ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিসিবি’র পণ্য বিক্রিতে প্যাকেজ বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ২১ এপ্রিল ২০২১

টিসিবি’র পণ্য বিক্রিতে প্যাকেজ বিড়ম্বনা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ পবিত্র রমজান মাসে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু টিসিবি’র অধিকাংশ ডিলারদের পণ্য বিক্রিতে প্যাকেজ বিড়ম্বনায় গরীব ও অসহায় মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে সরকারের দেওয়া স্বল্প মূল্যের এ পণ্য থেকে প্রকৃত সুবিধাভোগিরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে আজ বুধবার সকালে টিসিবি’র বরিশাল অফিস প্রধান শহিদুল ইসলাম বলেছেন, প্যাকেজ হিসেবে কোন পণ্য বিক্রির নিয়ম নেই। যার যা প্রয়োজন ভোক্তার কাছে তা-ই বিক্রি করতে হবে। বিষয়টি ডিলারদের জানানো হয়েছে। এরপরেও যদি কোন ডিলারের বিরুদ্ধে প্যাকেজ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্রমতে, রমজান শুরু হওয়ার পর থেকেই নগরীর বিভিন্নস্থানে প্যাকেজ বিক্রি নিয়ে ডিলার ও ক্রেতাদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে। যদিও ডিলারদের কার্যক্রম তদারকির জন্য একজন করে ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু অনেকস্থানের ট্যাগ অফিসারও টিসিবি’র পণ্য বিক্রির নিয়মাবলী জানেন না বলে জানা গেছে। আর কোন কোনস্থানে ডিলারদ্বারা ট্যাগ অফিসার নিয়ন্ত্রিত হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও একযোগে গত ১ এপ্রিল থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ৬ মে পর্যন্ত। প্রত্যেক ডিলার প্রতিদিন বরাদ্দের পরিমান অনুযায়ী আট থেকে ১২শ’ কেজি চিনি, ছয় থেকে ৭৫০ কেজি মশুর ডাল, চার থেকে এক হাজার কেজি ছোলা, ১২শ’ থেকে ১৫শ’ লিটার সয়াবিন তেল, খেজুর একশ’ কেজি ও তিনশ’ থেকে এক হাজার কেজি পেয়াঁজ পাচ্ছেন। যার প্রতিকেজি মূল্য চিনি ৫৫ টাকা, মশুর ডাল ৫৫, ছোলা ৫৫, পেয়াঁজ ২০, খেজুর ৮০ ও সয়াবিন তেল একশ’ টাকা। সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ডিলার ৪/৫টি পণ্যের প্যাকেজ হিসেবে বিক্রি করছেন। এগুলো হচ্ছে তেল ২ লিটার, চিনি ৫ কেজি, ডাল ১ কেজি, ছোলা ৫ কেজি। যার মূল্য দাঁড়ায় ৮০৫ টাকা। আবার কয়েকজন ডিলার ৩ কেজি ছোলা, ২ কেজি চিনি, ২ লিটার সয়াবিন, ৫ কেজি পেয়াঁজ প্যাকেজ হিসেবে বিক্রি করছেন ৫৭৫ টাকায়। অনেকের কাছেই এ প্যাকেজ কেনা সম্ভব হচ্ছেনা। আর ডিলাররা প্যাকেজ বিক্রিতে অনড় থাকায় অনেককেই খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। নগরীর কাউনিয়া এলাকায় টিসিবি’র পণ্য কিনতে আসা ক্রেতা রিকসা চালক রিপন জানান, বাজারে দ্রব্যমূল্য বেশি হলেও সরকার গরীবদের জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। কিন্তু ডিলাররা প্যাকেজ ছাড়া বিক্রি করছেন না। তিনিসহ আরও অনেকেই অভিযোগ করেন, সারা রমজানেও দরিদ্র একটি পরিবারে তিন বা পাঁচ কেজি ছোলা খেয়ে শেষ করতে পারবে না। অথচ ডিলাররা চাহিদা মতো বিক্রি না করে তাদের ইচ্ছেমতো প্যাকেজ করে রেখেছে। নগরীর লঞ্চঘাট এলাকায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন রাজমিস্ত্রির সহযোগি দিনমজুর রাব্বি ইসলাম। তার প্রয়োজন চিনি আর তেল। রাব্বি বলেন, প্রায় এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সামনে গিয়ে শুনতে পাই প্যাকেজ না নিলে ডিলার তার (রাব্বি) চাহিদা মতো পন্য বিক্রি করবেনা। তখন উপায়অন্তুর না পেয়ে পন্য না নিয়েই চলে আসি। লাইনে দাঁড়ানো অনেক নারী ও পুরুষ টাকা না থাকায় পুরো প্যাকেজ কিনতে পারছেন না। একইচিত্র দেখা গেছে, নগরীর কাউনিয়া, লঞ্চঘাট, হাতেম আলী কলেজ এলাকায়। ইয়ামিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী ডিলার মামুন বলেন, আমাদের সব মালামাল চলেনা, তাই এভাবে প্যাকেজ করে বিক্রি করতে হচ্ছে। এটা বৈধ না অবৈধ সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক টিসিবি’র বরিশাল অফিস প্রধান শহিদুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে জানালে তিনি ডিলারকে মুঠোফোনেই শাসিয়ে দিয়ে কোন প্যাকেজ সিস্টেম করা যাবেনা বলে জানান। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, কোন ডিলার যদি নির্ধারিত সময়ে উত্তোলনকৃত পণ্য বিক্রি করতে না পারেন তাহলে ট্যাগ অফিসারের প্রত্যয়ন নিয়ে ওই পণ্য নিজস্ব মুদি দোকানে রেখে টিসিবি’র নির্ধারিত মূল্যেই ব্যানার টানিয়ে বিক্রি করবেন। ডিলারশিপ নিতে হলে একজন ডিলারের মুদি দোকান থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বরিশালে অধিকাংশ ডিলারের নিজের কোন মুদি দোকান না থাকা সত্বেও তারা চালিয়ে যাচ্ছেন ডিলারশীপ। নগরীতে মোট ৬১টি ডিলারের মধ্যে ৩৫ জনের দোকান রয়েছে বাকি ২৬ জনের দোকান নেই। মূলত তারই টিসিবির পন্য প্যাকেজ করে বিক্রি করছেন।
×