ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ ফ্লাইটের প্রথম দিনেই হোঁচট

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ১৮ এপ্রিল ২০২১

বিশেষ ফ্লাইটের প্রথম দিনেই হোঁচট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশেষ ফ্লাইটের প্রথম দিনেই হোঁচট খেলো প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরানোর উদ্যোগ। ১২টি এয়ারলাইন্সের ১৪টি ফ্লাইটের মধ্যে কমপক্ষে সাতটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সৌদি আরবের অনুমতি না পাওয়া ও যাত্রী না পাওয়ায় এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। এদিকে লকডাউনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিমানবন্দরে এসে অনেকে শুনছেন ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের পথে তারা আছেন বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে। শনিবার বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সের রিয়াদগামী ফ্লাইট (বিজি-৫০৩৯) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে এয়ারলাইন্সের নির্দেশনা অনুসারে ছয় ঘণ্টা আগে রাত ১টার মধ্যেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিলেন যাত্রীরাও। কিন্তু ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে প্রবাসীকর্মীরা বিক্ষোভ করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরবর্তীতে এসব যাত্রীর হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করে বিমান। শনিবার বিমানের পাঁচটি ফ্লাইট ছিল। এর মধ্যে চারটি বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের দাম্মামে একটি, রিয়াদে একটি, দুবাইয়ে দুটি। তবে রাতে সৌদি আরবে জেদ্দাগামী ফ্লাইট বাতিল করেনি বিমান। তারা সৌদি আরবে অনুমতির আশায় রয়েছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিমান জানিয়েছে- জেদ্দা ফ্লাইটের যাত্রীদের চেকইন শেষ। সৌদি থেকে এখনও খারাপ কোন সংবাদ (শ্লট বাতিল) আসেনি। এদিকে যাত্রীরা আটকা পড়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সৌদি আরবমুখী যাত্রীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দিনভর চলে এ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। তাদের অভিযোগ- বিমান সঠিক সময়ে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি নিতে পারেনি। অন্যদিকে বিমান বলছে- ঢাকায় বসে করার কিছু নেই। চেক ইন করার সময় হঠাৎ শেষ মুুহূর্তে সৌদি আরব থেকে খবর আসে বিমানের ফ্লাইটের শ্লট বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে ফ্লাইটের সব প্রস্তুতি থাকার পরও শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে হয়। প্রথমদিন শনিবার অন্তত ৭টি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বিমানের রিয়াদ, দাম্মাম, দুবাই ও সিঙ্গাপুর ফ্লাইট বাতিল করায় শত শত যাত্রী আটকা পড়ে বিমানবন্দরে। তবে সন্ধ্যা ৬টায় বিমানের জেদ্দা ফ্লাইটের প্রস্তুতি চলছিল। গতকাল শনিবার সকালে শুধু সালাম এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে দুবাই গেছে। রাতে ফ্লাই দুবাই, ইউএস বাংলা ও রিয়াদ ফ্লাইটেরও সিডিউল ছিল। এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সডক অবরোধ করেছেন সৌদি প্রবাসী কর্মীরা। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকেটের দাবিতে অবরোধ করেন তারা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলে। এতে আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। শনিবার এমন পরিস্থিতিতে শনিবার সকালেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ও পররাষ্ট্র সচিব ড. মাসুদ বিন মোমেনসহ অন্য কর্মকর্তারা। তারা বিমানবন্দরেরর ভিআইপি লাউঞ্জে বসে দীর্ঘ বৈঠক করেন। পরবর্তী ফ্লাইটের শ্লট যাতে ঠিক থাকে সেজন্য তৎপর থাকার সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠক শেষে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান ও পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএস তৌহিদ উল আহসান বিমানবন্দরের দোতলায় ৬নং গেটের সামনে জড়ো হওয়া ক্ষুব্ধ যাত্রীদের সামনে পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বিমান কিংবা ঢাকার কোন গাফিলতি নয়- সৌদি আরবের হঠাৎ শ্লট বাতিলের দরুন সব কিছু ভ-ুল হয়ে গেছে। জানা গেছে, সৌদি আরবের রিয়াদগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের শনিবার সকালের বিশেষ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বিমান জানিয়েছিল দেশটিতে ল্যান্ডিং পারমিশন (অবতরণের অনুমতি) না পাওয়া। এরপর বিমান জানালো তাদের আরও ৩টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। যাত্রী সঙ্কটকে কারণ দেখিয়ে ফ্লাইটগুলো বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনসটির কর্তৃপক্ষ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার বলেন, বিমানের একটি ফ্লাইট সৌদি আরবে ল্যান্ডিং পারমিশন না পাওয়ায় বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও যাত্রী সঙ্কটের কারণে দুবাইয়ের দুটি এবং সৌদির দাম্মামের একটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এসব ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা মাত্র ২০-২২ জন। আমরা বলেছিলাম ফ্লাইট চলাচল বন্ধের নির্দেশনার কারণে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীরা টিকেট পরিবর্তন করে এসব ফ্লাইটে যেতে পারবেন। তবে আমরা যাত্রী পাইনি। এছাড়া ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে। ইউএস বাংলা দুবাইগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। তবে সালাম এয়ার ঢাকায় এসে যাত্রী নিয়ে গেছে। ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে ৯টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দুবাই, সাতটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে মাসকাট, চারটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দোহা ও একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে পরিচালনা করা হবে। তবে প্রথম দিনে দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। মাত্র ২০ জনের মতো যাত্রী পাওয়া গেছে। এখানে শুধু যাত্রী থাকলেই হচ্ছে না, করোনা টেস্টের রিপোর্টও লাগবে। লকডাউনে অনেকে আসতেও পারছেন না। সব মিলিয়ে যাত্রী সঙ্কট আছে। বিমান সূত্র আরও জানায়, শনিবার সৌদি আরবে বিমানের আরও কিছু ফ্লাইট যাওয়ার কথা ছিলে এবং সেগুলোও বাতিল করা হয়েছে। অবতরণের অনুমতি না পাওয়া ও যাত্রী সঙ্কটের কারণে ৭টি বিশেষ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রবাসী কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সৌদি আরবের রিয়াদের উদ্দেশে শনিবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটটি (বিজি-৫০৩৯) উড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে সেটি বাতিল করা হয়। কারণ হিসেবে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, যে সময়ে তারা বিশেষ ফ্লাইটের জন্য বিমান যে নতুন সময়সূচী ঘোষণা করেছে সে সময়ে রিয়াদের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। ফলে ফ্লাইট বাতিল করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইটটি বাতিল হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এ ঘটনায় তারা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় বিমানের বিরুদ্ধে সেøাগান দিতেও শোনা গেছে তাদের। ওই ফ্লাইটে ৩১৪ জন যাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। তারা দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক। যাত্রীরা জানান, তারা সব নিয়ম মেনে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদসহ বিমানবন্দরে এসেছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত ২টার দিকে তাদের বলা হয় যে, ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার বিশেষ ফ্লাইট চালুর প্রথম দিনে মোট ১৪টি ফ্লাইট আসা ও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবতরণের অনুমতি না পাওয়া ও যাত্রী সঙ্কটের কারণে ৭টি বিশেষ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি যাওয়া ফ্লাইটের মধ্যে ৫টি বাতিল করা হয়। আর আসার ৪টি ফ্লাইটের মধ্যে দুটি বাতিল করা হয়। আসা-যাওয়া মিলিয়ে মোট ৭টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান জানান, ল্যান্ডিং পারমিশন পেতে বিলম্ব ও যাত্রী স্বল্পতায় ফ্লাইটগুলো বাতিল করা হয়েছে। আশা করি রবিবারের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। ফ্লাইটও বাড়বে। এদিকে টিকেটের জন্য শনিবার সকাল থেকেই কারওয়ান বাজারের সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয় ও বিমানের মতিঝিল কার্যালয়ে ভিড় করছেন প্রবাসীরা। মতিঝিলে প্রবাসীদের চাপের কারণে একপর্যায়ে টিকেট বিক্রি সাময়িক স্থগিত রাখে বিমান। মতিঝিলে অপেক্ষায় থাকা শরীয়তপুরের নাজির মোহাম্মদ নামে এক যাত্রী জানান, বিমানের ১৫ এপ্রিলের ফ্লাইট ছিল আমার। তবে ফ্লাইট বন্ধের কারণে যেতে পারিনি। আজ ফ্লাইট চলাচল শুরুর সংবাদ শুনে মতিঝিলে এলাম। এখানেও হঠাৎ টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দিল। এছাড়া সাউদিয়া এয়ারের অফিসের সামনে শত শত যাত্রী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে। কারওয়ান বাজারে সড়ক অবরোধ করেছেন সৌদি প্রবাসী কর্মীরা। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকেটের দাবিতে অবরোধ করেন তারা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলে। এতে আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সৌদি প্রবাসীদের অভিযোগ, তারা লকডাউনের আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। কিন্তু এখন লকডাউনের কারণে নির্ধারিত সময়ে ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন তারা। তারা সঠিক সময়ে ফ্লাইট ও টিকেটের নিশ্চয়তা চায়। এখানেই কজন দৈনিক জনকণ্ঠকে দেখে প্রশ্ন রাখেন ‘আমরা প্রবাসীরা কি সরকারের বোঝা হয়ে গেলাম। কেউ মূল্যায়ন করে না। আমরা তো বিদেশে কষ্ট করে টাকা-পয়সা রোজগার করে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোনের জন্য পাঠাই। লকডাউনের কারণে ফ্লাইটে সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বুঝিয়ে বলার মতো কেউ কি নাই? আগামীকালের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা, টিকেট কনফার্ম হলে করোনা টেস্ট করাব। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোন সমাধানই পেলাম না। কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলের প্রবেশদ্বারের বাইরে ফুটপাতে বসে আক্ষেপের সুরে এভাবেই কথা বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার খাগাতুয়া গ্রামের প্রবাসী কর্মী তাকবির হোসেনসহ ডজনখানেক যাত্রী। গত ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন চলাকালীন সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। পরে গত ১৫ এপ্রিল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে শনিবার থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে প্রায় ১০০টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
×