ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মুজিবনগর দিবসে অপশক্তিকে পরাস্ত করার শপথ

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ১৮ এপ্রিল ২০২১

মুজিবনগর দিবসে অপশক্তিকে পরাস্ত করার শপথ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা প্রতিরোধ এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করার দৃপ্ত শপথে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ৫০ বছর পূর্তি, সুবর্ণজয়ন্তী দিবস। প্রাণঘাতী করোনা মহামারীর সময়ে সীমিত কর্মসূচী নিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়েছে। তবে প্রতিটি অনুষ্ঠানেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা প্রতিরোধসহ ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙ্গে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় বক্তব্য করা হয়। দেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের ৫০ বছর পূর্তি অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক এ দিনটি স্মরণে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননেও জাতীয়ভাবে করোনার কারণে সীমিত পরিসরে নানা কর্মসূচী পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে সরকারী ছুটি ঘোষণার দাবি উঠেছে। ভোরে ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মেহেরপুরের সরকারীভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও চলমান লকডাউনের কারণে দিবসটি উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে সীমিত পরিসরে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়। মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ধানম-ির ৩২ নম্বরে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। সকালে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এবং পরে দলের পক্ষ থেকে পক্ষ থেকে ধানম-ির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়য়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেন, করোনা প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে পরাজিত করা হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করায় এবার স্বাধীন-সার্বভৌম প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরেও সরকারীভাবে সীমিত কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। এছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। পরে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মেহেরপুর থেকে আমদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে স্মৃতিসৌধের পাশে শেখ হাসিনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, হেফাজত, জামায়াত ও বিএনপিরা এরা এক ও অভীন্ন। হেফাজত হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির বি-টিম। এরা প্রত্যেকেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তিনি বলেন, যারা হেফাজতে আছে তারা সংবিধান মানতে চায় না, জাতীয় সঙ্গীত গাইতে চায় না, জাতীয় পতাকাকে সম্মান করতে চায় না। এই অপশক্তি বিএনপির নেতৃত্বে মাথা চাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের মাজা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে যেসব ধর্ম ব্যবসায়ী রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে, এই দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে চায়- তাদেরও আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষদাঁত উপড়ে ফেলা হবে। হানিফ আরও বলেন, যখন বাংলাদেশ চরম দরিদ্র থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে, নানা উন্নয়নে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সে সময়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে তারা বিভিন্ন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। তাঁর নেতৃত্বেই সকল প্রকার ধ্বংসাত্মক কর্মকা- কঠোরভাবে দমন করে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাব। এ সময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন এমপি, মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকসহ অন্য রাজনৈতিক নেতারা। এর আগে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর পর মুজিবনগরে নির্মিত শেখ হাসিনা মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মাহবুবউল আলম হানিফ এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সঙ্গে ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি, জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান এবং পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সংগঠন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। এদিকে সকাল ৬টা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের পাদদেশে সরকারীভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মনসুর আলম খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামসহ আনসার ভিডিপি ও পুলিশ সদস্যরা। পতাকা উত্তোলন শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত ॥ এদিকে মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। শনিবার ঢাকায় তাঁর দফতরে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকেট, ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন। এছাড়া ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড ও একটি বিশেষ সিলমোহর প্রকাশ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে এক বিবৃতিতে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের পথ বেয়ে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
×