ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ২২:১৭, ১৭ এপ্রিল ২০২১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র মাহে রমজানের ৪র্থ দিবস। রমজান মাস হলো কুরআন নাজিলের মাস। বস্তুত মাহে রমজানের মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হলো এ মাসে আল-কুরআন নাজিল হয়েছে। কুরআন নাজিলের কারণে মাসটি যেমন চির সম্মানিত তেমনি কুরআন তিলাওয়াত করার কারণে জীবনে কুরআন শরিফের মর্মার্থ অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া আখিরাতে মর্যাদাবান হয়। এ জন্য এই মাসের অন্যতম প্রধান ইবাদত এ পবিত্র গ্রন্থের তিলাওয়াত ও মর্ম অনুধাবন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম মানব জাতির জন্য মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ হিদায়াত বা দিক নির্দেশনামূলক গ্রন্থ। এটি গোটা মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক। এখানে শিক্ষা ও সভ্যতা অর্জনের সব উপাদান ও সূত্র নিহীত রয়েছে। এককালে এটিকে মর্যাদা দান, তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে মুসলিম জাতির সমৃদ্ধময় গৌরবদীপ্ত উত্থান ঘটেছে। এর আগে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্য যেসব আসমানি গ্রন্থ প্রেরণ করেছিলেন, তা কেবল সমসাময়িক ও স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য। সূরা আলে ইমরানের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে : ওহে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি কি তাদের দেখেন নি? যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহ্বান করা হয়েছিল, যাতে তাদের মধ্যে নানা বিষয়াবলী নিয়ে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অর্থাৎ পূর্ববর্তী জাতিগুলোর জন্য ছিল কিতাবের অংশ বিশেষ, যা দিয়ে তারা বিচার আচার সম্পন্ন করত। পক্ষান্তরে কোরআনুল কারীমের ভূমিকা ও প্রভাব সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে বলা হয়েছে : ‘এ সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। (এটি) পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য...।’ উদ্ধৃত অংশে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কুরআন শরিফ তাদেরই সঠিক পথ দেখাবে, যারা সঠিক পথ পাওয়ার জন্য আগ্রহী ও উদগ্রীব থাকে, হিদায়াতের মন-মানসিকতা নিয়ে এ পবিত্র গ্রন্থ তিলাওয়াত করে। যারা পুতঃপবিত্র মন প্রাণ নিয়ে এটি অধ্যয়ন ও তিলাওয়াত করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তারা অবশ্য সৌভাগ্যময় জীবনের অধিকারী হবে। এ কুরআনকে বলা হয়েছে শিফাউন লিন-নাস মানব জাতির জন্য নিরাময় বস্তু। আল্লাহ তায়ালা বলেন : এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনাধারা, আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশাবলী। (৩:১৩৮)। কুরআনুল কারীম মানুষকে ন্যায় বিচারে উৎসাহিত করে, হালাল-হারাম চেনার পথ দেখায়, ঝঞ্ছা-বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি দূরীভূত করে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপহার দেয়। সূরা আল ইমরানে আল্লাহপাক এক দীর্ঘ আয়াতে মুসলমানদের তাঁর করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন : আর তোমরা সকলে আল্লাহর রুজ্জুকে সুদৃঢ় হাতে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছে। তোমরা অবস্থান করেছিলে এক অগ্নিকু-ের পাড়ে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদের মুক্তি দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হতে পার। (আয়াত-১০৩)। পবিত্র কুরআন সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রাচীনতম উৎস-সূত্র। এখানে শুধু নামাজ কালামের কথা বলা হয়নি, সৃষ্টি রহস্য ও বিশ্ব ইতিহাসের বহু তত্ত্ব ও তথ্যে সমৃদ্ধ এ মহাগ্রন্থ। এই তো মাত্র সাড়ে চার দশক। আগে (১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুলাই) মানুষ প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। এ ঐতিহাসিক দিনে নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স, এডুইন অলড্রিন সৌভাগ্যবান মানব সন্তানগণ চাঁদের দেশে মানব জাতির পদচিহ্ন আঁকেন। যে সময়, যে যুগে তারা এ মহা বিজয়ের সুসংবাদ বয়ে এনেছেন তখনও মানুষের এক বিরাট অংশ তা সহজে মেনে নিতে পারেনি। বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। তাদের বিশ্বাস হলো, মানুষের পক্ষে আকাশ জয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু আজ ধীরে ধীরে তাদের সে বিশ্বাস ভাঙছে, তারা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর কারিশমা বলে ক্রমেই অনুধাবন করতে ও প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হচ্ছে। অথচ এর দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম ও তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ঘোষণা করেছে। বিজ্ঞানময় পবিত্র কুরআনুল হাকীম বিজ্ঞানপূর্ণ ও বিজ্ঞান। নির্ভর বহু আয়াত বর্ণনা করেছে। আকাশ পথে বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ ও চন্দ্রপৃষ্ঠের অবস্থা ও অবস্থান ইনডিকেট করেছে প্রাজ্ঞ ভাষায়। এর জন্য বিস্তারিত দেখুন, সূরা ইয়াসিন ও সূরা নামের তাফসির। আমাদের প্রিয় নবী হযরত রাসূলে মাকবুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বয়ং পবিত্র মিরাজ গমন করে মানব জাতির আকাশ জয়ের বিস্ময়কর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেন। আসুন, মাহে রমজানের ইবাদতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কুরআনের শিক্ষা ও বরকতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠি।
×