ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার বিরুপ অর্থনৈতিক প্রভাব কৃষি শ্রমের বাজারে পড়েছে

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১৫ এপ্রিল ২০২১

করোনার বিরুপ অর্থনৈতিক প্রভাব কৃষি শ্রমের বাজারে পড়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ লালমনিরহাটের মিশনমোড়ে কৃষি শ্রমিকের হাট। প্রতিদিন ভোরে শ্রম এসে কাজের অপেক্ষা করে বসে থেকে শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছে। করোনার বিরুপ প্রতিক্রিয়া কৃষি শ্রমের বাজারে কৃষি শ্রমে ধস নেমেছে। বাজারে কৃষি শ্রমকের সরবরাহ বেড়েছে কিন্তু কর্মক্ষেত্র করোনাকালীণ সময়ে লক ডাউনের কারণে সংকোচিত হয়ে গেছে। কোথাও কাজ নেই। দ্বিতীয় দিনে শহরের মিশন মোড়স্থ ষ্টেশনরোড়ের শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকের বাজারে খ্যাত শ্রমহাটে প্রতিদিন শ্রমিক ভোররাতে এসে বসে থাকে। সকাল ৮-৯ টা পর্যন্ত কাজের সন্ধানে বসে গিরির জন্য অপেক্ষা করে। অপেক্ষা শেষে শ্রম বিকাতে না পেরে বিষন্ন মন নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। এই দিনদিও স্ত্রী, সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে থাকতে হবে। প্রায় দেড় যুগ পর আবারও লালমনিরহাটে মঙ্গার পদধ্বনি শুনা যাচ্ছে। এবারের এই মঙ্গা নামের শ্রমের সংকট প্রকৃতির। করোনা পরিস্থিতিতে দেশে দ্বিতীয় দফা লক ডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে। এরই মধ্যে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া। বৈশাখ মাসের দ্বিতীয দিন চলছে। এখনো আউশ রোপা ধান পাকতে প্রায় ১৫ দিন সময় লাগবে। এই মুহুর্তে ধান কাটা মাড়াই ছাড়া গ্রামে কৃষি ভিত্তিক শ্রমের বাজারে তেমন কোন কাজ নেই। করোনা পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে চলছে লক ডাউন। বেসরকারি প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্ধ। এমন কি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সকল ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্ধ। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা দৈনিক মজুরির ভিক্তিতে কাজ করে থাকে তারা কর্ম সংস্থান হারিয়েছে। দেশের প্রতিটি শহর ছেড়ে মানুষ তৃণমূলে তার গ্রামে ফিরে আসছে। কারণ একটাই কর্মসংস্থান শহরে তার নেই। বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে গ্রামে। এতে করে গ্রামে কৃষি ভিত্তিক শ্রমের বাজারে মৌসুমি শ্রমিক ব্যাপক হারের বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরে অনেকে রিক্সা, বাস, ট্রাক, পিকাপ, অটোরিক্সা, রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে লক ডাউনের কারণে এখন শহরে লোক সমাগম কম। রিক্সা, অটোরিক্সা চলাচল হ্্রাস পেয়েছে। পরিবহন শ্রমিকগণ বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছে। তারাও জীবন বাঁচাতে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে কৃষি ও গৃহস্থালী কাজ বেছে নিয়েছে। ফলে কৃষিতে ও কৃষি শ্রমের বাজারে মূদ্রা স্ফীতি হ্রাস পাওয়ার মত শ্রমও স্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। মূদ্রা স্ফীতিতে যেমন, মুদ্রার অবমূল্যানয় ঘটে। শ্রমবাজারেও তেমনি শ্রমের জোগান বৃদ্ধিতে শ্রম মূল্যেও অবমূল্যান ঘটে। এখানে এখন কাজ সংকট তবে শ্রমিক কয়েক গুন বেশি। শিশনমোড় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রঞ্জু মিয়া জানান, তার ঔষধের ব্যবসা এই মিশন মোড়ে। করোনাকালীণ সময়ে তার বেছা বিক্রি কয়েক গুন কমে গেছে। তিনি বলেন, মিশনমোড় কৃষি শ্রমিকের কমংসংস্থানের হাট প্রতিদিন ভোর ৬ টা হতে সকাল সাড়ে ৮ টা ৯টা পর্যন্ত বসে। এখানে দুরদুরান্ত হতে বাইসাইকেল, পায়ে হেঁটে কৃষিক শ্রমিক সহ নানা কায়িক শ্রমিক কাজ খুঁজতে আসে। তারা ভোরে এসে এখানে বন্ধ দোকানের বারান্ধায় বসে শ্রম বিক্রির করতে অপেক্ষা করে। সেসব কৃষক, গিরি, মহাজনের শ্রমিকের প্রয়োজন হয় তারা এসে এখান হতে তার চাহিদা মত শ্রমিক নিয়ে যায়। করোনার আগে এ্খানের শ্রমক হাটে কৃষি শ্রমিক বা অন্য কোন শ্রমিক এলে কাড়াকাড়ি বেজে যেত। কারণ তখন শ্রমিক সরবরাহ ছিল কম। কিন্তু শ্রমের কাজ করানোর মালিকে সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। তাই শ্রমিক মালিক দরকষাকষি করে দাম বা মজুরি নিধারণ করার সুযোগ পেত। এতে ¤্রমিকগণ বেশি লাভবান হয়ে থাকত। কিন্তু এখন উল্টো চিত্র এখন শ্রমিক সরবরাহ বহু গুনে বেশি । সেই তুলনায় শ্রমিকর বাজার সংকোচিত । ফলে শ্রমের মজুরি হ্্রাস পেয়েছে। শ্রমিক মালিক দরকষাকষি প্রক্রিয়াটি এখন নেই। এখন উল্টো মালিক পক্ষ এসে উল্টো প্রস্তাব দিচ্ছে ৩০০ টাকা দিব। তোমরা ১০ জন শ্রমিক কে কে কাজে আসবা। তখনি হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শ্রমিকগণ। বরং মালিক পড়েছে বেকায়দায়। ১০ জন শ্রমিকের জায়গায় কাজ করতে চায় ১৫/২০ জন শ্রমিক। এখন হতে শ্রমিক বাছাই করাটাও সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকার রমজান মাস উপলক্ষ্যে গ্রামে তৃণমূলের দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। খাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনরা মন্ত্রালয়ের অধিনে ৪০দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চলছে। কর্মজীবি মানুষের এমন কর্মসংকট শুধু আমাদের দেশে নয়। সারা পৃথিবীকে এক সংকটময় পরিস্থিতিতে ফেলেছে। বাংলাদেশের চেয়ে এই সংকট উন্নত দেশ গুলোতে বেশি। বিশেষ করে শিল্প নির্ভর অর্থনীতির দেশ গুলো এই বপর্য সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির ব্যয় হ্রাসে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সফটাওয়ার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, আমাজনের মত প্রতিষ্ঠান শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তা ছাটাই করেছে।
×