ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২১ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট শুরু আজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুই টেস্টের সিরিজটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে। কিন্তু শুরুতে তা ৩ টেস্টের সিরিজ হওয়ার কথা ছিল। করোনা মহামারীর থাবায় বাংলাদেশের অনেকগুলো সিরিজ স্থগিত হয়ে গেছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটিও দুই দফা পিছিয়ে যায়। অবশেষে এক টেস্ট কমিয়ে ২ টেস্টের সিরিজটি আজ মাঠে গড়াচ্ছে। নতুন করে করোনা মহামারীর দাপটে এ সিরিজটি নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়। সবকিছু পেছনে ফেলে আজ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পাল্লেকেলের ক্যান্ডিতে প্রথম টেস্টের ময়দানী লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। উভয় দলের ক্রিকেটাররা করোনার ভ্যাকসিনও নিয়েছেন। করোনা মহামারীর বিরতি কাটিয়ে প্রথম বিদেশের মাটিতে টেস্ট এটি বাংলাদেশের, আবার প্রথম কোন স্থগিত সিরিজও। সাম্প্রতিক সময় দলগতভাবে অবিরাম ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত হলেও বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক প্রত্যয় জানিয়েছেন অতীতের সবকিছু ভুলে আবার জয়ের আশা নিয়েই মাঠে নামবেন তারা। সে জন্য সম্প্রতি ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে যে দুর্দশার চিত্র তা পাল্টাতে হবে, সেক্ষেত্রেও সচেষ্ট বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অবশ্য পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য অপেক্ষা করছে গতিময় পেস সহায়ক উইকেট। তাই সাফল্য পেতে দলের পেসারদের ওপরও নির্ভর করছে বাংলাদেশ। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা দুই দল- কিন্তু এরপরও বিস্তর ফারাক শক্তিমত্তায়। শ্রীলঙ্কা টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ আর বাংলাদেশ ৯ নম্বরে। বর্তমানে এ দু’টিই আনপ্রেডিক্টেবল দল ক্রিকেটে। যদিও ঘরের মাটিতে লঙ্কানরা শক্তিশালী দল, কিন্তু সম্প্রতিই তারা ইংল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। করোনা পরবর্তী প্রথম সিরিজেই দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরেছে। তবে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ঠিকই দুই টেস্টের সিরিজ ড্র করে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে লঙ্কানরা। তাছাড়া ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২ টেস্ট খেলে ১০ টিতেই জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিক দল। এর মধ্যে ২০০৭ সালে একবারই মাত্র ক্যান্ডিতে খেলেছে বাংলাদেশ। সেই টেস্টে লঙ্কানরা ইনিংস ও ১৯৩ রানের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। অবশ্য সেই মাঠটি ছিল আসগিরিয়া স্টেডিয়াম। এবার লঙ্কানদের বিপক্ষে পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। এ মাঠে এবারই প্রথম লঙ্কানদের মুখোমুখি হবেন মুমিনুলরা শ্রীলঙ্কায় সর্বশেষ টেস্টে জয়ের মধুর স্মৃতি নিয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবমিলিয়ে ২০ টেস্ট খেলে ২০১৭ সালে নিজেদের শততম টেস্টে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। তাই শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ভাল করার সক্ষমতা রয়েছে মুমিনুলদের। অবশ্য এখন সেই দলে খেলা সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার বা ইমরুল কায়েস নেই। তবে যারা আছেন তাদের নিয়েই আশাবাদী মুমিনুল বলেছেন, ‘সাকিব দলে না থাকলে কম্বিনেশন নিয়ে কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়। অবশ্যই আমরা তাকে মিস করব। তবে দলে যারা আছে, সবার ভাল করার সামর্থ্য আছে। সাকিবের জায়গায় যেই আসবে তারজন্য দলে অবদান রাখার এটা ভাল সুযোগ।’ ক্যান্ডির এই মাঠে পেসাররা সহায়তা পাবেন তা পরিস্থিতি দেখে অনুমান করা যাচ্ছে। কারণ কয়েকদিন বৃষ্টিতে উইকেটে বেশ ভালভাবেই সবুজ ঘাস গজিয়েছে। সেই ঘাস রেখে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ পেসারদের লড়াই হবে। তাই পেসনির্ভর একাদশই গড়বে বাংলাদেশ। এ নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘যারা আগে খেলেছে তারাই তো সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য আমার কাছে মনে হয়- রাহী, এবাদত, তাসকিন। আমাদের বোলিং আক্রমণ পেসনির্ভর হবে। পেসারদের প্রতিযোগিতাই বেশি হবে।’ সম্প্রতি দলের বিভিন্ন ফরমেটে টানা পরাজয়ে দল এবং অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থ মুমিনুল আছেন চাপের মুখে। কিন্তু পরিস্থিতি যেমনই হোক জয়ের স্পৃহা তার কণ্ঠে, ‘আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলব। আমি আসলে এসব নিয়েই কনসার্ন। অন্য কিছু নিয়ে এত ভাবার দরকার নেই। আমি কোন চাপে নেই, দলও কোন চাপে নেই। যত খারাপ পরিস্থিতি থাকুক- অবশ্যই জেতার আশা থাকতে হবে, স্পৃহা থাকতে হবে।’ লঙ্কান দল অবশ্য আরও শক্ত হয়েছে অভিজ্ঞ এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ফেরার কারণে। তাছাড়া সম্প্রতি পাথুম নিশাঙ্ক, ওশাদা ফার্নান্দো ফর্মের তুঙ্গে আছেন। সঙ্গে লাহিরু থিরিমান্নে, অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ ও দীনেশ চান্দিমালের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের বোলিং বিভাগকে বেশ চ্যালেঞ্জেই ফেলবে। আর পেসারের বিপক্ষে বর্তমানে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সুযোগ নিতে সুরাঙ্গা লাকমাল, লাহিরু কুমারাও ছুড়বেন চ্যালেঞ্জ। তাই মুমিনুল বলছেন, শ্রীলঙ্কাকে হারানোর জন্য সাফল্যের উপায় ব্যাটিং ও পেস বোলিংয়ে ভাল করা। সেজন্য ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুলের দারুণ কিছু করার বিকল্প নেই। বোলিংয়ে এবাদত-রাহীদেরও দারুণ কিছু করা জরুরী। দেখা যাক সেটি করতে পারে কিনা বাংলাদেশ।
×