ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটের টেনিসকন্যা প্রীতির প্রত্যাশা...

প্রকাশিত: ০০:০৪, ১৮ এপ্রিল ২০২১

বাগেরহাটের টেনিসকন্যা প্রীতির প্রত্যাশা...

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের মেয়ে আফরানা ইসলাম প্রীতি সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের টেনিসে দ্বৈতে গোল্ড ও এককে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। ভবিষ্যতে দেশসেরা টেনিস তারকা হতে চান। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজ্জ্বল করতে চান বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রীতির অভিভাবকরা মনে করেন, বাগেরহাটে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকার পরও বাংলাদেশ গেমসে একক ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক এবং মিক্সড ডাবলসে স্বর্ণপদক জিতেছেন প্রীতি। উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে উজ্জ্বল তারকা হয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারবেন বলে বিশ্বাসী তিনি। বাগেরহাট স্টেডিয়ামে বিকেএসপির খেলোয়াড় বাছাই হবে। বাছাইকৃত খেলোয়াড়রা পাবেন উন্নত প্রশিক্ষণ। ২০১০ সালে এমন খবর শুনে বাছাইয়ে অংশ নেয়ার জন্য বাগেরহাট স্টেডিয়ামে প্রীতিকে নিয়ে আসেন তার পরিবার। পছন্দের ব্যাডমিন্টনে না হলেও সুযোগ পান টেনিসে। প্রীতি তখন সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ব্যাডমিন্টনের ভালবাসা ছেড়ে তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে যায় টেনিস। বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের শুরু থেকেই ভাল করতে থাকেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেনিসে একক নারী ইভেন্টে নাম্বার ওয়ান ছিলেন প্রীতি। বাগেরহাট শহরের হরিণখানা এলাকার জাহিদুল ইসলাম ও শামীমা আক্তার আঁখি দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে বড় প্রীতি। ছোট বোন আফসানা ইসলাম রীতি এইচএসসি প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১১ সালে বিএসপিতে পড়ার সুযোগ হওয়ার পর টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে যাত্রা শুরু প্রীতির। খেলেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক আসরে। ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ) অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের জার্সিতে। সে আসরেও দেশের জন্য এনেছেন সম্মান। জাতীয় টেনিস টিমের এই কৃতী খেলোয়াড় ২০১৬ ও ২০১৭ দুই বছর বিকেএসপির সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। বিকেএসপি থেকে এইচএসসি শেষ করার পর ২০১৮ সালে চীনের গুয়ানজুতে টেনিস প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরির সুযোগ পান প্রীতি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করে বাংলাদেশ গেমসের টানে ফিরে আসেন দেশে। অংশগ্রহণ করেন গেমসে। শুধু খেলাধুলা নয়, নৃত্য ও সৌন্দর্যচর্চায়ও এগিয়ে টেনিসকন্যা প্রীতি। ২০১৭ সালে মমতাজ সুন্দরী তমা প্রতিযোগিতায় এক হাজার তিন শ’ প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে প্রথম রানার্সআপ হয়েছিলেন প্রীতি। প্রীতির ভাষায় ২০১১ সালে আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হই। ২০১৩ থেকে আমি ভাল করা শুরু করি। আন্ডার ফোরটিনে এশিয়ান টেনিস ফেডারেশনে (এটিএফ) সিঙ্গেলস ও ডাবলস দুটোতেই চ্যাম্পিয়ন হই। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত আমি বিকেএসপির শিক্ষার্থী ছিলাম। পরে চীনে ছিলাম ১৪ মাস। সেখানেও ভাল ছিলাম। বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণ জেতার আশায় প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সিঙ্গেলসে ব্রোঞ্জ এবং মিক্সড ডাবলসে স্বর্ণপদক পেয়েছি। আমার কোন কোচ ছিল না, প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি। প্রাক্টিসের পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল না। সরকার থেকে যদি সাপোর্ট পাই ভবিষ্যতে আরও ভাল করতে পারব। উপযুক্ত কোচের মাধ্যমে অনুশীলন ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলে দেশের জন্য হয়তো আরও বড় সম্মান বয়ে আনা সম্ভব হবে। প্রীতির বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ গেমসে মেয়ের সাফল্যে আমরা খুবই গর্বিত। তবে ব্যয়বহুল এই খেলায় মেয়ের অনুশীলন চালিয়ে রাখতে আমার খুবই কষ্ট হয়। প্রীতির সফলতা শুধু আমাদের নয়, সারাদেশের মানুষের। তার এই প্রতিভাকে টিকিয়ে রাখতে এবং দেশের জন্য আরও বড় সম্মান আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানাচ্ছি।’ প্রীতির মা শামীমা আক্তার আঁখি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া- তিনি আমাকে একটি পরিশ্রমী মেয়ে দিয়েছেন। আমি সবসময় মেয়ের খেলাধুলায় সহযোগিতা করতাম। বাংলাদেশ গেমসে সফল্য ধরে রেখে এসএ গেমসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বড় সফলতা নিয়ে আসুক আমার মেয়ে। বাগেরহাট টেনিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ক্রিকেটে বাগেরহাটের রাজ্জাক, রুবেলের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ফুটবলেও বাগেরহাটের কৃতী খেলোয়াড় রয়েছে। টেনিসে প্রীতি আমাদের গর্ব। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি। আমরা চাই সে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল খেলে বাগেরহাট ও দেশের সম্মান বৃদ্ধি করুক। তার চলার পথে বাগেরহাট টেনিস ক্লাব সবসময় পাশে থাকবে।’ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ.ন.ম ফয়জুল হক বলেন, করোনায় যখন চারিদিকে কষ্টের খবরে মন যখন ভারাক্রান্ত ঠিক তখন একটি আনন্দের খবর বাগেরহাটবাসী পেল। এই সাফল্যে বাগেরহাট টেনিস ক্লাব এবং বাগেরহাটবাসীর পক্ষ থেকে প্রীতিকে অভিনন্দন।
×