ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জরুরী প্রয়োজনে সরাসরি ১৪০ কোটি টাকায় ২৭ প্রকারের ওষুধ কেনা হবে ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকার আট ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির

দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ২১ এপ্রিল ২০২১

দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দারিদ্র্যদের কবল থেকে বের করে এনে তাদেরকে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে কাজ করছে সরকার। মানুষের জীবন বাঁচাতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকার ১৪০ কোটি টাকার ২৭ প্রকার ওষুধ কেনার জন্য একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া ২ হাজার ২০৫ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৪১৫ টাকা ব্যয়ে ৮টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বুধবার অনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান অর্থমন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলেন, ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন নগদ দুই হাজার ৫০০ টাকা করে সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ টাকা ছাড়ের লক্ষ্যে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, রিকশাচালকসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ শিগগিরই নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যাওয়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে গরিব থেকে বের করে নিয়ে আসাই আমাদের লক্ষ্য। তাদের সুরক্ষায় আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ অগাধিকার দেয়া হবে। করোনার কারণে নতুন করে কতজন দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে এসেছে সে বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে গবেষণার তথ্য জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অচিরেই এই তথ্য প্রকাশ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে বিতরণ করলে সরকারের বাড়তি প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লাগবে। চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে এ টাকা ছাড় করা হবে। এর আগে করোনার প্রথম দফায় গত বছরের এপ্রিলে দুই কোটি পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার কোটি টাকা করে দেয়া হয়। তাতে খরচ হয় মোট তিন হাজার কোটি টাকা। প্রথম দিকে এ টাকা বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তালিকা সংশোধন করা হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, দরিদ্রদের মূলস্রোতে আনতে বাজেটে বড় একটি বরাদ্দ দরকার, সেক্ষেত্রে নতুন করে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাড়তি কোন বরাদ্দ রাখবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী বাজেট নিবেদিত থাকবে এ দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য। এরাই অগ্রাধিকার পাবে। সুতরাং আমরা মানুষের জীবন জীবিকার জন্যই বাজেটে জায়গা করে দেবো। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে, বৈঠকে ভ্যাকসিনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যে প্রস্তাব এসেছিলো ১৩ হাজার ৮৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য আমরা এসেনসিয়াল ড্রাগস থেকে ঔষধ কিনব। এর বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি নাই এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকল্পও আমাদের সামনে আসেনি। ১৪০ কোটি টাকায় ২৭ প্রকারের ওষুধ কেনা হবে ॥ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকার ১৪০ কোটি টাকার ২৭ প্রকার ওষুধ সম্বলিত ৮০ হাজার কার্টুন ওষুধ কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া বৈঠকে মোট ২ হাজার ২০৫ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৪১৫ টাকা ব্যয়ে ৮টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বুধবার আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সংক্রান্ত ক্রয় প্রস্তাববের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্র্মতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড.শাহিদা আক্তার। অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার জানান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার কর্তৃপক্ষ (সিবিএইচসি) কর্তৃক ২৭ প্রকার ওষুধ সম্বলিত ৮০ হাজার ৭৩৪ কার্টন ওষুধ কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মোট ১৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮২০ টাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেড এর কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এই ওষুধ কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের দুইটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৮২ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৩ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-১ এর নির্মাণ কাজ যৌথ ভাবে চায়নার সিআরইসি এবং বাংলাদেশের সিসিসিএল বাস্তাবয়ন করবে। এ জন্য ব্যয় হবে ৪৩৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ৯০৮ টাকা। বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-২ এর নির্মাণ কাজ যৌথভাবে চায়নার সিসিআরসি এবং বাংলাদেশের এমএএইচএল দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৪৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৫ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন খুলনা ওয়াসা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'খুলনা পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় ১২৪ কি.মি. স্যুয়ারেজ পাইপ লাইন, ৩টি স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন ও ১৩ হাজার ৮০০টি সার্ভিস কানেকশন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার হিসেবে চায়না জিইও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশ কে নিয়োগ দেওয়ার একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৬৯৬ কোটি ৭৬ লাখ ২৪ হাজার ৭২৭ টাকা। বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এর কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি ৫৭ লাখ ৫১ হাজার ১৭১ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়বে ৮ দশমিক ০১২ মার্কিন ডলার। এরআগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সিটি কর্পোরেশন গুলোর জন্য জার্মান থেকে উইড হারভেস্টার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×