ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা ভাইরাস ॥ মির্জাপুরের মৃৎশিল্পীরা তৈজসপত্র নিয়ে এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০২১

করোনা ভাইরাস ॥ মির্জাপুরের মৃৎশিল্পীরা তৈজসপত্র নিয়ে এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর ॥ মির্জাপুরের মৃৎশিল্পীরা করোনার থাবায় দু’চোখে এখন অন্ধকার দেখছেন। দীর্ঘদিন যাবত করোনার থাবা ও লকডাউনের কারণে মেলা পার্বন ও অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় লাখ লাখ টাকার তৈরীকৃত তৈজসপত্র রয়ে গেছে অবিকৃত। বিপুল অংকের টাকার মালামাল আটকা পড়ায় তারা দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন বলে শনিবার খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। ভবিষ্যতে এই প্রাচীন শিল্পটি টিকে থাকবে কি থাকবেনা তা নিয়েও এখন সন্দিহান বলে মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছে। জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার মৃৎশিল্পী রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় দুই হাজার পরিবার সরাসরি মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। নানা চড়াই উৎরাই করে বাপ দাদার পেশাটিকে আকড়ে রেখে বেঁচে আছেন তারা। বাকীরা অন্য পেশায় ছিটকে পড়েছেন। বর্তমান আধুনিক দুনিয়ায় মৃৎশিল্পীদের তৈরীকৃত তৈজসপত্র আগের মত গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার হচ্ছেনা। স্টিল সিলভার ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র দখল করে নিয়েছে মাটির তৈরী তৈজসপত্রের বাজার। তারপরও প্রাচীন শিল্প মাটির তৈরী তৈজসপত্রের প্রতি টান রয়েছে সমাজের এক শ্রেণীর সৌখিন মানুষের মধ্যে। তাদের তৈরীকৃত তৈজসপত্রের মধ্যে রয়েছে বাংলা ও নকশিকাটা ফুলের টব ব্যাংক কয়েলদানী ফুলদানী পিঠার পাতিল বিভিন্ন প্রকার পাখি পুতুল হাতি ঘোড়া মাছ ইত্যাদি। মৃৎশিল্পীরা তাদের তৈরী তৈজসপত্র সাধারণত মেলাসহ নানা অনুষ্ঠানে পসরা সাজিয়ে বিক্রী করে থাকেন। করোনার কারণে গত বছর সকল প্রকার মেলা ও অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে য়াওয়ায় মৃৎশিল্পীদের তৈরীকৃত তৈজসপত্র অবিকৃত থেকে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। কিন্তু এবছরও একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হয়েছে তাদের ভাগ্যে। তাদের ধারণা ছিল এবার হয়তো গতবারের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। এবার করোনা পরিস্থিতির অবনতি ও লকডাউনের কারণে সকল মেলা খেলা ও অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বছরের সবচেয়ে বড় বাজার বর্ষবরণ বা বৈশাখী মেলা ও চরকপূজা বন্ধ থাকায় মির্জাপুরের মৃৎশিল্পীদের তৈরী লাখ লাখ টাকার তৈজসপত্র অবিকৃত রয়ে গেছে। এতে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেক পরিবার বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে এ শিল্পে আর্থিক যোগান দিয়েছেন। উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের কচিয়াপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী সুশীল পাল বলেন, করোনার কারণে গত বছরের ক্ষতি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি নাই। এবছরও করোনার কারণে একই অবস্থা। বৈশাখী মেলাসহ সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার প্রায় তিন লাখ টাকার মাটির তৈরী তৈজসপত্র অবিকৃত রয়েছে। এতে দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন বলে তিনি জানান। বাইমহাটী গ্রামের মৃৎশিল্পী ভজন পাল ও সন্তোষ পাল বলেন, এভাবে চলতে থাকলে প্রাচীন এ শিল্পটি ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
×