগ শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাবেন এ শিল্পের উদোক্তারা। ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে থাকছে সব ধরনের ট্যাক্স ও ভ্যাট সুবিধা। কিছু শর্ত সাপেক্ষে হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ওষুধ ও সেবাসামগ্রী সম্পূর্ণ ফ্রি দেয়া হবে। ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ ও করোনা রোগের চিকিৎসা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে আগামী বাজেটে এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে সরকার। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী অর্থবছরের জন্য গতানুগতিক বাজেট করলে প্রয়োজন মেটানো যাবে না। আগামী বাজেটে দুটি বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। কোথায় অর্থ খরচ হবে, আর সেই টাকা কোথা থেকে আসবে। খরচ ও জোগানের অগ্রাধিকার ঠিক করাই আগামী বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। করোনার পরিস্থিতিতে বাজেটে অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণ করতে হবে এবং সেখানে বর্তমান প্রয়োজন এবং অদূর ভবিষ্যতে কী প্রয়োজন হতে পারে, সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত স্বাস্থ্য খাতে। এছাড়া শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এসবেও প্রাধান্য দিতে হবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এবারো উদ্যোগ ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এবারও জোরালো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ২৩ প্যাকেজ বাস্তবায়নে জোর দেয়া হবে বাজেটে। করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় প্যাকেজগুলো ঘোষণা করা হলেও বাস্তবায়নের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এ কারণে এবার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি বেকায়দার পড়েছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা। লকডাউনের কারণে দেশের প্রায় ৬০ লাখ দোকান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলো চালু করা হচ্ছে না। সামনের ঈদে বেচাকেনা বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ঝুঁকি তৈরি হবে কর্মসংস্থানে। এ অবস্থায় ফের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আগামী বাজেটে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করা হবে। শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরস্থিতি মোকাবেলা করে কিভাবে রফতানি বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্স আহরণ বৃদ্ধি করা যায় সেই কৌশলও নির্ধারণ করা হবে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে। এছাড়া স্বল্পোন্নত (এলডিসি) উত্তরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ দেয়া হবে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলিয়ে অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বাজেটে যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে তা সঠিকভাবে পূরণ হবে। বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ বেশ ভালভাবে করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনা থেকে মানুষের জীবন আগে বাঁচাতে হবে। এজন্য করোনার ভ্যাকসিন আমদানিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। দেশের সবাই করোনার টিকা পাবেন। অন্যদিকে অর্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বাজেট হচ্ছে-চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে টিকে থাকার বাজেট। সারা বিশ্বে দ্বিতীয় দফায় করোনা শুরু হয়েছে। অনেক দেশ আবার লকডাউনে চলে গেছে। এ অবস্থায় রফতানি ও রেমিটেন্সে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দৃশ্যমান। এ কারণে এমন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে যাতে অর্থনীতির এই দুই খাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এছাড়া আগে করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য খাতের অনুকূলে যেসব বরাদ্দ দেয়া হবে তার সঠিক বাস্তবায়ন জরুরী। জানা গেছে, বাজেট ব্যবস্থাপনা সভা এবং আর্থিক ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রথম সভায় আগামী বাজেট কেমন হবে, তার ওপর একটি আগাম ধারণাপত্র দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে করোনা মোকাবেলা করে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওই সভায় জানানো হয় ২০২১-২২ অর্থবছরে সম্ভাব্য জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, মূল্যস্ফীতির হার হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট বিনিয়োগের হার হবে জিডিপির ৩২ শতাংশ (বেসরকারী ২৪.৫ ও সরকারী ৭.৫ শতাংশ), মোট রাজস্ব আয় হবে জিডিপির ১০ দশমিক ৮ শতাংশ, মোট ব্যয় হবে জিডিপির ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মোট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রাথমিক ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশ এবং জিডিপি হবে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া বাজেটের আকার ১০-১২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার কোটি থেকে ৬ লাখ কোটি টাকা করা হতে পারে। বর্তমান ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার যৌক্তিকভাবেই বিবেচনা করছে। যেহেতু করোনার প্রাথমিক ধাক্কাটা সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে, এখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের একটি প্রক্রিয়ায় রয়েছি, সেই প্রক্রিয়াটি একটু দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী বাজেটে কর্ম-সৃজনের প্রাধিকার দেয়া, একইসঙ্গে গ্রামীণ অবকাঠামো বা সরকারের আমার গ্রাম আমার প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর বিস্তার এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে।
×