ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরোদমে চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকম

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২১

পুরোদমে চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ চললেও পুরোদমে চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। নিয়মিত খালাস হচ্ছে ভোগ্যপণ্য, মেগা প্রকল্পের পণ্য, সিমেন্টের ক্লিংকার, ইস্পাত খাতের স্ক্র্যাপবাহী জাহাজসহ বিভিন্ন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পণ্য। বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শুধু দাফতরিক কাজের জন্য শিফট করে কাজ চলছে। বন্দরের অপারেশনের কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। তাই স্বাভাবিক সময়ের মতো চট্টগ্রাম বন্দর সচল রয়েছে। গতবারের মতো এবার কোন সমস্যা হবে না। মেগা প্রকল্পের পণ্যগুলো দ্রুত ছাড় দেয়া হচ্ছে। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বন্দরের পণ্য খালাস ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। আটকা পড়ে মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর ৩৫০ কোটি টাকার সরঞ্জাম। আটকে পড়া পণ্যগুলো দ্রুত খালাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সে বছরের ২৭ এপ্রিল পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় পণ্য খালাস করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বছর করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে ১৩ নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এতে বলা হয়েছে সব সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। বন্দরের সচিব জানান, সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, ব্যাংকসহ আমদানি-রফতানি ও ডেলিভারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নির্বিঘ্ন সেবা পেলে ২৪ ঘণ্টাই চালু রাখা যাবে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি পণ্য ওঠানামা সচল রাখতে তিনটি বিভাগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে বন্দরের পরিবহন বিভাগ। এই বিভাগের অন্তত ১ হাজার ২০০ কর্মী কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বন্দর সচল রাখতে কাজ করছে। পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর পর পরিবহন বিভাগের অনেক কর্মী কাজে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করে। তারা আতঙ্কিত। তবে শীর্ষ কর্মকর্তারা জেটিতে-শেডে দাঁড়িয়ে থেকে কর্মীদের কাজে গতি আনতে কাজ করছেন। এ জন্য অন্য কর্মীরা এখন নিয়মিত কাজ করছেন। বন্দরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো মেরিন বিভাগ। এই বিভাগের কর্মীরা বহির্নোঙরে আসা বিদেশী জাহাজে উঠে বিদেশী নাবিকদের নিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ বহির্নোঙর থেকে কর্ণফুলী নদী দিয়ে চালিয়ে আবার জেটিতে আনেন। একইভাবে আবার পণ্য ছাড় শেষে জাহাজটি চালিয়ে নিয়ে যান তারা। ঝুঁকি আছে জেনেও তারা প্রতিদিন এ কাজ করছেন। জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর পর সেটি বন্দর থেকে দ্রুত ছাড় দেয়া নির্ভর করে বন্দর গেটে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর। এ ছাড়া বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশপথে কর্মীদের করোনা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও একই সঙ্গে চোরাচালান ঠেকাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ। চট্টগ্রাম বন্দরে সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। প্রত্যেকেই এই বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ করছেন। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। তবে গত বছর লকডাউনের মাঝে শত শত টন পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডে এসে জমা হলেও শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ডেলিভারি হয়নি যথাসময়ে। একটা সময় অনেক দেশই জাহাজ বন্ধ রেখেছিল। এ ছাড়া ক্রয়াদেশ না থাকায় তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানিও বন্ধ থাকে। এ ছাড়া ১৫ কর্মী করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়ায় বন্দরের কাজে আরও বিঘ্ন ঘটে। এ বছরও এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা সে বিষয়ে বন্দরের সচিব জানান, শ্রমিকদের নিরাপত্তায় আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই এবার শ্রমিক সঙ্কট নেই। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন জানান, বন্দর ও কাস্টমসের কাজকর্ম এখনও পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হয়নি। ডকুমেন্টেশনসহ বেশিরভাগ কাজই সশরীরে গিয়ে করতে হয়। এসব কাজে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকেন, তারা যেন যাতায়াতে বাধার মুখে না পড়েন তা দেখতে হবে। প্রয়োজনে বন্দর থেকে তাদের জন্য সাময়িক কোন পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে পণ্য জাহাজে তোলা, খালাস ও ডেলিভারি ব্যাহত হতে পারে। করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের মাঝেও ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে আমদানি-রফতানি উভয়ই বেড়েছে। আমদানি-রফতানির গতি বাড়তে থাকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনকারী শিপিং লাইনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মার্চে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেনার এসেছে ১ লাখ ১৭ হাজার টিইইউ (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিটস) বা একক, আর রফতানি পণ্যভর্তি কনটেনার ছিল ৬০ হাজার ১৫২ একক। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেনার এসেছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ একক। আর রফতানি ছিল ৫৭ হাজার ৮৫৪ একক। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, কঠোর বিধিনিষেধে পণ্য খালাসের গতি কমে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু গতবারের মতো হয়নি। এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস হচ্ছে। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ছিদ্দিক এ্যান্ড সন্সের মালিক ওমর ফারুক ছিদ্দিকী বলেন, রমজান উপলক্ষে মধ্যপ্রাচ্য থেকে খেঁজুর আমদানি করেছিলাম। বন্দরে আসার পর কয়েক দিনের মধ্যে জাহাজ বার্থিং পায়। পণ্য খালাস হয়ে এখন বাজারে চলে গেছে।
×