ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাওসার রহমান

কঠোর লকডাউন কি মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারবে?

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৬ এপ্রিল ২০২১

কঠোর লকডাউন কি মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারবে?

শেষ পর্যন্ত কঠোর লকডাউনেই যেতে হলো বাংলাদেশকে। ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ হঠাৎ করে এতটাই বেড়ে গেছে যে, এছাড়া সরকারের সামনে আর কোন উপায়ও ছিল না। ৫ এপ্রিল থেকে নয়দিনের শিথিল লকডাউন করে দেখা গেল, ফল হয়েছে উল্টো। একদিকে যেমন দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে, তেমনি রেকর্ড হয়েছে মৃত্যুরও। এখন প্রশ্ন হলো, এই কঠোর লকডাউন কি মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারবে? ভেবেছিলাম শীতের মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশকে আঘাত করবে। এজন্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণীও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শীতকালটা আমরা বরং বেশ ভালভাবেই কাটিয়েছি। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন আমাদের শীতকালের স্থায়িত্বটা কমে গেছে, তা সত্ত্বেও শীতের শেষদিকে এসে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫ নেমে এসেছিল। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও ২ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। ফলে আমরা আশান্বিত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ বুঝি করোনার ঝুঁকিমুক্ত দেশে চলে আসবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। যখন সরকার বিশেষজ্ঞরা দেশকে করোনার ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণার সুপারিশ করতে যাবেন অমনি দেশ ইউটার্ন নিতে শুরু করে। সেইসঙ্গে শুরু হয় আক্রান্ত ও মৃত্যুর পাল্টাপাল্টি রেকর্ড। গত ১১ এপ্রিল করোনার বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের ৪০০ দিন পার হয়েছে। পাঠক আসুন, এক নজরে এই ৪০০ দিনের করোনা পরিস্থিতিটা একটু জেনে নেই। ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো নোভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয় দেশে। এরপর ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গুনে গুনে পেরিয়ে গেছে ৪০০ দিন। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঢাকা থেকে ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। শুরুর কিছুদিন সংক্রমণের হার ছিল বেশ কম। পরে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ২০২০ সালের জুন-জুলাই নাগাদ সংক্রমণ শনাক্তের হার ও পরিমাণ সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। ওই সময় করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল বেশি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু কমতে থাকে। তবে মার্চ মাস থেকেই আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। এপ্রিলে দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড দেখা যায়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টা হলো, গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই ভাংছে করোনায় নতুন সংক্রমণ শনাক্ত ও করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর রেকর্ড। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের সপ্তাহগুলোকে। সবশেষ দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ৫৭তম সপ্তাহে এসে নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে সংক্রমণ ও মৃত্যু সবই বেড়েছে আগের যে কোন সপ্তাহের তুলনায়। এর আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৫৬তম সপ্তাহেও করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ ও করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ছাড়িয়েছিল সব রেকর্ড। ৫৭তম সপ্তাহে এসে দেখা যাচ্ছে, আগের সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে আরও এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। একই সময়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। একই সময়ের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষাও বেড়েছে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। শেষ সপ্তাহের সংক্রমণ ও মৃত্যুও আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আর ১২ এপ্রিল রেকর্ড ৮৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আগের দিন ১১ এপ্রিলই ৭৮ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল। একদিন পরেই তা ভেঙ্গে গেল। এই রেকর্ড আমরা আর চাই না। আর কাউকেই আমরা হারাতে চাই না। এ মিছিল থামাতেই হবে। প্রশ্ন হলো, হঠাৎ করে কেন এত আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তার উত্তর একটাইÑ মানুষের মধ্যে বিন্দুমাত্র সচেতনতা নেই। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু সচেতন ব্যক্তি মাস্ক পরে বাইরে এলেও ব্যাপকভাবে গণসচেতনতা বলে যা বোঝায় তার বিন্দুমাত্র নেই। গত ৫ এপ্রিল থেকে নামকাওয়াস্তে লকডাউন শুরু হলেও এখনও বেশিরভাগ মানুষকেই মাস্ক না পরে কিংবা থুঁতনির নিচে নামিয়ে ঘোরাফিরা করতে দেখা যাচ্ছে। তাহলে এভাবে ছড়াবে না কেন করোনাভাইরাস! মূলত করোনাভাইরাসটি হলো গরমের ভাইরাস। গরমকালে এটি প্রাণ পায় এবং দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এর উৎপত্তি নিয়ে এখনও বিতর্ক আছে। বিজ্ঞানীরা এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি এর উৎপত্তির উৎস নিয়ে। তবে যেহেতু এটি গরমের সময় বেশি ছড়ায়, সেহেতু বিজ্ঞানীদের এই কথাটিই সত্যি বলে ধরে নেয়া যায়, সেটি হলো সাস ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসটিও সাইবেরিয়ার বরফের নিচে দীর্ঘ যুগ চাপা পড়ে ছিল। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাসের মতো এই ভাইরাসটিও গরমে বরফ গলে সাইবেরিয়ার বরফের নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে। পরবর্তীতে তা বাদুড় বা অন্য কোন জন্তুর মাধ্যমে চীনে ছড়িয়েছে। যদিও পরে দেখা গেছে, চীনের আগে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ফ্রান্সে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের দেশে হঠাৎ এমন মরণ কামড় দিল কেন করোনাভাইরাস। গত বছরও (২০২০) গরমে এত বিস্তার লাভ করেনি এই ভাইরাসটি। সেই উত্তরটিই এখন করোনা আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। এ ধরনটির আবির্ভাবে বাংলাদেশে ভাইরাস বিস্তারের ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত হওয়ার হার যে খুব দ্রুত বেড়েছে সেজন্যই ধারণা করা হচ্ছে যে, সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হয়ত হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে যারা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সঙ্গে আগে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বেশ কিছু পার্থক্য বা এক্ষেত্রে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেককে আক্রান্ত হওয়ার ৬ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন দিতে হচ্ছে এবং তাও আবার সেটি তুলনামূলক দীর্ঘ সময় ধরে। প্রায় ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। আবার এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা একটু খারাপ হলে তা দ্রুতই খারাপতর হয়ে যাচ্ছে। আগে আইসিইউতে কোন রোগী এলে বেশিরভাগকেই ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রিকভারি করে কেবিনে পাঠানো যেত। কিন্তু এবার সেটি হচ্ছে না। এবার অনেক দীর্ঘ সময় লাগছে এবং আইসিইউ থেকে অনেকে আবার ফিরতেও পারছেন না। মূলত অনেকেরই ফুসফুস দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে এবং রক্ত জমাট বাঁধছে। মূলত বাংলাদেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসের দুটো নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে এবং এদের মধ্যে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট শুরুতে শনাক্ত হলেও এখন সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দক্ষিণ আফিকার প্রজাতিটির। নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে নানা নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, এবারে আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের উপসর্গ আরও প্রকট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অনেকের প্রচ- মাথা ব্যথা হচ্ছে। এবার নিউরোসাইক্রিয়াটিক সমস্যা, যেমন কারও কারও মধ্যে পাগলামি আচরণের প্রবণতা কিংবা ব্রেইন ইনফেকশনের মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে এমন অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে যাদের রক্তের অণুচক্রিকার সঙ্গে হিমোগ্লোবিনও কমে যাচ্ছে, যদিও তাদের আগে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার রোগ বা রেকর্ড নেই। অথচ গত বছর প্রথম দফার সংক্রমণের সময় অনেকের রক্তের অণুচক্রিকা কমলেও তখন হিমোগ্লোবিনের সমস্যা রোগীদের মধ্যে দেখা যায়নি। আর এসব নতুন ধরনের সমস্যার কারণে অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়ে অনেককে খুব তাড়াতাড়ি আইসিইউতে নিতে হচ্ছে। এবার চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও ব্যাপক পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। আগে আইসোলেশনে থাকার সময় চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে উঠত বেশিরভাগ রোগী। কিন্তু এখন ফুসফুস খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অক্সিজেন লেভেলও আগের তুলনায় দ্রুত কমে যাচ্ছে। ফলে তাদের রিকভারি করতে বেশি সময় লাগছে। আগে যাদের অক্সিজেন দরকার হতো তাদের হয়ত দুই লিটার দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৫-১০-১৫-২০ লিটার বা প্রয়োজনে হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন দেয়া হতো। অবস্থার অবনতি হলে কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা দেয়ার পরে আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হতো। কিন্তু এখন এত সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না। আগে হয়ত একজন থেকে একজন সংক্রমণই বেশি হতো। কিন্তু এবারে আক্রান্তরা তাদের কাছে থাকা ৩ থেকে ৪ জনকে একসঙ্গে সংক্রমিত করছেন। সবমিলিয়ে এবারের ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুতই রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে। ফলে অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায়ও করোনাভাইরাস আবার জেঁকে বসেছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ এপ্রিল এই অঞ্চলে দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মূলত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে করোনা রোগী লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের রেকর্ড দৈনিক সংক্রমণ ও টিকা সঙ্কট এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের মোট করোনাভাইরাস রোগীর ১১ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়। আর মোট মৃত্যুর প্রায় ছয় শতাংশ এই সাতটি দেশে ঘটেছে। বিশ্বের ৭৫৯ কোটি লোকের ২৩ শতাংশ এই অঞ্চলে বসবাস করে। দক্ষিণ এশিয়ার মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর ৮৪ শতাংশের বেশি ঘটনা ঘটেছে ভারতে। মোট আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর তৃতীয় স্থানে আছে দেশটি। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল দেশটি ১০ এপ্রিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত ও ৭৯৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। এখন এই অবস্থা উত্তরণের উপায় কি? উপায় দুটো- এক. সচেতন হওয়া এবং দুই. ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা। কিন্তু এ দুটো ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে বেশি উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। প্রথম দিকে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর দেখা গেল ভ্যাকসিন নিতেও মানুষের মধ্যে অনীহা। অথচ অনেক দেশের অনেক আগেই বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিন চলে আসে। সরকার এক্ষেত্রে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়। এখনও বিশ্বের অনেক দেশ ভ্যাকসিন পায়নি। অথচ বাংলাদেশের মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েও তার সদ্ব্যবহার করছে না। ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশে পর্যবেক্ষণমূলকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন ঘোষণা করার পরে এদিন ২৬ জন ভ্যাকসিন নেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। এখন ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রথম ডোজও দেয়া চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন সংক্রমণ খুব একটা কমাবে না, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনবে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করায় মানুষের মাঝে মৃত্যুঝুঁকিও কমে আসবে। তবে ভ্যাকসিন নেয়ার পরও সতর্কতায় কোন ঘাটতি দেখা দিলে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে কয়েকগুণ। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ ভ্যাকসিন গ্রহণের পাশাপাশি সতর্কও থাকতে হবে। আসলে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। এই সচেতনতার অর্থ হলো, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা। যদি আমরা সংক্রমণের উর্ধমুখী ধারা ঠেকাতে চাই, থামাতে চাই মৃত্যুর মিছিল তাহলে এসব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরকে টিকা নেয়ার পরও এসব ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। আর যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। আর বের হতে হলে অবশ্যই এসব প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হবে যতদিন না বিশ্ব এই কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে মুক্তি পায়। লকডাউন সত্ত্বেও এসব ব্যবস্থা যেমন প্রতিটি নাগরিককে নিজস্ব তাগিদে মেনে চলতে হবে, তেমনি সরকারের পক্ষ থেকেও মানানোর কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি গোষ্ঠী আছে যারা সহজে মানতে চায় না। উল্টো তারা সরকারকে গালাগালি করে। এই গ্রুপ কারা তাদের স্বরূপ স্পষ্ট। মূলত তাদের কারণেই করোনাভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে যা করার লকডাউন চলার মধ্যেই করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। লেখক : সাংবাদিক
×