ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনায়েতপুরের দক্ষিণে অসময়ে যমুনার ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ১৬:২০, ২১ এপ্রিল ২০২১

এনায়েতপুরের দক্ষিণে অসময়ে যমুনার ভাঙ্গন

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ যমুনায় পানি বাড়ছে সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতুর ভাটিতে এনায়েতপুরের আড়কান্দি চর এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনে বসত ভিটা হারানো মোসলেম, জাকির ও তারামন সহ আরও অনেকেই বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। যমুনা পাড়ে সবার মুখে এখন হতাশার ছাপ। তবে সরকারী প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় দুই সপ্তাহ আগে পাকুরতলা গ্রামবাসির নিজস্ব অর্থায়নে ভাঙন ঠেকাতে বাঁশের প্রতিরোধ বেড়া (সটকা) দেয়া হয়েছে। ৪ বছর পেরিয়ে গেল, কখন শুরু হবে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ। একে একে এলাকার ৬ গ্রামের কত আপনজনের বাড়ি ঘর নদীর পেটে গেল। এরপরও টনক নড়ছে না কেন।” এমন আক্ষেপ ও নানা প্রশ্ন এখন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আড়কান্দি, পাকুরতলা, বাঐখোলা ও পাঁচিল এলাকা বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই এ ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় এলাকা জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে নদীর অদুরে থাকা এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল বিশ্ববিদ্যালয়, নাসিং ইন্সটিটিউড ও দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাট সহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকিতে রয়েছে। এজন্য পাকুরতলা গ্রামবাসির নিজস্ব উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশের বেড়া (সটক) স্থাপন করা হয়েছে। এতেও কাজ হচ্ছে না। তাই দ্রুত স্থায়ী তীর সংরক্ষন প্রকল্প অনুমোদন ও কাজ শুরুর দাবি করেছেন এলাকার বাসিন্দা বাংলাদেশ নদী বাচাঁও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ্যড. আনোয়ার হোসেন। এলাকাবাসি জানান, প্রায় ১৩ বছর ধরে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার দক্ষিণে নদী ভাঙন চলছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমান নদীর পশ্চিমপাড় ঘাটাবাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে ছিল উথুলি গ্রাম। প্রতিবছরই নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় এছাড়া প্রচন্ড স্রোতের কারণে একের পর এক বিলীন হয়। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় ২০ হাজার বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া যমুনার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত চৌহালী উপজেলাধীন হাট বয়ড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৪ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, তাঁতকারখানাসহ বির্স্তীণ ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতিবছরই পানি বৃদ্ধি ও কমার সাথে সাথে যমুনা পাড়ে কান্নার রোল পড়ে। নিস্বঃ হয় বিত্তশালী বহু পরিবার। এই দুর্দশার চিত্র সরেজমিন দেখতে গত ৪ বছরে প্রায় ৮ বার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী সহ পাউবো কর্মকর্তারা এসেছেন। প্রতিবারই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দিয়েছেন স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে নানা প্রতিশ্রুতি। এজন্য ৪বছর আগে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এনায়েতপুরের ব্রাহ্মনগ্রাম-আড়কান্দি থেকে পাঁচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী তীর সংরক্ষণে সাড়ে ৬’শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সে প্রকল্প অনুমোদন হচ্ছে না বলে কাজ শুরু করতে পারছে না তারা। একারণে প্রতি বছরই নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গনে মুখে পড়ে বহু পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন জানান, স্থানীয়রা অনেকটা বাধ্য হয়েই ভাঙ্গন ঠেকাতে নিজস্ব অর্থায়নে বাঁশের সটকা দিয়েছে। তবে পাউবোর পক্ষ থেকে জরুরী কিছু জিও ব্যাগ ফেলার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাড়ে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
×