ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না ॥ এরা নাশকতার মামলায় অভিযুক্ত

বিএনপি-জামায়াত হেফাজতের ৪ শতাধিক নেতাকর্মী পলাতক

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ১৮ এপ্রিল ২০২১

বিএনপি-জামায়াত হেফাজতের ৪ শতাধিক নেতাকর্মী পলাতক

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে খুন, নাশকতা, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার মামলায় অভিযুক্ত ৪ শতাধিক আসামিকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। এসব আসামির বিএনপি-জামায়াত, হেফাজতের নেতা-কর্মী। পুলিশের খাতায় এসব আসামি পলাতক। পলাতক আসামিদের অনেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের উদ্দেশ্যে নাশকতা-নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য প্রকাশ্যে নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। মসজিদ, মাদ্রাসা বা ধর্মীয় সভা-সমাবেশেও তারা প্রকাশ্যে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুললেই পলাতক আসামিদের অনেকেই তাদের ভাষায় কথিত কাফের, মুরতাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়ে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সারাদেশে হেফাজতের তা-বের পর পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের মুখে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের যারা সহিংস সন্ত্রাসে অভিযুক্ত হয়ে মামলায় এজাহারভুক্ত হয়েছেন তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে পুলিশ সদর দফতরের দাবি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে সহিংস সন্ত্রাস করে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সামনের দিকে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা থাকলেও তাদের পেছনে ছিল বিএনপি-জামায়াতÑশিবিরের নেতা-কর্মীরা। প্রায় আট বছর আগে ২০১৩ সালে রাজধানী মতির্ঝিলের শাপলা চত্বরের জমায়েতের নামে সহিংস সন্ত্রাসের মামলার পলাতক আসামিরাও রয়েছে পলাতকের তালিকায়। শাপলা চত্বরের সহিংস সন্ত্রাসের মামলায় হফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মুফতি ফখরুল ইসলাম এবং মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপর থেকেই মূলত শাপলা চত্বরের মামলায় যেসব আসামি আছেন তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সারাদেশের জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশকে সম্প্রতি নাশকতা, খুন, সহিংস সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে পলাতক আসামিদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দফতর। জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া তালিকা অনুযায়ী ৪ শতাধিক আসামিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এমন তালিকা দেয়া হয়। পুলিশ যাদের খুঁজে পাচ্ছেন না তাদের অনেকেই গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত আবার হেফাজতের সহিংস তা-বে অংশ নেয়। প্রায় ৮ বছর আগে ২০১৩ সালের সহিংস তা-বের মামলায় যারা আসামি আছেন তাদের অনেকেই আবার ২০২১ সালের মামলায়ও অভিযুক্ত হয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন এমন অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ সদর দফতর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতের হরতাল, সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে। গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনে এতে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন সহ¯্রাধিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারী- বেসরকারী বহু স্থাপনা। এসব ঘটনার পর পরিস্থিতি অশান্ত ও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছে এসব ঘটনার সঙ্গে হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা জড়িত। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইজিপি, র‌্যাব মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উর্ধতন কর্মকর্তারা। ভার্চুয়াল বৈঠক ও ভিডিও বার্তায় সহিংস সন্ত্রাসের তা-বে অভিযুক্তদের কঠোর হস্তে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতের তা-বের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন জড়িত আছে এমন তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। সিসি টিভি, ভিডিও ফুটেজ, ফটো দেখে শনাক্ত করে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগে যেসব জঙ্গী সংগঠন সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য প্রয়াস চালিয়েছিল তারাই নতুনভাবে তারাই সম্পৃক্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সব বিষয়ই তারা খতিয়ে দেখছেন। যে যেখানে থাকুক, কাউকে ছাড় দেবেন না। হরকাতুল জিহাদ আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমসহ অন্য জঙ্গী সংগঠনগুলোর মূল নেতৃত্ব এসেছে জামায়াত-শিবির থেকে। জামায়াত ও হেফাজতের অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা আছে। তাদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কাজ করছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতে ইসলামের সহিংস তা-বের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেশব্যপী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যেও পলাতক আসামিদের অনেকেই প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানিসহ নানা ধরনের আপত্তিজনক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। মসজিদ বা ধর্মীয় সভা-সমাবেশেও তারা প্রকাশ্য উস্কানি দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চোখ রাখলেই কান পেতে শোনা যাচ্ছে পলাতক আসামিদের অনেকেই ওয়াজের বয়ানের সুরে জিহাদের ডাক দিচ্ছে। প্রচলিত রাষ্ট্র, সংবিধান, আইন কানুনের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়ে খেলাফত রাষ্ট্র গঠনের জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×