ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে ফেরার অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০০:২১, ১৮ এপ্রিল ২০২১

ক্যাম্পাসে ফেরার অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা

রাফিয়া রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এই করোনা মহামারীর সময়ে শিক্ষার্থীদের জীবন এক প্রকার থমকে গেছে। করোনাকালীন সময়টা ব্যক্তিগতভাবে অনেক বেশি অপছন্দের। অপছন্দের হলেও আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে নিউ নর্মালে নিজেকে অভ্যস্ত করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা ও ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও পড়াশোনা নিয়ে দৈনন্দিন সময় কেটে যেত, সেটা খুব মিস করছি। পড়াশোনা ছাড়া শিক্ষাজীবন কতটা অসঙ্গতিপূর্ণ তা মনে হয় কারও উপলব্ধি করা বাকি নেই। দৈনন্দিন কাজকর্ম সময়ানুযায়ী হচ্ছে না, যার জন্য সারাক্ষণ গৃহবন্দী থাকাটা অনেকাংশেই দায়ী। দীর্ঘদিন বাড়িতে অবস্থান করার ফলে মানসিকভাবে সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছি। এছাড়া করোনায় শিক্ষা কার্যক্রম তথা অনলাইনে ক্লাস হওয়াতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকা, ধীরগতির মোবাইল নেটওয়ার্কের কারণে অনেকে ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে সমস্যায় পড়েছে। প্রতিদিনের আক্রান্তের খবর, মৃতের জন্য আহাজারির বিভিন্ন সংবাদ মন খারাপ করে দিচ্ছে। ফাহমিদা হায়দার তিথী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান-ব্যাপারটি বাস্তব হলেও একটা ভাইরাসের করাল গ্রাসে এতো এতো মানুষকে প্রাণ দিতে হবে, প্রাণপ্রিয় শিক্ষকদের অকালে চলে যেতে হবে, কাছের মানুষদের হারাতে হবে সেটা কখনোই কাম্য না। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থমকে দিচ্ছে সারা বিশ্বের চিরচেনা কার্যক্রম ব্যতিক্রম নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ। স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়েও অনিশ্চয়তা সকলের মাঝে। যদিও অনলাইন ক্লাস নেয়া হচ্ছে তবুও তার ফলাফল খুব বেশি ফলপ্রসূ নয়। ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যরে করোনাভাইরাস যে আমাদের শিক্ষাজীবন তথা আমাদের প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাস থেকে দূরীভূত করবে তা কে ভেবেছিল? প্রাণের ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে আড্ডা যেন আজ স্বপ্ন। কবে বলতে পারব কাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে, আড্ডা হবে, টিএসসিতে দলবেঁধে গান হবে, সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে গ্রুপস্টাডি হবে সব এখন আমাদের নাগালের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নের দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার আকুতি এখন শিক্ষার্থীদের মাঝে উঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরার আশা এখন দুরাশা মাত্র। সবার এখন একটাই চাওয়া ফিরতে চাই বিদ্যাপীঠে, হারাতে চাই বন্ধুদের মাঝে, ছুটে যেতে চাই শিক্ষকদের সান্নিধ্যে। শামীম সরদার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটা ক্ষুদ্র ভাইরাস জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। কতটা বদলে গেছে তা অনুভব করতে পারি অনায়াসে। নিয়মতান্ত্রিক ছুটে চলা যান্ত্রিক জীবন থমকে গিয়ে একপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। কেমন যেন ছন্নছাড়া জীবন। প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে চলা। অনলাইনে ক্লাস, সবার খোঁজখবর সবকিছু। জীবনের গতিধারা এভাবে বদলে যাবে কেউ কি জানত? জানত না। যখন ব্যস্ততায় ছুটে চলেছি, ভাবতাম যদি এমন হতো শুধু খাওয়া আর ঘুম, তাহলে কেমন হতো? কত ভালই না হতো। ভাবনাগুলো তাড়া করে ফিরত। কী অদ্ভুত, এখন তো সে সময় পার করছি, কিন্তু অস্বস্তি লাগছে। মনে হয় আগেই ভাল ছিলাম। ক্যাম্পাসে দুর্বার গতিতে ছুটে চলতাম, সেই ছুটে চলার মধ্যে একটা আনন্দ ছিল। সকালের সূর্যের কিরণ জানালার পর্দার মধ্যে তার দ্যুতি ছড়িয়ে বুঝিয়ে দিত সকাল হয়েছে উঠে যাও, তোমাকে ছুটতে হবে। ঘড়ির এ্যালার্ম জানান দিয়ে যেত সময়ের মাত্রা। এখন মনে হচ্ছে সেই সময়টা, সেই ছুটে চলাটাই ছিল সুন্দর। আসলে জীবনের বদল না হলে, সময়ের আপ-ডাউন না হলে আমরা বুঝতে পারি না, কোন জীবনটা সুন্দর, এখন না আগেরটা, যেমন শৈশবে মনে হতো কখন বড় হব, এখন মনে হয় শৈশব কত সুখের ছিল, কত সুন্দর ছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় রইলাম সুস্থ পৃথিবীর আশায়। সোহান প্রামাণিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক মহামারী করোনা থামিয়ে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। বিশেষ করে থমকে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনধারা। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস চললেও আশানুরূপ ফলাফল নেই। তাত্ত্বিক জ্ঞান কিছুটা মিটলেও, ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবেগ, অনুভূতি এবং ভালবাসার যায়গা। যেখানে প্রতিনিয়ত লালিত হয় স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন। প্রতিটি শিক্ষার্থীদের জীবনে সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত হলো ক্যাম্পাসের সোনালী দিনগুলো। বিশেষ করে ইউনিভার্সিটির নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা, গলাফাটিয়ে শান্ত চত্বরে গান গাওয়া, বন্ধু বড়ভাইদের জন্মদিন উদযাপন, কনসার্ট, সেমিনার কোনটিই যেন ভুলে থাকার মতো নয়। একটা মহামারী সবকিছুকে অতীত করে দিয়েছে আজ। আশা করি খুব শিগগিরই সুদিন ফিরে আসবে। আমরা সবাই ফিরে আসবো প্রাণের এই ক্যাম্পাসে।
×