ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান এফএম সিদ্দিকী

খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ১৮ এপ্রিল ২০২১

খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা। শনিবার রাতে গুলশানের বাসায় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেখে আসার পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী একথা জানান। সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, ‘উনার অবস্থা সব কিছু মিলিয়ে স্ট্যাবল আছে, স্থিতিশীল আছে বলে মনে হচ্ছে সব দিক দিয়ে।’ কোন উন্নতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডাঃ সিদ্দিকী বলেন, ধরেন আমি যে ম্যাডামের সন্ধ্যায় একটু জ্বর আসার কথা বললাম, সেটা যদি আমরা আগের দিনের সঙ্গে তুলনা করি আজকে সারা দিন জ্বর আসেনি, সন্ধ্যার পরে এসেছে। তো ভাইরাস জ্বর আসতেই পারে। সেই হিসেবে একটা দিকে মনে হচ্ছে যে ইম্প্রুভমেন্ট আছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এই সময়গুলোকে শুধু একটা প্যারামিটারের ইম্প্রুভমেন্ট দিয়েই কিন্তু সব কিছু মূল্যায়ন করা যাবে না। খবর বিডিনিউজের। তিনি বলেন, আজকে সারাদিন জ্বর আসেনি, সন্ধ্যার পর কিছুটা জ্বর এসেছেÑ সেটা ১০০.২। আমরা যে নতুন এ্যান্টি ভাইরাল ওষুধটা শুরু করেছি সেটা আজকে তৃতীয় দিন হবে। অলরেডি উনি দুটো ডোজ পেয়েছেন। মনে হচ্ছে যে, সেটার রেসপন্স ভাল, পজিটিভ রেসপন্স পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। চিকিৎসক দলের প্রধান বলেন, আমরা উনার পালস, ব্লাড প্রেসার, রেসপিরেশন এগুলো চেক করেছি, ভাল আছে। স্যাচুরেশনটা সবসময়ই উনার ৯৭/৯৮। মনে রাখতে হবে যে, আজকে হলো উনার নাইন ডে। আমরা সেকেন্ড উইকের জটিল সময়টা পার করছি। এর মধ্যে যাতে কখনও কোন রকমের যদি জটিলতার লক্ষণ বা কোন বিপদ সঙ্কেত পাই, সেটা তাৎক্ষণিক সেই অবস্থায় আমরা ব্যবস্থা নেব। খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা জানতে চাইলে এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘মানসিকভাবে উনি খুবই স্ট্রং। উনি একটু আগেও আমাকে বলছিলেন, অনেক দেখে হয়ত টেলিভিশনে দেখে যে, বড় যারা সিনিয়র নেতাকর্মী উনারা মাস্ক পড়ে না, মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে উনারা কথা বলেন। এটা কেমন কথা। একটু আগেই উনি বলছিলেন। মাস্ক যদি পড়তে হয় সবার প্রপার পরা উচিত।’ রাত সাড়ে ৯টার পর চিকিৎসক টিমের সদস্যরা ‘ফিরোজায়’ প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন রাত সাড়ে ১০টায়। এফএম সিদ্দিকীর সঙ্গে আরও ছিলেন অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডাঃ মোহাম্মদ আল মামুন। বৃহস্পতিবার রাতে বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সিটিস্ক্যান (চেস্ট) করা হয়। গুলশানের বাসা থেকে তাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ নিরাপত্তায় এভারকেয়ারে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আবার গুলশানের বাসায় ফিরিয়ে আনা হয়। করোনায় মারা গেছেন বিএনপির ৪৪৫ নেতাকর্মী ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিএনপির ৪৪৫ নেতাকর্মী। এছাড়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ আরও অনেকেই হাসপাতাল এবং বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসহ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। তবে তাঁর জন্য হাসপাতালে কেবিনও বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৪৫ নেতাকর্মীর মৃত্যু ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ অসংখ্য নেতাকর্মী আক্রান্ত হওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিরাপদে থাকতে কেন্দ্র থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জনকণ্ঠকে জানান, দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারা মারা যাচ্ছেন তার হিসাব রাখা হচ্ছে। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিএনপির ৪৪৫ নেতাকর্মী মারা গেছেন। এছাড়া করোনাক্রান্ত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আরও অনেকেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেও আরও ক’জন সিনিয়র নেতা হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। আবার করোনাক্রান্ত ক’জন সিনিয়র নেতা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। সম্প্রতি দলের এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে বিএনপির ৪ শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া তিনি দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে ‘এলার্মিং’ বলে মন্তব্য করে সবাইকে সাবধানে এবং নিরাপদে থাকার আহ্বান জানান। বিএনপির দেয়া তথ্য অনুসারে দলের যেসব নেতাকর্মী করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব) রুহুল আলম চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হক, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসন, ওলামা দলের আহ্বায়ক কমিটি সদস্য মাওলানা কাসেমী, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খন্দকার আহাদ আহমেদ, রাজধানীর পল্লবী থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ আনিসুর রহমান, দলের নেতা টি এম গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট কবির চৌধুরী, জাতীয় ট্যাক্স বার সভাপতি এ্যাডভোকেট গফুর মজুমদার, শ্রমিক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মোল্লা, বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকার সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার, সাবেক এমপি এ টি এম আলমগীর, দলের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য খন্দকার আহাদ আহমেদ প্রমুখ। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদেরও করোনার উপসর্গ ছিল বলে কেউ কেউ অনানুষ্ঠানিকভাবে বললেও বিএনপি বা তার স্বজনদের পক্ষ থেকে এখনও কেউ বলেনি।
×