ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লকডাউনে সবার সহযোগিতা চায় পুলিশ

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১৮ এপ্রিল ২০২১

লকডাউনে সবার সহযোগিতা চায় পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা সংক্রমণ রোধে চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারী আদেশ বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশের হাতে হয়রানির কয়েকটি ঘটনা এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরের নজরে এসেছে। যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর বলছে, পুলিশ চেকপোস্টে অনেক সরকারী দফতরের কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী পরিচয়পত্র দেখাতে অনীহা প্রদর্শন করছেন। পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া পুলিশের দায়িত্বেরই অংশ। এটিকে হয়রানি মনে না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি অনেকে জরিমানা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে একতরফাভাবে পুলিশের ওপর দায় চাপিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। চলতি বিধিনিষেধের বাইরে সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় জরিমানা করেছেন পুলিশ সদস্যরা। জরিমানা আরোপকারী পুলিশ সদস্যের এতে ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই। করোনাকালে চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দায়িত্ব পালন, কিছু অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিএ্যান্ড পাব.রিলেশন্স) মোঃ সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়। এতে করোনা সংক্রমণ রোধে চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারী আদেশ বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে হয়রানি ও অসহযোগিতার কিছু অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য ও সংবাদ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নজরে এসেছে। করোনা অতিমারীতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ সর্বাত্মকভাবে দেশের মানুষের পাশে থেকেছে। অতিমারীর শুরুতে যখন প্রচণ্ড ভয় ও বিভীষিকা গ্রাস করেছে সারা পৃথিবীকে, সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে অনেকেই যখন দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য জীবনের পরোয়া না করে মানুষের পাশে থেকেছেন। করোনায় মৃতের জানাজা ও দাফন, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, চিকিৎসক ও জরুরী সেবাকর্মীদের যাতায়াতে সহায়তা, শিল্প উৎপাদন ও কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বিপণনে সহায়তা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের ভালবাসা পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি কর্তব্যরত অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ৯১ কর্মকর্তা ও সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। অবসরোত্তর ছুটি ও অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ও সদস্য এবং পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা বিবেচনায় নিলে মৃতের এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে। এছাড়া এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে করোনা মোকাবেলায় পৃথিবীর সফলতম দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ পুলিশও সরকারের নির্দেশনা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের উদ্যোগে পুলিশ সদর দফতর দ্রুত সময়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিওর) প্রণয়ন করেছে। চালু হয়েছে প্যান্ডেমিক পুলিশিং, যা সারাদেশে করোনা সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। ১৪ এপ্রিল ভোর হতে ২১ এপ্রিল মাঝরাত পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধের স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে সর্বক্ষণিক রাস্তায় রয়েছেন। পাশাপাশি, চলমান রয়েছে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত দায়িত্ব পালনও। বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। করোনাকালে মানুষের মুভমেন্ট ও কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। জনকল্যাণে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে আইজিপির নির্দেশে জনস্বার্থে ১৩ এপ্রিল চালু হয়েছে মুভমেন্ট পাস। মুভমেন্ট পাস গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয় এবং সরকার ঘোষিত জরুরী সেবায় নিয়োজিত কতিপয় পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য এই পাসের প্রয়োজন নেই, যা উদ্বোধনের দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। জরুরী কাজে যাতায়াতকারী ব্যক্তি পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রমের সুবিধার্থেই এই পাস সংগ্রহ করছেন। মুভমেন্ট পাস চালু হওয়ায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়েছে, যা করোনার ভয়ানক সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারী নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সব পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক মানুষ নিয়ম ভেঙে বাইরে বেরিয়েছেন। অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদে বাইরে বেরোনোর স্বপক্ষে উপযুক্ত কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক সম্মানিত নাগরিক মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে পরিচয়পত্র প্রদর্শনেও অনাকাক্সিক্ষতভাবে তীব্র অনীহা দেখাচ্ছেন। অনেকে ব্যর্থ হচ্ছেন পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে। সরকারী নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সরকারী দায়িত্বে নিয়োজিত কোন কোন ব্যক্তি নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন। জরুরী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্টিকারযুক্ত গাড়িতে ব্যক্তি বিশেষের জন্য উপহার সামগ্রী বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন সংবাদও গণমাধ্যমে এসেছে। গাড়িতে চিকিৎসক নেই, চিকিৎসকের গাড়ি বলে দাবি করা হয়েছে, গাড়ির কাগজপত্র বলছে গাড়ি অন্যের নামে। এছাড়া, জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় তর্কে জড়িয়েছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ অনাবশ্যক ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে একতরফাভাবে পুলিশের ওপর দায় চাপিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। অনেকেই জরিমানার অভিযোগ করেছেন। চলতি বিধিনিষেধের বাইরে সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় জরিমানা করেছেন পুলিশ সদস্যরা। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্য আইনের প্রয়োগ করেছেন মাত্র। জরিমানা আরোপকারী পুলিশ সদস্যের এতে ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই। পুলিশ চেকপোস্টে মিডিয়াকর্মীদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে কেউ কেউ পরিচয়পত্র দেখাতে অনীহা দেখিয়েছেন।
×