ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মন খারাপের মেলা’

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১৬ এপ্রিল ২০২১

‘মন খারাপের মেলা’

১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বইমেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার তা-বে তা ভেঙ্গে গেছে দুদিন আগেই। প্রকাশকদের ভাষায় এবারের বইমেলাটি তাদের জন্য মন খারাপের মেলা হয়ে থাকবে। এই বিপর্যয়ের জন্য তারা করোনার পাশাপাশি দায়ী করেছেন চৈত্র মাসের সর্বনাশ তথা খরা এবং বাংলা একাডেমির বার বার সময়সূচীর পরিবর্তনকে। প্রকাশক গোষ্ঠীর হিসাবে এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে ৪১৩টি প্রকাশনা সংস্থা, নতুন বই বেরিয়েছে ২ হাজার ৬৪০টি, বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা এবং বই বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৯২৮ টাকা। ফলে সমূহ বিপর্যয় তথা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রকাশকদের। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবার তাদের বই বিক্রির কোন হিসাব না দিলেও গত বছর তাদের হিসাবে বই বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা এবং নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল ৪ হাজার ৯১৯টি। এতে দেখা যায় এবার সমূহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রকাশকদের। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা বিশেষ বাজেটে ১শ’ কোটি টাকার বই কিনে নেয়াসহ সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সরকারের প্রতি। তাহলে তারা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন আগামী বছরের বইমেলার জন্য। করোনার থাবা পড়েছে বইমেলায়ও। আপামর বাঙালীর প্রাণপ্রিয় অমর একুশে বইমেলা। এবার যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে। সকলের সুরক্ষার নিমিত্ত সবার মুখে মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে বইমেলা হতে পারেনি ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিতে। পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে তা পিছিয়ে আনা হয় স্বাধীনতার মাস মার্চে। প্রকাশক গোষ্ঠীসহ দেশের সৃজনশীল লেখকদের কথা চিন্তা করে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা শুরু হয় ১৮ মার্চ। তবে কিছুদিন না যেতেই ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বইমেলা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আক্রমণে। বলাবাহুল্য, কোন জিনিস বিশেষ করে মেলা জমে উঠতে সময় লাগে। সে হিসেবে এত কম সময়ে বইমেলা জমে ওঠার কথাও নয়। স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বইমেলার সময়সূচীও জনসমাগমের জন্য তেমন অনুকূল ছিল না। বেচা-বিক্রিও শুরু হয়নি তেমন। ফলে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ প্রকাশক গোষ্ঠী এবং সৃজনশীল লেখক সমাজও। যে বিপুল পুঁজি ও মেধা তারা ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন বইমেলা ও পুস্তক প্রকাশে, সে সবের সিকি ভাগও পূরণ হয়নি। ফলে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও সরকার তথা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তারা। করোনা সংক্রমণের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছে, অনুরূপ পুস্তক প্রকাশক ও লেখকদের ক্ষেত্রেও দেয়া যায় কিনা তা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে অবশ্যই। অমর একুশে ও ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে যে স্বতঃস্ফূর্ত বইমেলার সূচনা এবং বিবর্তন, তা এক কথায় প্রশংসনীয় নিঃসন্দেহে। বাঙালীর গৌরবও বটে। কেননা, একে ঘিরে গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ-শিশুসাহিত্যসহ সৃজনশীল লেখনী শিল্প ও প্রকাশনা শিল্পের সুবিশাল এক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে দেশে, যার অর্থনৈতিক ব্যাপ্তি ও পরিধি কম নয়। এখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অবশ্য কর্তব্য হবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বইমেলার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সকলের জন্য গ্রহণীয় ও সহনীয় করে ক্ষতিপূরণ প্রদান।
×