ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ রয়েছে ১১২টি

মহাখালীতে এক হাজার শয্যার কোভিড হাসপাতাল উদ্বোধন

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৯ এপ্রিল ২০২১

মহাখালীতে এক হাজার শয্যার কোভিড হাসপাতাল উদ্বোধন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে রাজধানীর মহাখালীতে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে’র সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। এতে হতাশার মধ্যে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন রাজধানীবাসী। এই আইসোলেশন সেন্টারেই ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক আইসিইউ সমমনা শয্যা তৈরি করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ রয়েছে ১১২টি, এইচডিইউ ১০০টি। এছাড়া এই হাসপাতালের প্রতি বেডে থাকছে অক্সিজেনের ব্যবস্থা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেন, গত দেড় মাসে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর হার। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে এই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশ খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টানিয়ে তারা চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেই জায়গায় আমরা একটি উন্নত পরিবেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। গত বছর যখন দেশে করোনা রোগীর সংক্রমণের হার বেড়ে যায়, তখন রাজধানীর বসুন্ধরা এবং মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত রোগী না থাকায় বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ডিএনসিসি মার্কেটের আইসোলেশনের পরিবর্তে বিদেশগামীদের জন্য করোনা পরীক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন এই আইসোলেশন সেন্টারেই ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক আইসিইউ সমমনা শয্যা তৈরি করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ রয়েছে ১১২টি, এইচডিইউ ১০০টি। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা অনুপাতে আইসিইউর সংখ্যা কম জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আইসিইউ সঙ্কটের বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। বাস্তবিক অর্থে ঢাকায় সরকারী- বেসরকারী হাসপাতালে আইসিইউর সংখ্যা কম। তবে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউর চেয়ে অক্সিজেনের দরকার বেশি হয়। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। পাশাপাশি ডায়ালাইসিসের জন্য পাঁচটি শয্যা রয়েছে। এছাড়া ১০টি ভিআইপি ক্যাবিন ও ৮টি এসি ক্যাবিন স্থাপন করা হয়েছে। এখন দেশে যে পরিমাণ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে, তার অধিকাংশই তরুণদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেশি দেখা গেলেও মৃত্যুর হার কম। বরং তারা পরিবারের সবাইকে করোনা আক্রান্ত করছেন। তাদের বয়স্ক বাবা-মা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছেন। তাই অপ্রয়োজনীয় বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি মার্কেট নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মার্কেটটি চালু হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মার্কেটটিতে করোনা হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেই। প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, এ মার্কেট নির্মাণে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ডিএনসিসি। যার খরচ দোকানির কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল। কিছু দোকানি এখনও দোকান ফেরত চান। তাদের মধ্যে ১১ জন আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। এই দোকানির মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দেশে প্রশিক্ষিত নার্স সঙ্কটের কথা জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, এই হাসপাতাল ক্যাম্পাসে নার্সিং কলেজ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব এখানে নার্সিং কলেজ স্থাপনের জন্য। তা করা হলে দেশের স্বাস্থ্য খাত আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। এছাড়া এই হাসপাতালে এখন করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি অপারেশনের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এদিকে দেশে করোনা পরিস্থিতি ভবাবহ আকার ধারণ করছে। মৃত্যু ও আক্রান্তে প্রায় প্রতিদিনই নিত্য নতুন রেকর্ড হচ্ছে। মুহূর্তে এভাবে রোগী বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই মিলছে না রোগীদের। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে সরকারী হাসপাতালে আইসিইউ দূরের কথা, মিলছে না সাধারণ বেডও। মন্ত্রী, এমপি, সচিবের তদ্বিরেও কাজ হচ্ছে না। এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন স্বজনরা। ঘুরে-ফিরে যখন বেড মিলছে না, তখন বাধ্য হয়ে কোন হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিচ্ছেন তারা। নিজেরাই অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্বজনরা রোগীর জন্য একটি বেডের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চাতক পাখির মতো দুঃসহ সময় পার করছেন। রাজধানীর সরকারীভাবে ডেডিকেটেড ঘোষিত করোনা হাসপাতালে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সব আইসিইউ বেড পূর্ণ। খালি নেই এখন করোনা ইউনিটের সাধারণ বেডও। কারও মৃত্যু কাম্য নয়, তবুও যেন কারও মৃত্যুর খবরে আইসিইউ বেড খালি হবে ভেবে অপেক্ষায় সময় পার করছেন রোগীর স্বজনরা। রাজধানীতে মুমূর্ষু করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারী- বেসরকারী উভয় ধরনের হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) একটি শয্যা পাওয়া ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। সম্প্রতি মহামারী এ ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে আইসিইউ-এর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এমন কি অনেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করাও রীতিমতো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। মুহূর্তে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা মুমূর্ষু করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ। শয্যা ফাঁকা না থাকায় বহু মুমূর্ষু রোগীকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক নেতা কারও সুপারিশেই এখন আর আইসিইউ শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না। আইসিইউ চিকিৎসকরা বলছেন, শয্যা খালি না থাকলে যত বড় সুপারিশ কিংবা যত মুমূর্ষু রোগীই হোক না কেন তারা নিরুপায়। তারা বলেন, আইসিইউতে কোন রোগীর মৃত্যু কিংবা তিনি সুস্থ হয়ে না উঠলে শয্যা খালি হয় না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত ১০টি সরকারী হাসপাতালের নয়টিতে সর্বমোট আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৩২টি। এর মধ্যে ১৩১টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। একটি হাসপাতালে মাত্র একটি বেড ফাঁকা রয়েছে। শুধু সরকারীতে নয়; বেসরকারী নয়টি হাসপাতালের সাতটিতেই একটিও শয্যা ফাঁকা নেই। করোনা ডেডিকেটেড নয়টি বেসরকারী হাসপাতালে সর্বমোট আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৭৩টি। বর্তমানে মাত্র দুটি হাসপাতালের ১১টি শয্যা ফাঁকা রয়েছে।
×