ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সাফল্য ধরে রাখাই কাজের কাজ

প্রকাশিত: ২১:০৮, ২০ এপ্রিল ২০২১

সাফল্য ধরে রাখাই কাজের কাজ

আমরা যে বাংলা বছরটি অতিক্রম করলাম তার মতো কঠিন নিদারুণ আর বিভীষিকাময় কোন বছর আগে দেখিনি। ষাট পেরিয়ে যাওয়া আমরা বহু পতন দেখেছি। দেখেছি কঠিন সময় । মুক্তিযুদ্ধের মতো কঠিন সময়ও দেখেছি আমরা। সে সব ইতিহাস। হত্যা-নিপীড়ন চোখে দেখার পরও বলব এমন সময় আসেনি আগে। শুধুই কি বাংলাদেশ? পুরো দুনিয়া আজ আতঙ্কে ভয়ে মুহ্যমান। বিগত প্রায় আড়াই দশক পৃথিবীর উন্নত ও জীবনযাপনের মানে সেরা এক দেশের সেরা শহর সিডনিতে বাস করি। আজ সেখানেও আমরা ভাল নেই। কেউ ভাল নেই কোন দেশে। গেল বছরের নাম দু’হাজার বিশ না হয়ে ‘দু হাজার বিষ’ হলেই ভাল হতো। বিশ্ব মোড়ল নামে পরিচিত আমেরিকাও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। তাদের দেশে এত বিজ্ঞানী এত উন্নতি এত গবেষক তারপরও মারা গেছেন কয়েক লাখ মানুষ। আমেরিকায় কয়েক লাখ মানুষ মারা গেলেন মহামারী করোনায় আর তাদের বিগত প্রেসিডেন্ট বললেন, এ কোন রোগই না। এমন পরিহাস আর উপহাসপ্রবণ নেতাদের হাতে চলছে বিশ্ব। চীন রাশিয়া যুক্তরাজ্য কোন দেশ পারেনি এই ঘাতকের হাত থেকে বাঁচতে। এ বছর ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশের আয় উন্নতি ব্যাহত হয়েছে। আমাদের তথ্য প্রবাহ অবাধ আর মুক্ত হলে আরও সত্য জানা যেত। সে সম্ভাবনা যেহেতু নেই বলতেই হবে বাংলাদেশের উন্নয়ন কাগজে কলমে কতটা তার একটা পরিসংখ্যান সরকারের স্বার্থেই জানা জরুরী। গেল বছরের শেষদিকে আমরা কি খবর পেলাম? বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞান জানা দেশের সূচকে আমরা ১৩৮টি দেশের তালিকায় আছি ১২১ নম্বরে। যে পাকিস্তানকে আমরা জাতীয় আয়, টাকার মান, শিশু মৃত্যু নারী উন্নয়নে হারিয়েছি বলে গর্ব করি, সে পাকিস্তানও আছে আমাদের আগের সারিতে। এ কথা মানতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও জড়িতরা বাদে লেখাপড়া নিয়ে সরকারের তেমন মাথা ব্যথা নেই। একটি দেশের ভিত্তি যে মেধা সেটাই আজ নিদারুণ দুর্বিপাকে। কি ভয়াবহ কথা। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ দুঃসংবাদ নিয়ে আমরা প্রবেশ করছি আরেকটি নতুন বছরে। আপনি আমি আমরা যে দেশে যে সমাজে বাস করি না কেন একটা বিষয় দেখি দেশে লেখাপড়া আছে সবার নিচে। এই যে স্কুল কলেজ বন্ধ অনলাইনে কোনরকমে কাজ সারা, এর প্রতিকার নিয়ে কেউ কি মাথা ঘামায়? করোনার এই ভয়াবহতার পরও দেশে হত্যা জখম খুন ধর্ষণ কমেনি। বেড়েছে অনাচার। সেসব কিছু বাদ দিয়ে একদল মানুষ নেমেছে দেশ ও জাতিকে পেছনে টানার কাজে। তাদের মাথায় এক চিন্তা এক ভাবনা। কিভাবে আমাদের সব অর্জন নষ্ট করে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গুঁড়িয়ে দেশ ও জাতিকে উগ্র করে তোলা যায়। সে ধান্দায় এরা গেল বছর নেমেছে ভাস্কর্য ভাঙ্গার কাজে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টানদের ওপর হামলা করতে করতে হাত পাকানো এরা এবার হাত দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে। জাতির জনকের কন্যার শাসনামলে তারা আওয়ামী লীগের তোয়াক্কা না করেই ভেঙ্গেছে তাঁর ভাস্কর্য। কি ভয়ঙ্কর কথা! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সঙ্গে আপোসে সমাধান করার জন্য বৈঠকও করেছেন। একবার ভাবুন, সরকারবিরোধী কোন রাজনৈতিক দল মাঠে নামতে পারে না, আর এরা বঙ্গবন্ধুকে ভেঙ্গেও মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারে। এতে প্রমাণ হয় রাজনীতি কত দুর্বল আর ভঙ্গুর এখন। দেশের পাশাপাশি বিদেশের অর্থনীতির অবস্থাও খারাপ। কেউ কাউকে সাহায্য করার জায়গায় নেই। তারপরও বাংলাদেশের যেসব মেধাবী মানুষ পরিশ্রমী মানুষ অর্থনীতিকে সচল রাখেন তাদের খবর নেই কোথাও। জাতির সেরা সন্তান কৃষক শ্রমিক পোশাক শিল্পীদের কোন খবর থাকে না মিডিয়ায়। তারা সামনে থাকলে মানুষ এসব আজেবাজে নেতার মুখ দেখা থেকে মুক্তি পেতেন। বড় কঠিন সময় অতিক্রম করছে জাতি। একের পর এক মেধাবী সন্তান সেলিব্রেটিদের চলে যাওয়া দেশ ও জাতিকে প্রায় মেধাশূন্য করে ফেলছে। মহামারীর এই কঠিনকাল মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে আমাদের সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি এতিম হয়ে পড়বে। এখনও কিছু মানুষ মিথ্যা আর অন্ধ মোহে জাতির বারোটা বাজাতে ব্যস্ত। তারা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে আজেবাজে কথা বলে করোনাকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। আমার এক অনুজ বন্ধু মেধাবী ছড়াকার সফল অধ্যাপক করোনা আক্রান্ত। উজবুকের দল তাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছে সে তো মাস্ক পরত, তবু তাকে করোনা ধরল কেন? এরা এতই আহাম্মক যে, বুঝতে পারে না তাদের মাস্ক না পরার কারণেই অন্যরা আক্রান্ত। এমন ধারণা একজন দুজন না হাজার হাজার মানুষের। এদের বাদ দিয়ে দেশ ভাল থাকতে পারে না। এসব বিষয়ে মিডিয়ার নজর দেয়া দরকার। বেশি বেশি করে প্রচার আর উদ্যোগ নিলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আজকের বাংলাদেশে এর কি কোন বিকল্প আছে? একা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সামলাবেন? দেশে-বিদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার আর ভ-ামি তাতে অন্তত এটুকু জানি সরকারের ভেতরে-বাইরে কঠিন আদর্শবাদী মানুষজন সামনে না থাকলে সমস্যা অতিক্রম করা প্রায় অসম্ভব। এই অপপ্রচারকারীরা অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের বিপুল অর্থ ও নেটওয়ার্ক সারা দুনিয়ায়। তারা বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে দমাতে না পারলেও করোনা বা যে কোন অমানবিক উপায়ে তাদের স্বার্থ হাসিলে তৎপর। এদের কঠোর হাতে দমন করা দরকার। গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের নামে এরা চায় আওয়ামী লীগ তথা সরকারের বিপদ ডেকে আনতে। করোনাজয়ী বাংলাদেশ তাই এদের ভাল লাগার কথা না। সরকারেও ঢুকে আছে কিছু আজেবাজে মানুষ। চারদিকে খাই খাই ভাব। এদের দমিয়ে সঠিক মানুষ সঠিক নেতাদের সামনে আনলে আমরা নিশ্চিত থাকব। সময় এসেছে বাংলা নববর্ষে বাংলাদেশকে বদলে দেয়ার। বলাবাহুল্য এবারের ব্যর্থতা বৈকোনভাবে শুধরাতে না পারলে এ দেশ এ জাতি কত বছর পিছাবে তা কেউ জানে না। সময় থাকতে সাধু সাবধান। [email protected]
×