ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তাপপ্রবাহে ফসলের ক্ষতি

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২১ এপ্রিল ২০২১

তাপপ্রবাহে ফসলের ক্ষতি

আবহমান বাংলা গ্রামনির্ভর কৃষিভিত্তিক অঞ্চল হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ধনধান্যে পুষ্পে ভরা এদেশের চিরায়ত বৈভব সমৃদ্ধ কৃষি পণ্যের অভাবনীয় সম্ভারে সুবিদিত। সমুদ্র পরিবেষ্টিত নদীবিধৌত এই অঞ্চলের নরম উর্বর পলিমাটিতে ফসল ফলিয়ে পরিশ্রমী কৃষক সোনার ধান তার গোলায় তোলেন। প্রকৃতির অবারিত দানে এদেশের মাটি ও মানুষ যে মাত্রায় সিক্ত হয়, বিপরীতভাবে নিসর্গ যখন বিমুখ হয়, বিরূপ পরিস্থিতিতে চারপাশ বিবর্ণ করে দেয়, তাও এ দেশের মানুষকে মোকাবেলা করতে হয়েছে যুগে যুগে। প্রকৃতি যখন তার কালো ছায়ায় চারদিকে বিভীষিকা ছড়ায় তার দামও দিতে হয় তার লালিত সন্তানদের। বন্যা, অতিবৃষ্টি, খরা, জলোচ্ছ্বাস-এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। খরা এবং অতিবৃষ্টি নিয়মিত আঘাত হানে আমাদের ফসল উৎপাদনে। কাঠফাটা রোদের তাপপ্রবাহে ফসল নিয়মিত পরিচর্যা সত্ত্বেও বিপন্ন অবস্থায় পড়ে যায়। এবারের খরার মৌসুমের ফসলের ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে তাতে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ৩৩৪ কোটি টাকা। সারাদেশে চলছে প্রচ- তাপদাহ। ৩৬টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা হিটশক শুধু যে ধানের ক্ষতি করছে তা নয়, ভুট্টা, সবজি, চীনা বাদাম, সূর্যমুখী ও কলার ফলনকেও বেহাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। শুধু ধানের ক্ষতি গুনতে হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ওপরে। যা এদেশের মানুষের খাদ্যপণ্যের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে আছে। আর উৎপাদনের নিয়ামক শক্তি কৃষকও পড়েছেন সমূহ ক্ষতির আশঙ্কায়। ৩ লাখ ১০ হাজার কৃষকের ক্ষতি সত্যিই এক ভয়াবহ বিপর্যয়। তবে অত্যধিক তাপপ্রবাহে জর্জরিত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশনা এসেছে। গরম হাওযায় যে সব কৃষকের ক্ষতি হয়েছে তাদের প্রণোদনা দেয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। বিনামূল্যে সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণের মধ্য দিয়ে প্রণোদনাকে কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করার সুপারিশ এসেছে সরকারপ্রধানের কাছ থেকে। জমিতে ফসল উৎপাদনের এই বিপন্ন অবস্থায় কৃষি মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে হিটশক অঞ্চলে প্রণোদনার প্যাকেজও ঘোষণা করেছে সরকার। প্রায় ৪২ কোটি টাকার এই প্যাকেজ আক্রান্ত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যাতে তারা ফসলের সমূহ ক্ষতিকে পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়। শুধু তাই নয়, অতিবৃষ্টি আর অত্যধিক তাপপ্রবাহে যাতে ফসল নষ্ট না হয় তার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল, রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং শিলাবৃষ্টিই শুধু নয় বরং দেশব্যাপী বয়ে যাওয়া উত্তপ্ত বাতাসও বোরো ধান ফলনে বিঘœ ঘটিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে বোরো ধান উৎপাদন প্রায় ১ লাখ টন কমে যেতে পারে। এ বছর হিটশকে মোট বোরো ধানের জমি আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ হাজার ১২৩ হেক্টর। এর মধ্যে ১০ হাজার ২৯৮ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমির ধান আংশিক ক্ষতির সম্মুখীন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপন্ন কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতকরণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে সব কাজ সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের কাছে প্রণোদনা সহায়তা চলে যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অত্যন্ত সাবধান, সতর্কতায় তালিকা প্রস্তুতসহ বিতরণ ব্যবস্থায়ও কঠোর নজরদারি করতে হবে। যাতে পুরো কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা দীর্ঘসূত্রতার কবলে না পড়ে।
×