ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিব শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যার সাফল্য

প্রকাশিত: ২০:১৮, ১৯ এপ্রিল ২০২১

মুজিব শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যার সাফল্য

কোভিড-১৯ দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের প্রায় ২০৪ দেশ বর্তমানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। অতীতে অন্য কোন মহামারীতে বিশ্বের এত বেশি সংখ্যক দেশ আক্রান্ত হয়নি। বরফের দেশ, ঠান্ডার দেশ, গরমের দেশ , নাতিশীতোষ্ণ দেশসহ সব দেশই আক্রান্ত। তবে ঠান্ডা ও বরফ দেশগুলোর তুলনায় গরম দেশগুলোতে আক্রমণের তীব্রতা ও মত্যুর হার অনেক কম। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এ যাবতকালের সফলতা ও ব্যর্থতা বিচার করতে হলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। জনসংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৩২৯.৪৮ মিলিয়ন, রাশিয়া ১৪৬.৭০ মিলিয়ন, জার্মানি ৮৩.৭৮ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ৬৭.৮৮ মিলিয়ন, ফ্রান্স ৬৫.২৭ মিলিয়ন, ইতালি ৬০.৪৬ মিলিয়ন এবং স্পেন ৪৬.৪৯ মিলিয়নের অধিকারী। উল্লিখিত অতি উন্নত দেশগুলোতে অতিমাত্রায় কোভিড-১৯ সংক্রমণকালীন সময়ে এক একটি দেশে আলাদাভাবে দৈনিক গড়ে ৫শ’ হতে ৪ হাজারের অধিক পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে। উল্লিখিত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত বাকি দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা (১৬৫.৬ মিলিয়ন) বেশি। অতিমাত্রায় কোভিড-১৯ সংক্রমণকালীন সময়ে বাংলাদেশে দৈনিক গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫ হতে ৮০। বিশ্লেষিত তথ্যাবলীতে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা সর্বনিম্ন। কমিউনিস্ট দেশে রেজিমেন্টেড সোসাইটিতে ভিন্ন চিত্র এবং সেখানে তথ্যের সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। প্লেগের পর কোভিড-১৯ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তখন এ্যান্টিবায়োটিক ছিল না, ভ্যাকসিন ছিল না তথাপি প্লেগ কোন কিছু ছাড়াই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। অথচ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরও কোভিড-১৯ প্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, আরও যেন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে পরিবর্তিত (ভ্যারিয়েন্ট) কোভিড-১৯ এর আবির্ভাব ঘটেছে। ভ্যারিয়েন্ট কোভিড-১৯ সদ্য আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাকে ফাঁকি দিয়ে বিস্তার ঘটাচ্ছে, আগের চেয়ে দ্রুততর গতিতে ছড়াচ্ছে এবং এর উপসর্গ ও মৃত্যুর হারও আগের চেয়ে অনেক বেশি। অতি উন্নত, উন্নত, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র সব দেশই কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অতি-উন্নত দেশগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হতে পারছে না। প্রকৃতির শক্তি সীমাহীন। তাই প্রকৃতির গর্ভে জন্ম নেয়া কোভিড-১৯ অপ্রতিরোধ্য। কোন কৌশলই এর গতিকে থামাতে পারছে না। এ যেন প্রকৃতির সীমাহীন শক্তির বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীদের সীমিত শক্তির লড়াই। ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরাও আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাকে ফাঁকি দিয়ে মহামারী জারি রাখার জন্যই যেন ভ্যারিয়েন্ট কোভিড-১৯ এর আবির্ভাব ঘটেছে । এটা বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের প্রতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শিল্পোন্নত দেশ, অতি শিক্ষিত ও ধনী দেশ ইতালিতেও লকডাউন পদ্ধতি সফল হয়নি। অনেকের ধারণা সময়মতো লকডাউন জারি করা হয়নি তাই সফল হয়নি। কিন্তু চলমান সংক্রমণের মধ্যে লকডাউন জারি করার সঠিক সময় কোন্্টি? লক্ষণবিহীন সংক্রমণ এবং লক্ষণযুক্ত সংক্রমণ একই সঙ্গে বিদ্যমান। পৃথক করার উপায় কি? লকডাউনের ফলে মানুষ সীমিত কমিউনিটি স্পেসে স্থিতাবস্থায় জনাকীর্ণ পরিবেশ তৈরি করবে এবং সংস্পর্শজনিত কোভিড-১৯ সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে? ফলে সংক্রমিত গণমানুষ ব্যাপক উৎস বা আধার হিসেবে কাজ করতে পারে এবং লকডাউন শিথিল হলে তারা বিস্তৃতভাবে বিস্তার ঘটাবে। তা ছাড়াও লকডাউন চলমান থাকা অবস্থায় কনসেনট্রেটেড উৎস হতে কিছু সংখ্যক আশপাশে উপচে পড়তে পারে। সেটা রোধ করা যাবে কিভাবে? মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বর্তমান লকডাউনের আগে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। গত বছরের ন্যায় আবারও গ্রামে কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের দেশে লকডাউন কতটা সফল হবে তা আরও কিছুদিন পর বোঝা যাবে। শিল্প-কারখানা ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব এখনও ঘটেনি। ঢাকার বস্তি এলাকাগুলোতে কোভিড-১৯ এর অস্তিত্ব এখনও মেলেনি। ঢাকায় রিক্সাওয়ালাদের মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের তথ্য জানা যায়নি। এ সব বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পেতে গবেষণা প্রয়োজন। আক্রান্ত সিনিয়র সিটিজেন বা বয়স্করাই অধিক হারে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে যারা দরিদ্র নয়। তাদের ঘরের বাইরে গমনের ওপর লকডাউন আরোপ করা যুক্তিযুক্ত হতে পারে। তা ছাড়া তারা যদি কম বয়সী যারা হরহামেশা ঘরের বাইরে গমন করে থাকেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলেন তাহলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার বিশ্লেষণের পরিসংখ্যান বাংলাদেশের সাফল্যের খতিয়াান। যেমন ইতালিতে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ৩.০৩%, যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর হার ২.৯০%, জার্মানিতে মৃত্যুর হার ২.৬০%, রাশিয়াতে মৃত্যুর হার ২.২১%, ফ্রান্সে মৃত্যুর হার ১.৯৫%, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর হার ১.৭৯%। অন্যদিকে বাংলাদেশে আক্রান্ত প্রায় ৭.১২ লাখ এবং মৃত্যুর হার ১.৪৩% যা উল্লিখিত অতি উন্নত দেশগুলোর তুলনায় সর্বনিম্ন। অতি-উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসক, নার্স, আইসিইউ, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ইত্যাদির যে আয়োজন বাংলাদেশের জন্য সেটা স্বপ্ন। শুধু সম্পদ ও অর্থের সামর্থ্য দ্বারা সবকিছু হয় না। সীমিত চিকিৎসার আয়োজন নিয়ে মৃত্যুর হার কমানোর পাশাপাশি মৃত্যু প্রতিরোধেও বাংলাদেশের কৃতিত্ব অসাধারণ। মুজিব শতবর্ষে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ্বে উদাহরণ হিসেবে থাকবে এবং আগামী প্রজন্মের সামনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। লেখক : সাবেক পরিচালক প্রশাসন, বিএসএমএমইউ এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা
×