ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে পৃর্থকস্থানে দু’টি হত্যাকান্ড

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২১ এপ্রিল ২০২১

রাজধানীতে পৃর্থকস্থানে দু’টি হত্যাকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে পৃর্থকস্থানে দু’টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নিজ মেয়েকে বাবার মারধর বাধা দেয়ায় প্রতিবেশী রনি মিয়া (১১) নামে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাষান্ড ফয়েজ মিয়া। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ফয়েজ মিয়া পলাতক রয়েছে। এদিকে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে কিশোর রনির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান। নিহত কিশোর রনির বাবার নাম মোঃ রায়হান মিয়া একজন শ্রমিক। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার বরমোপাড়ায়। তারা খিলক্ষেত থানার বালুরমাঠ মধ্যপাড়া এলাকার ৪০/৩ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। নিহতের মামা মোঃ স্বপন মিয়া জানান, আমার বোনের একমাত্র ছেলে রনি। কী দোষ ছিল আমার ভাগিনা রনি? তিনি জানান, গত ১৬ এপ্রিল বিলে ৫টার দিকে পাশের বাসার ফয়েজ মিয়া তার ছোট মেয়েকে মারতে ছিল। এ সময় বাসায় কেউ ছিল না। আমার ভাগ্নে রনি এগিয়ে গিয়ে বলেন, মামা ওকে মারতেছেন কেন ছেড়ে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফয়েজ ঘরে থাকা প্লাস্টিকের বড় মূর্তি দিয়ে রনিকে বেধড়ক মারপিট করেন। তার ডান পাঁজরে মারাত্মক আঘাত লাগে। পরে আমার বোন গোসল করাতে গেলে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। আমার ভাগ্নে রনি বলে, তোমরা ঝগড়া করবে বলে কিছু বলিনি। মঙ্গলবার ইফতার শেষে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আশিয়ান সিটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার দিকে রনির মৃত্যু হয়। পরে বাসায় নিয়ে এলে খবর পেয়ে পুলিশ রনির লাশ উদ্ধার করে বুধবার দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠায়। খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান জানান, গত ১৬ এপ্রিল মধ্যপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ফয়েজ মিয়া নামের এক ব্যক্তি তার নিজের মেয়েকে মারার সময় পাশের রুমের থাকা কিশোর রনি মিয়া বাধা দেয়। এতে রাগান্বিত হয়ে ওই বাসায় থাকা একটি প্লাস্টিকের পুতুল দিয়ে ছেলেটির পাঁজরে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এতে রনি গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এরপর তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফয়েজ মিয়া পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। এদিকে রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকা সাজেদা বেগম সাজু (১৮) নামে এক গৃহবধূরকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মাছ ব্যবসায়ী টিটু তালুকদারকে গ্রেফতার করেছে। নিহতের বড় ভাই ফরহাদ জানান, এক বছর আগে টিটুর সঙ্গে সাজেদার বিয়ে হয়। তখন থেকেই তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো। ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে সুদের ওপর টাকা নিয়ে টিটুকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরও আমার বোনের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করত টিটু। তারা টিলাবাড়ি ১৪১/২-এ নম্বর বাড়িতে থাকেন। তার এক বাড়ির পরেই ১৪১/৩ নম্বর বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে একটি টিনসেড দোতলা বাড়িতে থাকতো ছোট বোন সাজেদা। তিনি জানান, আমার মামাতো বোন মাঝ রাতে সেহরির জন্য তাদের ডাকতে গেলে দেখে আমার বোনের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। পরে সে চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাক দেয়। আমরা এসে দেখি সাজুর নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে। পরে খবর পেয়ে পলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। তিনি জানান, আশে-পাশের অনেকেই রাত ১টার দিকে সাজেদার স্বামী টিটুকে বাসার সামনে সিগারেট খাইতে দেখে। তারপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরেরদিন বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ার এক আত্মীয় বাড়ি থেকে নিহতের স্বামী টিটুকে পুলিশ আটক করে। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ টিটুর আপন দুই ভাই জাকের ও মেকার এবং বোন জামাই মাসুদকে আটক করে। নিহতের দাদা আব্দুল জানান, মিরপুর পাইকপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে টিটু। পরে ওই আত্মীয় ও স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। টিটু জানায়, সে বালিশ চাপা এবং গলা টিপে হত্যা করে সাজুকে। হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাওছার আহমেদ ভূঁইয়া জানান, ঘটনার পর নিহতের স্বামী টিটু তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসআই কাওছার জানান, সাজেদার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। নাক দিয়ে ফুফরি উঠছিল। ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী টিটু সাজেদাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে থাকতে পারে। তার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে। তদন্ত চলছে।
×