ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজ্ঞাপন জারি

আগের সব বিধিনিষেধই থাকছে নতুন লকডাউনে

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২১ এপ্রিল ২০২১

আগের সব বিধিনিষেধই থাকছে নতুন লকডাউনে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধের) মেয়াদ একই শর্তে আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে আরও এক সপ্তাহ লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচল, ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ আগের সব বিধিনিষেধের আরোপের সময়সীমা ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল রাত ১২টা (মধ্যরাত) পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। এ সময় চলমান লগডাউনের মতো শিল্প কারখানা খোলা থাকলেও বন্ধ থাকবে সরকারী-বেসরকারী সকল অফিস। বন্ধ থাকবে বাস-ট্রেনসহ সকল প্রকার গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট)। তব্যে নিত্যপণ্য বহনকারী ট্রাক চলাচল করতে পারবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানসমূহও বন্ধ থাকবে। তবে নির্ধারিত সময় কাঁচাবাজার, খাবার হোটেল খোলা থাকবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্র) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা, সংবাদমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। আর অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাড়ি থেকে বের হতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনার অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলোÑ ১. সব সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। ২. বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৩. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরী সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। ৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনানেয়া নিশ্চিত করতে হবে। ৫. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা, যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণবিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেয়া, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারী-বেসরকারী), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। ৬. অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। ৭. খাবারের দোকান ও হোটেল- রেস্তরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। ৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ৯. বোরো ধান কাটার জরুরী প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। ১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। ১১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করবেন। ১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জামাতের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে। ১৩. উপর্যুক্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে। গত বছরের শেষে এবং এ বছরের শেষে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যেতে থাকলেও মার্চ থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এরপর গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে সাত দিনের লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। জরুরী প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে অফিস চালু রেখে এ বিধিনিষেধের মেয়াদ ১১ এপ্রিল রাত ১২টায় শেষ হয়। এ নিয়ে গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু বিধিনিষেধ শুরু হলে গণপরিবহনের অভাবে যাত্রীদের দুর্ভোগের মধ্যে বিক্ষোভের মুখে ৭ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে গণপরিবহন চালু রাখার অনুমতি দেয়। তবে শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাদেরও আন্দোলনের মধ্যে ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে ৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর তা ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত এই বিধি নিষেধ বর্ধিত করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রথম দফায় মানুষের চলাচল ও কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপের ১৪ এপ্রিল (বুধবার) থেকে আটদিনের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এটি আজ ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা যাওয়ায় ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২৬ মার্চ থেকে কঠোর লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করার মধ্যে আবারও বেড়ে যায় করোনা সংক্রমণ। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে।
×