ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪৯ শতাংশ নারী লকডাউন পরিস্থিতিতে নিরাপদ নয় ॥ সিপিডি

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ১৫ এপ্রিল ২০২১

৪৯ শতাংশ নারী লকডাউন পরিস্থিতিতে নিরাপদ নয় ॥ সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে ৪৯ শতাংশ নারীই নিজেকে নিরাপদ মনে করেন না। কোভিডকালীন ও তার পরবর্তী সময়ে ঘরে এবং বাইরে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘সরকারের আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা : নারীরা কতটা উপকৃত হয়েছে’ শীর্ষক আয়োজিত ওয়েবিনারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন তার প্রবন্ধে এসব তথ্য উপস্থাপনা করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. রওনক জাহান ওয়েবিনার সংলাপটি পরিচালনা করেন। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক লীলা রশিদ, পারসোনার সিইও কানিজ আলমাস ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম প্রমুখ। ফাহমিদা খাতুন তার উপস্থাপনায় বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ৪৯ শতাংশ নারী ও বালিকা বলছে লকডাউন পরিস্থিতিতে তারা নিজেকে নিরাপদ মনে করেন না। কারণ কোভিড পরবর্তী সময়ে ধর্ষণ ও অভ্যন্তরীণ নারী নির্যাতন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও বালিকা পর্যায়ে ভায়োলেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় ফাহমিদা বলেন, ‘করোনা মহামারি গরীব এবং নিম্ন আয়ের নারীদের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নারীরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’ তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ নারী লকডাউনকে অনিরাপদ মনে করেন। বাল্যবিবাহ বেড়েছে ৫৮ শতাংশ এবং অকালে গর্ভধারণ বেড়েছে ৩০ শতাংশ। গ্রামের মাত্র ২ শতাংশ শিশু অনলাইনে শিক্ষা প্রোগ্রাম দেখেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী কাজ হারিয়েছেন। এ সময় গার্মেন্টসের ১৯ শতাংশ নারীকর্মী চাকরি হারিয়েছেন।’ ফাহমিদা বলেন, ‘সরকার ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এই প্রণোদনা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট না।’ ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী এবং ১৯ শতাংশ গার্মেন্টসের ১৯ শতাংশ নারীকর্মীর কাজ হারানোর তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আপনাদের প্রতিবেদনের তথ্য আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী ও ১৯ শতাংশ গার্মেন্টসকর্মী কাজ হারিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর ৫-৬ মাস চলে গেছে। আমার ধারণা এ সময়ে অনেক রিকভারি হয়েছে। এই পরিমাণ নারী কাজ হারিয়েছে এটা প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে আমি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সঙ্গে বসব।’ পরিকল্পনামন্ত্রী প্রশ্ন তোলার পর অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, ‘বেশিরভাগ গৃহকর্মী চাকরি হারানোর কারণ বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে লকডাউনে আছে এবং অনেকে ভয় পাচ্ছেন এদের (গৃহকর্মী) কারণে কোভিড বাড়িতে ঢুকে যাবে। গৃহকর্মীদের প্রটেকশন আমরা দিতে পারছি না। কারণ তারা পাঁচটা বাড়িতে কাজ করছে। এরা সব থেকে প্রান্তিক। এদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের একটা দায়িত্ব আছে।’ কানিজ আলমাস বলেন, আমাদেরকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেটা যেন টিকে থাকে, সেজন্য সরকারের সহযোগিতা চাই। অনেক পার্লার বন্ধ হয়ে গেছে। পুনরায় চালু করার জন্য ঋণ নিচ্ছেন না অনেক পার্লার মালিক। কারণ তারা ভয় পাচ্ছেন, ব্যবসা চালু হবে কি না। অন্যদিকে ঋণ নিতে যে বিভিন্ন কাগজপত্রের নামে ব্যাংকগুলো থেকে চাহিদাপত্র থাকে, তা কাটিয়ে অনেকেই ঋণ নিতে আগ্রহী নন।
×