ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় ২২ আবাসনের বেহালদশা

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ১৮ এপ্রিল ২০২১

কলাপাড়ায় ২২ আবাসনের বেহালদশা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ গৃহহীনদের জন্য সরকারী পুনর্বাসনে নির্মিত আশ্রয়ন, আবাসন ও গুচ্ছগ্রামের এখন চরম বেহাল দশা। ২২টি প্রকল্পের ১৪৯ টি ব্যারাকের ১৪৮৭ কক্ষের শতকরা ৭৫ ভাগ ব্যবহার উপযোগীতা নেই। বেড়া নেই, চালের টিন নেই, থাকলেও জং ধরে ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে ভিজে যায় মানুষের আসবাবপত্র। ব্যবহার উপযোগী টয়লেট নেই। নেই আলাদা রান্নাঘর। কয়েকটি প্রকল্পের টিন-চাল উধাওয়ের পরে লোহার স্ট্রাকচার পর্যন্ত গায়েব হয়ে গেছে। বছরের পর বছর দূর্ভোগে থাকা মানুষগুলো এসব ব্যারাকের কক্ষগুলো মেরামতের দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে উদাসীন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এসব আবাসনের ঘাটলা ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ও মেরামতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্প থেকে এক কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ওই টাকা কোন কাজ না করে এক ঠিকাদার সম্পুর্ণ তুলে নেয়। বিষয়টি ধরা পড়লে ফের সমুদয় টাকা সরকারী খাতে ফেরত জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এসব কারনে আবাসনের দরিদ্র বাসীন্দাদের উন্নয়ন হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণের প্রায় এক যুগ পর এখনও এসব আবাসন/আশ্রয়নের ৩৯৩টি কক্ষ খালি রয়েছে। এটি উপজেলা ভূমি প্রশাসনের হিসাব। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অন্তত ৫০০ কক্ষ খালি রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে এসব আবাসনের চরম বেহালদশার চিত্র দেখা গেছে। অধিকাংশ আবাসনের ব্যারাকের চালের টিন জং ধরে ক্ষয়ে গেছে। বেড়া নেই। দরজা নেই। এমনকি আয়রন স্ট্রাকচার পর্যন্ত নেই। কয়েকটি আবাসনে থাকার মতো কিংবা বসবাস উপযোগীতা নেই। শ্রমজীবী, ভূমিহীন, বসতভিটে নাই এমনসব ছিন্নমূল মানুষকে বসবাসের জন্য সরকার আশ্রয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি আবাসন ও গুচ্ছ গ্রাম করেছে। কিন্তু নির্মাণের সময় অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতার পাশাপাশি স্থান নির্ধরণেও রয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত। ছিন্নমূল মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা থেকে এতোটা দুরে এসব আবাসন প্রকল্প করা হয়েছে যে, পুনর্বাসিত মানুষকে যোগাযোগে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে অনেক অর্থ। এসব ঘরগুলো এখন উধাও হয়ে যাচ্ছে। টিন বেড়া, চাল খুলে কেউ কেউ বিক্রি করে দিয়েছে। নীলগঞ্জ, ধূলাসাওে এমন অবস্থা দেখা গেছে। অনেক ব্যারাক হাউস নির্মাণের পরে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও কাগজপত্রে বরাদ্দ দেয়া হয়নি বসবাসকারীদের। কয়েকটি আবাসন প্রকল্পের মাঠ-পুকুর প্রভাবশালী লোকজন দখল করে নিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার গভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে আছে। ফতেহপুর এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। কমিউনিটি সেন্টার কোন কাজে আসছেনা। উত্তর চাকামইয়ার দিত্তায় এমনটা দেখা গেছে। বর্তমানে সহস্রাধিক অতিদরিদ্র পরিবার চরম দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। কোন উপায় যাদের নেই তারাই কেবল পলিথিন টানিয়ে এসব আবাসনে কোনমতে বসবাস করছেন। ফাঁসিপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, ‘বর্তমানে টয়লেট ও নলকূপের সমস্যা আমাদেও বেশি। জরুরীভিত্তিতে এগুলো সংস্কার করা দরকার’। সাধারণ সম্পাদক সুধীর চন্দ্র দাস বলেন, ‘আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ঘরগুলো উচু করে মাঠি ভরাট না দিলে ঘরে থাকা যাবে না।’ অথচ সরকারের পরিকল্পনা ছিল ছিন্নমূল, যাদের ঘরবাড়ি নেই সেসব শ্রমজীবী মানুষকে বসতভিটা, একটি ঠিকানা দেয়া। এসব মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সমবায় অফিসের মাধ্যমে হাঁসমুরগী, মৎস্যচাষ, গবাদিপশু পালন, সেলাইসহ কর্মদক্ষতার উন্নয়নে বিভিন্ন ট্রেডের প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে ঋণের ব্যবস্থা করার। কিছু আবাসনের জন্য এসব প্রকল্প চালু থাকলেও অধিকাংশ আবাসনে এ কর্মকান্ড অনুপস্থিত রয়েছে। এসব বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরর উদাসীনতায় দরিদ্র এ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ শতভাগ বাস্তবায়ন হয় নি। সরকারের বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে। প্রত্যেকটি আবাসনে এখন দরকার জরুরি মেরামত। নইলে আগামি বর্ষায় এসব আবাসনের মানুষ বসবাস উপযোগিতা হারিয়ে ফেলার শঙ্কা রয়েছে।
×